দেশের ১৯টি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান রফতনি মূল্য কম দেখিয়ে গত ৩ বছরে ১৪৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বিদেশের পাচার করার তথ্য জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
এসব প্রতিষ্ঠান মোট ৪২৪টি পণ্য চালানে ৫৭ লাখ ৫৬ হাজার ৭৬২ কেজি পণ্য রফতানির বিপরীতে ৩৪ লাখ ১৩ হাজার ১১৬ মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানির কথা বললেও রফতানিকৃত পণ্যের প্রকৃত মূল্য ১ কোটি ৭২ লাখ ৭০ হাজার ২৮৬ মার্কিন ডলার বলে শুল্ক গোয়েন্দার দাবি। ফলে রফতানি মূল্য কম দেখিয়ে ওই পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের রফতানি তথ্য সঠিক থাকলেও অতিনিম্ন মূল্য দেখিয়ে বিদেশে অর্থপাচারের দায়ে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পৃথক ভাবে মুদ্রা পাচার আইনে মামলা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, টোটাল কোয়ালিটি কোম্পানি ১৯টি চালানে ২ লাখ ৫৬ হাজার ২০০ কেজি পণ্য রফতানি করে এবং ঘোষিত মূল্য ১ লাখ ১৫ হাজার ৭০০ মার্কিন ডলার। কিন্তু রফতানিকৃত পণ্যের প্রকৃত মূল্য ৭ লাখ ৬৮ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার বলে সূত্রের দাবি। তাবাসসুম ইন্টারন্যাশনাল ছয়টি চালানে ৪০ হাজার ৬১৭ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ৬৬ হাজার ৬০১ মার্কিন ডলার, কিন্তু রফতানিকৃত পণ্যের প্রকৃত মূল্য ১ লাখ ২১ হাজার ৮৫১ মার্কিন ডলার বলে সূত্র জানায়। সেফ ফ্যাশন অ্যান্ড ট্রেডিং ৫০টি পণ্য চালানে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৫৩৮ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৭৪৩ মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত রফতানি মূল্য ২০ লাখ ১৭ হাজার ৬১৪ মার্কিন ডলার বলে সূত্র জানায়। জোবায়ের ট্রেডিং ১১টি পণ্য চালানে ১ লাখ ৫০ হাজার ১০০ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ৬৮ হাজার ৬৪১ মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত মূল্য ৪ লাখ ৫০ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার বলে সূত্র জানায়। মেঘনা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ১৩টি পণ্য চালানে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৯০০ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার ২৫৮ মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত মূল্য ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭০০ মার্কিন ডলার বলে সূত্র জানায়। এমআই ট্রেডিং ৯টি পণ্য চালানে ১ লাখ ২৫ হাজার ২০০ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ৫৯ হাজার ৬৯৭ মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত মূল্য ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার। মারওয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ১৪টি পণ্য চালানে ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৪৯ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ৩ লাখ ২২ হাজার ৩২৫ মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত মূল্য ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৬৪৭ মার্কিন ডলার। কে মুড টেক্সটাইল ৩১টি পণ্য চালানে ৩ লাখ ৯১ হাজার ২৮৮ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ২ লাখ ২৫ হাজার ৭৭০ মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত মূল্য ১১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬৪ মার্কিন ডলার। নাজাফ ট্রেডিং ১৯টি পণ্য চালানে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ১ লাখ ৯ হাজার ৫০১ মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত মূল্য ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। তাহসিন ইন্টারন্যাশনাল ১৮টি পণ্য চালানে ২ লাখ ৪৬ হাজার ২০০ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৯ মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত মূল্য ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার। আল ফাহাদ ট্রেড লাইন্স চারটি পণ্য চালানে ৫২ হাজার ৯৫০ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ৩৫ হাজার ৮২৫ মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত মূল্য ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫০ মার্কিন ডলার। এয়ার বাংলা ২৫টি পণ্য চালানে ১ লাখ ৯২ হাজার ৩৮২ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ৯৭ হাজার ৬৬৩ মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত মূল্য ৫ লাখ ৭৭ হাজার ১৪৬ মার্কিন ডলার। জিএস খান অ্যাপারেলস ২২টি পণ্য চালানে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৫২ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ১ লাখ ৮০ হাজার ২৯১ মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত মূল্য ৮ লাখ ৯১ হাজার ১৫৬ মার্কিন ডলার। ইমাজিন ফ্যাশন লি: আটটি পণ্য চালানে ১ লাখ ৭ হাজার ২০০ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ৪৮ হাজার মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত মূল্য ৩ লাখ ২১ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার। মাস্টার ইন্টারন্যাশনাল সাতটি পণ্য চালানে ৮০ হাজার ৩৫ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ৫৫ হাজার মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত মূল্য ২ লাখ ৪০ হাজার ১০৫ মার্কিন ডলার। ফ্যাশন কমফোর্ট (বিডি) লি: ২৩টি পণ্য চালানে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৯০০ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮৫ মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত মূল্য ৯ লাখ ৪১ হাজার ৭০০ মার্কিন ডলার। এ আইফা এন্টারপ্রাইজ ৩৯টি পণ্য চালানে ১১ লাখ ৩৪ হাজার ২১৭ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ৫ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৪ মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত মূল্য ৩৪ লাখ ২ হাজার ৬৫১ মার্কিন ডলার। ফাস্ট এক্সপোর্টস (বিডি) লি: ৪৬টি পণ্য চালানে ৫ লাখ ৮২ হাজার ৩৩০ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ২ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৫ মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত মূল্য ১৭ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯০ মার্কিন ডলার। জেডইই ফ্যাশন ৬০টি পণ্য চালানে ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৬০৪ কেজি পণ্য রফতানি করে যার ঘোষিত মূল্য ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৮ মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত মূল্য ১৭ লাখ ৮ হাজার ৮১২ মার্কিন ডলার।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মো: বশির আহমেদ রোববার (২৩ জুলাই) নয়া দিগন্তকে জানিয়েছে, সবগুলো প্রতিষ্ঠানেরই রফতানি গন্তব্য দুবাই। এর মধ্যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান ঢাকার এবং ২টি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের বলে তিনি জানান।
প্রাথমিকভাবে ১৪৭ কোটি টাকা দুবাইতে পাচার হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অধিকতর তদন্ত করে মানিলন্ডারিং আইনে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আলাদা মামলা হবে বলে তিনি জানান।