সাধারণ জ্বর-ঠাণ্ডা আর হাঁচি-কাশির রোগীরাও এখন করোনাভাইরাস আতঙ্কে ভুগছেন। যদিও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, একমাত্র করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ থেকেই এই রোগটি অন্যের শরীরে ছাড়ায়। তারপরও দেশজুড়েই এখন সবার মাঝে এক আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ দিকে ঋতু পরিবর্তনের কারণে স্বাভাবিকভাবেই অনেকে জ্বর-ঠাণ্ডা এবং হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। পরিবার কিংবা কর্মক্ষেত্রের কোনো একজনের এ ধরনের জ্বর-ঠাণ্ডাতে অন্যদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করছে।
চিকিৎসকদের মতে, চৈত্রের প্রথম সপ্তাহের এই সময়ে দিনের বেলাতে গরম আর শেষ রাতে হালকা শীতের কারণেই মূলত সব বয়সের লোকজন সিজনাল জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে বয়স্ক এবং শিশুদের আক্রান্তের এই হার বেশি। এ ছাড়া ধুলোবালুতেও এলার্জিজনিত সর্দিতে ভুগছেন অনেকে। তবে সাধারণ এই রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হলেও করোনাভাইরাসের লক্ষণ হিসেবে হাঁচি-কাশিতেই যেন সবার বড় ভয়। অর্থাৎ সাধারণভাবেও যদি কেউ এখন হাঁচি-কাশি দেন তাহলে অন্যদের মধ্যে অজানা এক আতঙ্কে সৃষ্টি হচ্ছে।
সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো সম্প্রতি কানাডা প্রবাসী নাজমা আমীন নামের এক ছাত্রী বাংলাদেশ এসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে মারা যাওয়ার পর তার পরিবার অভিযোগ করেছেন, করোনা আতঙ্কে কোনো চিকিৎসক এবং নার্সরা তার কোনো চিকিৎসাই করেননি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না সেটি নিশ্চিত না করেই ওই তরুণীকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেয়া হয়েছে। তার পরিবার বিষয়টিকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি।
অর্থাৎ খোদ হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও অন্য স্টাফরা যেখানে করোনা আতঙ্কে থাকেন, সেখানে সাধারণ নাগরিকরা কত বেশিমাত্রায় এ বিষয়ে ভীতসন্ত্রস্থ হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
এ দিকে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) নিয়মিত ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বরাবরই বলে আসছেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ ছাড়া এই ভাইরাস অন্যদের শরীরে ছড়াবে না। তবে সাধারণ জ্বর-ঠাণ্ডা কিংবা হাঁচি-কাশির রোগীদের বাইরে চলাফেরা কিংবা জনবহুল এলাকা এড়িয়ে চলতে বলা হচ্ছে। বিশেষ করে গণপরিবহন ব্যবহারেও তাদেরকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
মহাখালীস্থ স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি বিভাগের সহকারী পরিচালক আয়েশা আক্তার গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে জানান, এখন যে মৌসুম চলছে তাতে স্বাভাবিকভাবেই যে কেউ সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হতে পারেন। এটা অনেকটা সিজনাল ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগের সাথে করোনার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই জ্বর বা সর্দি হলেই অযথা আতঙ্কিত বা ভয় পাওয়ারও কিছু নেই।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মো: মোকতাদির আহমেদ গতকাল এই প্রতিবেদককে জানান, সাধারণ সর্দি-কাশিতে করোনা আতঙ্ক নেই। তবে যেকোনো জ্বর বা সর্দি-কাশিতেও আমাদের সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। কারণ, এ রোগটিও ছোঁয়াচে। পরিবারের একজনের ভাইরাসজনিত এই জ্বর বা সর্দি হলে দেখা যাবে অন্যরাও এতে আক্তান্ত হচ্ছেন। তাই করোনার আতঙ্ক না থাকলেও সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আর একটি বিষয় আমরা কেউই কিন্তু জানি, কে করোনাভাইরাস বহন করছে আর কে করছে না। অর্থাৎ আমরা জানি না, কে রোগী আর কে রোগী নন। তাই সবাইকেই সতর্ক থাকতে হবে।
আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছেন করোনাভাইরাস এখনো যেহেতু কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়েনি, তাই কেউ আতঙ্কিত হবেন না। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হলে সবার কাছ থেকে অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে বরং সতর্ক ও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।