মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৭ অপরাহ্ন

অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার সাধারণ মানুষ দিশেহারা

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩
  • ৪৩ বার

মূল্যস্ফীতি দেশের সাধারণ মানুষের জীবনচাকা টেনে ধরছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। রাত পোহালেই পণ্যের দাম বাড়ছে। জুলাই মাসে সরকারি হিসাবে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে এখন পৌনে ১০ শতাংশে। আগের দামে কেনা পণ্যও দোকানিরা বাড়তি দামে বিক্রি করছে। পেঁয়াজ, মুরগির গোশত, মাছ, কাঁচা তরকারি কোনোটার দামই দুদিন যেতে না যেতেই বৃদ্ধির মুখে। সপ্তাহজুড়ে দেশে ডিমের বাজারে চলছে অস্থিরতা। প্রতি হালি ডিমের দাম পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের একটি ডিম খেতে গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকা। ডিম খাওয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলছে মধ্যবিত্ত। ইলিশের ভরা মৌসুম, তবুও বাজারে ইলিশ যেন সোনার হরিণ। দাম নাগালের বাইরে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর পাড়া-মহল্লাসহ বিভিন্ন বাজারে এসব চিত্র দেখা গেছে।

বিভিন্ন বাজারের তথ্য দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে দেশী পেঁয়াজের দামও কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে এখন ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এ ছাড়া ক্রসপেঁয়াজ এটাও বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এটার দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে খুচরা পর্যায়ে। ডিম তো রাত পার হলেই ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়ছে। আকারভেদে খুচরা পর্যায়ে মুরগির ডিম লালটা ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা এমনকি কোথাও ১৮০ টাকায় ডজন বা ১২টা বিক্রি হচ্ছে। আর সাদা ডিম ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর সাথে প্রতি কেজি সবজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না। আর টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। যে পেঁপে আমদানি হয় না, দেশেই আনাচে কানাচে উৎপাদন হচ্ছে সেটাও এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে মিরপুরের পিরেরবাগ বাজারে দোকানদার আবদুর রহমান বলছেন, বৃষ্টির কারণেই দাম বাড়ছে। বৃষ্টিটা কমে গেলে দামও পড়ে যাবে। তবে অন্য দোকানদারের ভিন্ন যুক্তি। তিনি বলছেন, মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। ফলে উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে। এ কারণে ডিমের দাম বাড়তি।

আর দীর্ঘদিন ধরে মাছের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে। ইলিশের ভরা মৌসুমেও কমছে না মাছের দাম। বাজারে ৬০০ বা ৭০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২ শ’ টাকায়। ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি বা তারও বেশি ওজনের ইলিশের কেজি ১৬ শ’ থেকে ১৮ শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সাথে বাজারে রুই-কাতলার কেজি সাড়ে চার শ’ থেকে সাড়ে পাঁচ শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর তেলাপিয়া বড় আকারের ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, পাঙ্গাশের কেজি দুই শ’ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে দুই শ’ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সোনালি বা কক মুরগির কেজি ২৯০ থেকে সাড়ে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে, আদার কেজি ৩৬০ টাকা, রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। প্রতি কেজি ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, পেঁপের কেজি ৫০ টাকা। পটোল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, বেগুনের কেজি ৮০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা পিস, কচুরমুখী ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০ টাকা।

এদিকে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) ডিমের এই দাম বৃদ্ধির জন্য করপোরেট সিন্ডিকেটকে দায়ী করছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে ডিমের দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে সংগঠনটি। গত বৃহস্পতিবার সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিম ও মুরগির দাম বেড়ে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ ছোট ছোট খামার বন্ধ হয়ে যাওয়া। এ কারণে সরবরাহ-ঘাটতি তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। আর এ খাতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায় সরকারি তদারকি না থাকায় পোলট্রি শিল্পে তাদের আধিপত্য বেড়েছে, যার খেসারত দিচ্ছে জনগণ।

এদিকে, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সিন্ডিকেট সবসময় সুযোগ খোঁজে বাজারে কারসাজি করে মূল্যবৃদ্ধির জন্য। আমরাও সদা সক্রিয় এই সব অবৈধ কারবারিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে। তিনি বলেন, ডিম, ব্রয়লার মুরগি ও পেঁয়াজের মতো পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারসাজির বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। ভোজ্যতেল, চিনি ও গমের মতো অনেক পণ্য ৯০ ভাগই আমদানিনির্ভর। যা মাত্র কয়েকটি কোম্পানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এ পণ্যগুলো নিয়ে যাতে কোনো বাজার কারসাজি না ঘটে তার জন্য আমরা সর্বদা সজাগ থাকি। তবে কোনো কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়াও সমাধান নয়। তিনি বলেন, তাতে সাপ্লাই ও ডিমান্ডে ব্যাহত হলে ভোক্তাদের দুর্ভোগ আরো বাড়বে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com