রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন

আরো কঠিন হচ্ছে মার্কিন সিটিজেনশিপ পরীক্ষা

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩
  • ৪৬ বার

মার্কিন নাগরিকত্ব পরীক্ষা হালনাগাদ করা হচ্ছে। তবে এতে ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতার ওপর জোর দেওয়ায় অনেক অভিবাসী ও অধিকারকর্মী উদ্বেগে পড়েছে। নাগরিকত্ব লাভের ক্ষেত্রে ‘ন্যাচারালাইজেশন টেস্ট’ হলো অন্যতম শেষ ধাপ। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ২০২০ সালে পরীক্ষা বেশ কঠিন করে ফেলেছিল। ফলে এই পরীক্ষায় পাস করতে একদিকে যেমন সময় বেশি লাগছিল, অন্যদিক পাস করাও জটিল হয়ে পড়েছিল।

তবে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর এক নির্বাহী আদেশে নাগরিকত্ব লাভের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করেন। এর ফলে নাগরিকত্ব পরীক্ষা আগের জায়গায় ফিরে যায়। এর আগে এই পরীক্ষা হালনাগাদ করা হয়েছিল ২০০৮ সালে।

ডিসেম্বরে মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানায়, পরীক্ষাটি ১৫ বছর পর হালনাগাদ করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। নতুন সংস্করনটি আগামী বছরের শেষ দিকে কার্যকর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস প্রস্তাব করেছে যে ইংরেজি দক্ষতা মূল্যায়ন করার জন্য নতুন পরীক্ষায় কথা বলার অংশ যোগ করা হবে। পরীক্ষায় একজন কর্মকর্তা দৈনন্দিন কাজাকর্ম, আবহাওয়া বা খাবারের মতো সাধারণ দৃশ্যাবলীর ছবি দেখিয়ে আবেদনকারীকে ছবিগুলো বর্ণনা করতে বলবে।

বর্তমান পরীক্ষায় এক অফিসার ন্যাচারালাইজেশন সাক্ষাতকারের সময় আবেদনকারীকে তার ব্যক্তিগত বিষয়াদি নিয়ে প্রশ্ন করে তার কথা বলার দক্ষতা যাচাই করে। অথচ এসব প্রশ্নের জবাব ওই ব্যক্তি তার ন্যাচারালাইজেশন কাগজপত্র আগেই দিয়ে দিয়েছিল।

দশ বছর আগে ইথিওপিয়া থেকে অভিবাসন করা হেভেন মেহরেতা বলেন, ‘ছবি দেখে সেগুলোর ব্যাখ্যা করা আমার কাছে অনেক কঠিন কাজ মনে হয়।’ উল্লেখ্য, তিনি মে মাসে ন্যাচারালাইজেশন পরীক্ষায় পাস করে জুনে মিনেসোটায় মার্কিন নাগরিক হয়েছিলেন।

হেভেন মেহরেতা, ৩২, বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে তিনি ইংরেজি শিখেছিলেন। তার কাছে উচ্চারণ খুবই কঠিন মনে হয়েছে। তিনি ব্যক্তিগত প্রশ্নের চেয়ে ফটো দেখে ভাষা পরীক্ষার অংশটি যোগ করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এটি তার মতো অনেককে পরীক্ষা পাস কঠিন করে তুলবে।

পাঁচ বছর আগে ইসরাইল থেকে অভিবাসন করা শাই আভনি গত বছর মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তিনি বলেন, নতুন কথা বলা অংশটি আবেদনকারীর ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।

তিনি বলেন, ফেডারেল সরকারের কারো সামনে বসে কথা বলাটা ভীতিকর ব্যাপার। অনেক লোকই কোনো না কোনো কারণে এতে ভয় পায়। আবার এটি যদি মাতৃভাষা না হয়, তবে পরিস্থিতি আরো কঠিন হতে পারে। আপনি হয়তো নার্ভাস হয়ে পড়বেন, যথাযথ শব্দটি বলতে পারবেন না। আর এই পরীক্ষার মাধ্যমেই নাগরিকত্ব লাভ করা যায়। ফলে এখানে হারাবার মতো অনেক কিছু আছে।’

প্রস্তাবিত পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস ও সরকার সম্পর্কে মাল্টিপল-চয়েজের একটি অংশ থাকছে। বর্তমান সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে মৌখিকভাবে এসব প্রশ্নের জবাব গ্রহণ করা হয়।

নতুন ব্যবস্থায় অনেক বেশি জ্ঞান থাকতে হবে জানিয়ে ম্যাসাচুটসের নাগরিকত্ব নিয়ে গ্রন্থলেখক বিল ব্লিস এক ব্লগ পোস্টে জানিয়েছেন যে এই পরীক্ষা হবে অনেক বেশি কঠিন।

বর্তমান ব্যবস্থায় আবেদনকারীর কাছে অফিসার জানতে চান ১৯০০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি যুদ্ধের নাম। আবেদনকারী পাঁচটি জবাবের যেকোনো একটি (প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, কোরিয়ান যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, উপসাগরীয় যুদ্ধ) একটি বললেই চলে। কিন্তু প্রস্তাবিত মাল্টিপল-চয়েজ ফরমেটে আবেদনকারীকে নিচের বিকল্পগুলো থেকে সঠিন প্রশ্নের জবাব সংগ্রহ করতে হবে :

ক. গৃহযুদ্ধ

খ. মেক্সিকো-আমেরিকান যুদ্ধ

গ. কোরিয়ান যুদ্ধ

ঘ. স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধ।

সঠিক জবাব দিতে আবেদনকারীকে অবশ্যই ১৯০০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের করা পাঁচটি যুদ্ধের সবই জানতে হবে। ব্লিস বলেন, এর ফলে আবেদনকারীর ভাষাগত দক্ষতা ও পরীক্ষা-গ্রহণ দক্ষতা ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে।

বর্তমানে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য ১০টি সিভিকস প্রশ্নের ছয়টির জবাব দিতে হয়। এই ১০টি প্রশ্ন নির্বাচন করা হয় ১০০ সিভিকস প্রশ্ন থেকে। কোন প্রশ্নটি করা হবে, তা আবেদনকারীকে বলা হয় না। তবে তাকে পরীক্ষার আগেই ১০০টি প্রশ্ন পড়তে দেওয়া হয়। জনস লাইব্রেরিস ইংলিশের নাগরিকত্ব সমন্বয়কারী লিন ওয়েনট্রাব মনে করেন, যারা ইংরেজি বুঝতে সমস্যায় রয়েছেন, তাদের জন্য নতুন ব্যবস্থায় নাগরিকত্ব লাভের সিভিকস অংশটি কঠিন করে তুলবে।

তিনি বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত অনেক দেশ থেকে অনেক লোক আসে। তাদের অনেকে এমনকি স্কুলে যাওয়ার সুযোগও পায় না।

তবে ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস ডিসেম্বরে ঘোষণা করেছিল যে প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো ‘পরীক্ষা পরিকল্পনায় বর্তমানের সর্বোত্তম রীতি প্রতিফলিত হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, এটি নাগরিকত্ব পরীক্ষাকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরতে সহায়তা করবে।

মার্কিন ফেডারেল আইন অনুযায়ী, নাগরিকত্ব লাভের জন্য আবেদনকারীকে সাধারণভাবে কথা বলতে, লিখতে ও পড়তে জানতে হবে। তাছাড়া তার মার্কিন ইতিহাস ও সরকার সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা ২০২৩ সালে দেশব্যাপী প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামতও নেওয়া হবে। সবকিছু সম্পন্ন হওয়ার পরই আগামী বছর তা চালু হতে পারে।

বর্তমানে জার্মানি, কানাডা ও ব্রিটেনসহ পাশ্চাত্যের অনেক দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পরীক্ষা অনেক সহজ। এমনটাই মনে করেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক সারা গুডম্যান।

বর্তমান হিসাব অনুযায়ী, ৯৬ ভাগ আবেদনকারী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তবে তার এই মন্তব্যের সাথে সবাই একমত নন।

যুক্তরাষ্ট্রে ২০২২ অর্থবছরে ১০ লাখের বেশি লোক নাগরিকত্ব পেয়েছে। ১৯০৭ সালের পর এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com