রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৭ পূর্বাহ্ন

কোরবানির মাসাইল

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০২৩
  • ৬৮ বার

কোনো কাজ করার আগে সে কাজ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। অন্যথায় কাজটি যথাযথ হয় না। সে হিসেবে কোরবানি করার আগে কোরবানি দাতাদের কোরবানির মাসাইল সম্পর্কে জানা আবশ্যক।
কোরবানির সময় : জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোরবানির সময়। তবে প্রথম দিন করা সর্বোত্তম, তারপর দ্বিতীয় দিন, তারপর তৃতীয় দিন। ঈদের নামাজের পর কোরবানি করতে হবে, ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করা বৈধ নয়। (কুদুরি, পৃষ্ঠা : ৩৪৩-৩৪৪) কোরবানির তিন দিনের মধ্যে যে দু’টি রাত রয়েছে সেই দুই রাত্রেও কোরবানি করা জায়েজ, তবে রাত্রে করা মাকরুহ। (আলমগীরী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৯৬)

অন্যের দ্বারা পশু জবাই করানো : নিজ হাতে কোরবানির পশু জবাই করা মুস্তাহাব। নিজে না পারলে অন্যের দ্বারা করানো যাবে। তবে নিজে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম। নারীরা সম্ভব হলে পর্দা করে দাঁড়াবে। (শরহে তানভির, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৩৪)
জবাইকালে নিয়ত করা : নিয়ত বলা হয় অন্তরের ঐকান্তিক ইচ্ছাকে। ফলে কোরবানি পশু জবাই করার সময় মুখে নিয়ত করা এবং দোয়া পড়া আবশ্যক নয়। অন্তরে কোরবানির খেয়াল করে মুখে শুধু ‘বিসমিল্লাহি ওয়াআল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করলে কোরবানি সহিহ হবে। অবশ্য জানা থাকলে কোরবানির পশু জবাইকালীন নির্দিষ্ট দোয়া পড়া উত্তম। (শামী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ২৭২)

যেসব পশু দ্বারা কোরবানি বৈধ : ছয় ধরনের গৃহপালিত পশু দিয়ে কোরবানি জায়েজ। উট, গরু ও মহিষ এগুলোতে সাত শরিক পর্যন্ত জায়েজ। আর ভেড়া, ছাগল, দুম্বা এগুলোতে এক শরিকের বেশি জায়েজ নয়। উট, গরু ও মহিষে একাধিক অংশীদার হলে, সবার অংশ সমান হতে হবে। কমবেশি হলে কোরবানি শুদ্ধ হবে না। (হেদায়া, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪২২, আলমগীরী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬৯৫)

পশুর বয়স : উট পাঁচ বছর, গরু ও মহিষ দুই বছরের হওয়া আবশ্যক। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা এক বছর হওয়া আবশ্যক। এর কম হলে কোরবানি শুদ্ধ হবে না। তবে ছয় মাসের দুম্বা যদি মোটা তাজা হয় এবং এক বছরের দুম্বার মতো দেখায়, তাহলে কোরবানি শুদ্ধ হবে। (দুররুল মুখতার, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৩২)

যেসব পশু দিয়ে কোরবানি করা বৈধ নয় : কোরবানির জন্য পশু ত্রুটিম্ক্তু, দেখতে সুন্দর ও আকর্ষণীয় হওয়া আবশ্যক। যে পশুর দু’টি চোখ অন্ধ বা একটি চোখ পূর্ণ অন্ধ বা একটি চোখের এক-তৃতীয়াংশ বা আরো বেশি দৃষ্টি নষ্ট হয়ে গেছে, সে পশু দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হবে না। তদ্রুপ যে পশুর একটি কানের বা লেজের এক-তৃতীয়াংশ বা তদপেক্ষা বেশি কেটে গেছে সে পশু দিয়ে কোরবানি হবে না। যে পশু এমন খোঁড়া যে, মাত্র তিন পায়ের উপর ভর দিয়ে চলে, একটি পা মাটিতে লাগাতেই পারে না অথবা মাটিতে লাগাতে পারে কিন্তু তার ওপর ভর দিতে পারে না, এরূপ পশু দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হবে না। খোঁড়া হলেও যদি পায়ের ওপর ভর দিয়ে চলতে পারে। তবে কোরবানি বৈধ হবে। পশু যদি এমন কৃশ ও শুষ্ক হয় যে, তার হাড়ের মগজও শুকিয়ে গেছে, তবে তা দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হবে না। যে পশুর একটি দাঁতও নেই, তা দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হবে না। যদি যতগুলো দাঁত পড়ে গেছে তা অপেক্ষা অধিক সংখ্যক দাঁত বাকি থাকে, তাহলে কোরবানি শুদ্ধ হবে। যে পশুর জন্ম থেকে কান নেই, তা দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হবে না। কান আছে কিন্তু ছোট, তা দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হবে। যে পশুর শিং উঠেনি বা উঠার পর ভেঙে গেছে, তা দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হবে। তবে মূল থেকে ভেঙে গেলে তা দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ নয়। অনুরূপ যে পশুর গায়ে বা কাঁধে দাদ বা খুজলি হয়েছে তা কোরবানি করা জায়েজ। তবে যদি খুজলির কারণে পশু বেশি কৃশ হয়ে যায়, তবে কোরবানি জায়েজ হবে না। (আলমগীরী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪১৮, দুররুল মুখতার, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৩৬, হেদায়া, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৩২)

গোশত দান করার বিধান : কোরবানির গোশত নিজে খাওয়া, পরিবারবর্গকে খাওয়ানো, আত্মীয়-স্বজনকে হাদিয়া দেয়া এবং গরিব-মিসকিনদের দান করা সবই জায়েজ। এমনকি অমুসলিমদেরও দেয়া জায়েজ। গরিব-মিসকিনকে এক-তৃতীয়াংশ দান করা মুস্তাহাব। পরিবারের সদস্য বেশি থাকলে না দিলেও অসুবিধা নেই। (হেদায়া, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৩৫)

চামড়ার বিধান : কোরবানির পশুর চামড়া গরিব-মিসকিনকে দান করে দিতে হবে। যদি বিক্রি করা হয়, তবে ওই টাকা গরিব-মিসকিনকে দান করে দিতে হবে। ইচ্ছা করলে নিজেও চামড়া শুকিয়ে ব্যবহার করতে পারো। চামড়ার টাকা মসজিদ-মাদরাসায় দেয়া বৈধ নয়। (দুররুল মুখতার, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৩৪)

কোরবানির সাথে আকিকা করা : কোরবানির সাথে আকিকা করা একটি মতভেদপূর্ণ মাসয়ালা। হানাফি মাজহাবের অধিকাংশ ইমামের মতে, কোরবানির সাথে আকিকা করা জায়েজ। কিছু হানাফি ইমাম এবং অন্যান্য মাজহাবের ইমামদের মতে, কোরবানি ও আকিকা যেহেতু ভিন্ন দু’টি ইবাদত সেহেতু দু’টি ইবাদতকে একত্র করা বৈধ নয়। এ ব্যাপারে বিজ্ঞ ফিকহবিদদের অভিমত হলো- আকিকা করার বিধান জন্মের সপ্তম দিন। সুতরাং যারা সামর্থ্যবান তাদের কোরবানির সাথে আকিকা সংযোগ না করাই উত্তম।
কোরবানিদাতাদের কর্তব্য : যারা কোরবানি করবেন, তাদের জিলহজ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে কোরবানি করার আগ পর্যন্ত চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। রাসূল সা: বলেছেন, ‘যখন জিলহজ মাস শুরু হবে এবং যারা কোরবানি করার আশা পোষণ করে, তারা যেন নিজের চুল বা শরীরের কোনো অংশ স্পর্শ না করে তথা না কাটে। অপর বর্ণনা মতে, নিজের চুল ও নখ না কাটে।’ (মুসলিম)

লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী

 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com