রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৯ অপরাহ্ন

বিভক্ত ফোবানা সম্মেলনগুলোর পর্দা উঠছে আজ

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৭১ বার

ফেডারেশন অব বাংলাদেশি এসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা ফোবানায় এবারও ঐক্য অধরা থেকেই গেলো। নতুন প্রজন্ম এবং প্রবাসী নানা পেশা ও শ্রেণীর বাংলাদেশিরা এবার অন্তত ফোবানা সম্মেলন ঐক্যবদ্ধভাবে হবে এমন প্রত্যাশা করলেও সে আশায় গুড়ে বালি হয়েছে। ফোবানা সৃষ্টির ইতিহাসে এবারেই সবচেয়ে বেশি সম্মেলন হচ্ছে। এর মধ্যে তিনটি সম্মেলন হচ্ছে কানাডায় আর একটি হচ্ছে টেক্সাসের ডালাসে। আজ শুক্রবার সম্মেলনগুলোর পর্দা উঠছে। ফোবানার এমন অনৈক্য এবারও হতাশ করেছে বাংলাদেশিদের।

কানাডার টরেন্টো শহরে এগলিন্টন এন্ড ডন ভ্যালি পার্ক হাইওয়ের কর্ণারে ডন ভ্যালি হোটেল কেন্দ্রিক ফোবানা সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশ সোসাইটি এস সি। রাসেল রহমান হচ্ছেন এই সম্মেলনের আহ্বায়ক। গিয়াস আহমেদ এই সম্মেলনের চেয়ারম্যান এবং কার্যত তার নেতৃত্বেই অনুষ্ঠিত হবে ডন ভ্যালি হোটেলে তিনদিনব্যাপী ফোবানা সম্মেলন। ফোবানার এই সম্মেলনের নির্বাহী সদস্য সচিব হচ্ছেন খোকন রহমান।

অপরদিকে টরেন্টো শহরেই কানাডিয়ান ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি আরেকটি সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন। আবুল আজাদ এই সম্মেলনের আহ্বায়ক। নিউইয়র্কের আলী ইমাম শেরাটন সেন্টার সম্মেলনের চেয়ারম্যান এবং শাহনেওয়াজ মেম্বার সেক্রেটারি। তবে শাহ নেওয়াজেই এই সম্মেলনের মূল ব্যক্তি।

এদিকে কানাডায় বাংলাদেশি অধ্যুষিত অন্যতম শহর মন্ট্রিয়লে ৩৭তম ফোবানার অরো একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।  স্থানীয় শেরাটন নাভাল হোটেলে অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনের স্বাগতিক সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব মন্ট্রিয়েল। দেওয়ান মনিরুজ্জামান মন্ট্রিয়েল সম্মেলনের আহ্বায়ক এবং চেয়ারম্যান ফ্লোরিডার আতিকুর রহমান। ফোবানার অপর দুটি ভগ্নাংশ টেক্সাসের ডালাস শহরে আয়োজন করছে পৃথক দু’টি সম্মেলন।

বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস-বান্ট একটি সম্মেলনের স্বাগতিক সংগঠন। হাসমত মোবিন এই সম্মেলনের আহ্বায়ক।

১৯৮৭ সালে একটি সুনির্দিষ্ট আদর্শ, উদ্দেশ্য ও স্বপ্ন নিয়ে ফোবানার পথ চলা শুরু হয়েছিলো। লক্ষ্য ছিলো উত্তর আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব বোধ সৃষ্টি করা। বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির ধারা উত্তর আমেরিকার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে জাগরুক রাখা। দেশ ও প্রবাসের মাঝে সেতু বন্ধন সৃষ্টি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের নানাবিধ সমস্যা চিহ্নিত করে সম্মিলিতভাবে তা সমাধানে ব্রতী হওয়া ইত্যাদি কল্যাণকর কর্মকা- চালানো। মোটকথা ফোবানার উদ্যোগ আয়োজনই ছিলো বাংলাদেশিদেরকে ঘিরে।

১৯৮৭ সালে ফোবানা প্রতিষ্ঠা ছিলো সময়োচিত। তৎকালীণ বাংলাদেশি কমিউনিটির চাহিদা ও সময়ের দাবির প্রেক্ষিতেই তখন গোড়াপত্তন ঘটেছিলো ফোবানার। আজকের বাংলাদেশি কমিউনিটির চাহিদা পূরণের ধারে কাছেও নেই ফোবানা। নূতন প্রজন্মের কথা বলে তাদের সাথে করা হচ্ছে বাহাস ।

ফোবানা সম্মেলনেই একসময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, ঔপন্যাসিক, নামকরা শিল্পী এবং প্রবাসের মূলধারার রাজনীতিবিদরা অংশ নিতেন। এখন তেমনভাবে তা হয় না। এখনো সময় আছে নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল বন্ধ করে, একই ছাতার নিচে আসার।

গিয়াস আহমেদের সংবাদ সম্মেলন

ফোবানা সম্মেলনের সর্বশেষ প্রস্তুতি, আলী ইমাম ও শাহ নেওয়াজের নেতৃত্বাধীন ফোবানা নিয়ে গত ২৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদ জানাতে গত ২৮ আগস্ট সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ, ডা. মাসুদুর রহমান, আবু জোবায়ের দারা, আসেফ বারী টুটুল, খন্দকার ফরহাদ, মোহাম্মদ মহসীন, আজাদ হোসেন, কাজী তোফায়েল ইসলাম, মফিজুর রহমান  রুমি, রিয়াজ রহমান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে গিয়াস আহমেদ বলেন, গত ২৩ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে আলী ইমাম, শাহ নেওয়াজ এবং মোহাম্মদ হোসেন খানরা মিথ্যাচার করেছেন। ১৯৮৮ সাল থেকে কমিউনিটি এবং ফোবানার সঙ্গে জড়িত। অনেকে তখন কমিউনিটিতেও ছিলেন না। গত বছরের আগের বছর ওয়াশিংটন ফোবানা সম্মেলন আমরা দিতে না করেছিলাম, কিন্তু তারা দিয়ে সেখান থেকে অপমান হয়ে এসেছেন। সেই সম্মেলনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার কথা ছিল। মোহাম্মদ  হোসেন খানরা পুরো কমিটি না করে ১৩ সদস্যের কমিটি করেছিলেন এবং বলেছিলেন নিউইয়র্কে এসে পরবর্তী নাম সংযোজন করবেন। কিন্তু ওয়াশিংটন থেকে আসার পর তিনি কোনো মিটিংই করেননি।

গিয়াস আহমেদ, গত বছরের মন্ট্রিয়েল সম্মেলনে আমাকে চেয়ারম্যান করা হয়। সম্মেলনে আমাদের লোকজনই বেশি ছিলেন। তারপরও সমঝোতার খাতিরে শাহ নেওয়াজকে সদস্য সচিব করা হয় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পরবর্তীতে বছর শাহ নেওয়াজকে চেয়ারম্যান করা হবে। আমরা সবাই সেখানে স্বাক্ষর করি। আলী ইমাম সাইন করেছেন, আমি সাইন করেছি, তৌফিক এজাজ সাইন করেন, আবু জোবায়ের দারা সাইন করেন। এখন তারা বলছেন, আমরা কমিটি করতে ব্যর্থ হয়েছি। তিনি একটি পত্রিকার কাটিং দেখিয়ে বলেন, আলী ইমামের নেতৃত্বে সভা হয় এবং ৯ জনকে  কো-অপ্ট করা হয়। সেই কমিটির কেউ জানেন না, আমি ইমামকে কীভাবে চেয়ারম্যান করা হলো? চেয়ারম্যান হিসেবে আমিও জানি না। তাছাড়া আমি তাকে ফোন বা মেসেজ করিনি বলে যে তথ্য দিয়েছেন তা-ও সত্য নয়। আমি তাকে বারবার ফোন করেছি এবং মেসেজ করেছি। আমি কাজ করিনি, এটা কীভাবে বলেন? আমরা মিটিং করে কানেকটিকাটে সম্মেলন দিই, গঠনতন্ত্র তৈরি করি, কমিটি করার জন্য একাধিক বৈঠক করেছি। কমিটি করতে গিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ নিয়ে আমাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সেই বিরোধও শেষ হয় শাহ নেওয়াজের অনুষ্ঠানে আমরা যখন যোগ দিই। তিনি বলেছিলেন আমিই চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে আমরা সঙ্গে যোগ না করলে তিনি অবৈধ চেয়ারম্যান নিয়োগ করেন আর স্টিয়ারিং কমিটির অধিকাংশ সদস্য আমাদের সঙ্গে তিনি বা তারা কীভাবে সিদ্ধান্ত নেন? কীভাবে আলী ইমামকে নিয়োগ দেন? এটা আসলে পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি।

ডা. মাসুদুর রহমান বলেন, ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ। তারা এখন মিথ্যাচার করছে। কারণ সব সিদ্ধান্তে তাদের স্বাক্ষর রয়েছে। মিথ্যাচার যারা করে তাদের সঙ্গে থাকা যায় না।

আবু জোবায়ের দারা বলেন, আমি এখনো সমঝোতার পক্ষে। আমরা সবাই বন্ধু মানুষ, কারো বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাই না। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি দলাদলি পছন্দ করি না। তিনি বলেন, আমাদের ফোবানা সম্মেলনের উদ্বোধন হবে হোটেল অপিটোরিয়ামে, হবে সেমিনার। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিনে স্ট্রিট ফেয়ার হবে। আশা করছি, ১৫ হাজার মানুষ হবে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা সত্যের পক্ষে থাকেন, আমরা যদি সত্য না হয়ে থাকি, আমাদের দিক ত্যাগ করেন। এখন পাঁচটি ফোবানা হচ্ছে, আগামী দিনে ঘরে ঘরে ফোবানা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com