রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০১ অপরাহ্ন

নিউইয়র্কে পঞ্চম বাংলাদেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৫৫ বার

বাংলাদেশী শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐহিত্য সংরক্ষনের প্রত্যয় নিয়ে নিউইয়র্কের লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে দু’দিনব্যাপী পঞ্চম বাংলাদেশ সম্মেলন। গত ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ। এবারের সম্মেলনের শ্লোগান ছিলো ‘বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য সংরক্ষনই আমাদের প্রত্যয়’।

শো টাইম মিউজিক-এর ব্যানারে আয়োজিত সম্মেলনের প্রথম দিন শনিবার সন্ধ্যায় একগুচ্ছ বেলুন উড়িয়ে এর উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি ড. আবু জাফর মাহমুদ। শুরুতে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন সম্মেলনের চেয়ারম্যান ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী নুরুল আজিম, সম্মেলনের সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এমডি আব্দুর দিলীপ ও সম্মেলনের সদস্য সচিব ও শোটাইম মিউজিকের কর্ণধার আলমগীর খান আলম। এদিন প্রিয়া ড্যান্স একাডেমীর শিল্পীরা দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন। সম্মেলনের কর্মকান্ডের মধ্যে ছিলো অতিথিদের শুভেচ্ছা বক্তব্য, কাব্য জলসা, সঙ্গীত, সম্মানণা প্রদান প্রভৃতি। সাংস্কৃতিক পর্বে কলকাতার জনপ্রিয় শিল্পী পবন দাস বাউল, বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের জনপ্রিয় শিল্পী প্রতীক হাসান সহ প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী কন্ঠশিল্পী প্রমি তাজ, রায়হান তাজ, সেলিম ইব্রাহিম, নীলিমা শশী, চন্দ্রা রয়, শামীম সিদ্দিকী, শাহ মাহবুব, শারিন সুলতানা, বাঁধন ও আফতাব জনি প্রমুখ সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

সম্মেলনের শেষ দিন রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) মূল মঞ্চে বিশেষ অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য বিভক্ত ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির একাংশের চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ, অপরাংশের চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ, সাবেক চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ও মেয়র এরিক এডামস এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা ফাহাদ সোলায়মান, শাহ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট/সিও শাহ জে চৌধুরী, বাংলাদেশ সম্মেলনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান সেলিম এবং ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লস এঞ্জেলসের প্রিয় মুখ মমিনুল হক বাচ্চু।

অপরদিকে এদিন কাব্য জলসারও আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব, যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমী ও একুশে পদক প্রাপ্ত কবি কামাল চৌধুরী। এতে প্রবাসের বিশিষ্ট ছড়াকার মনজুর কাদেরের উপস্থাপনায় প্রাণবন্ত এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আগত কবি ও সাংবাদিক ফেরদৌস সালাম সহ বদিউজ্জামান নাসিম, মীর ফজলুল করিম, জাকারিয়া চৌধুরী, জুলি রহমান, শরীফুজ্জামান পল, বেনজির সিকদার, মনজুর কাদের, কাজী আসাদ প্রমুখ কবিতা/ছড়া পাঠ করেন।

সম্মেলনের শেষ দিন সঙ্গীত পরিবেশন করেন কলকাতার জনপ্রিয় শিল্পী পবন দাস বাউল ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্পী টিনা রাসেল, প্রতীক হাসান, সেলিম চৌধুরী ও বিন্দুকনা এবং উত্তর আমেরিকার জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ড. কামরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান বকুল, ত্রিনিয়া হাসান, দীপ্তি, মিতু ও কৃষ্ণা তিথি।

সম্মেলনে অভিনেত্রী কেয়া পায়েলকে বিশেষ সম্মানণা প্রদান করা হয়। এছাড়াও কমিউনিটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য কয়েকজনকে সম্মানণা প্রদান করা হয়। বিশেষ সমমাণনা প্রাপ্তরা হলেন- বিশিষ্ট চিকিৎসক চৌধুরী সারোয়ার হাসান এমডি, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ও মূলধারার রাজনীতিক ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, আর্ত মানবতা সেবার জন্য শাহ ফাউন্ডেশন, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট আতাউর রহমান সেলিম, নুরুল আজিম, প্রিসিলা, বেলাল চৌধুরী, দুলাল বেহেদু, আব্দুর দিলীপ ও বাংলা ট্রাভেলস এর প্রেসিডেন্ট/সিইও বিলাল হোসেন। সম্মেলনের বিভিন্ন পর্ব উপস্থানায় ছিলেন আলমগীর খান, সেলিম ইব্রাহীম, দুলাল ও কামরুজ্জামান বাবু। সম্মেলন উপলক্ষে লাগোর্ডিয়া মেরিয়টের বলরুমের করিডোরে দেশীয় পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা।

এদিকে সম্মেলনের পক্ষ থেকে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, সম্মেলনের দু’দিনেই ড. আবু জাফর মাহমুদ। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীর জীবন বাস্তবতার আলোকে দিক নির্দেশনাধর্মী বক্তব্য রাখেন। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশ ও সারাবিশ্বের বাংলাদেশী জনগোষ্ঠিকে ঐক্যবদ্ধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। একই সঙ্গে বাংলাদেশীদের মধ্যে বিভক্তি, হিংসা ও হানাহানির দলীয় রাজনীতি পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশ বাতাস নয়। দেশ হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমরা এক হই। তাহলে কেন আমরা বিভক্তির সংস্কৃতি ও রাজনীতি পোষন করবো? যারা আমাদের বিভক্ত করে আমরা কেন সেই রাজনৈতিক দলনেতা ও দলগুলিকে অনুসরণ করবো? যারা একে অন্যের বিরুদ্ধে হত্যায় লেলিয়ে দেয়, ঘৃণায় লেলিয়ে দেয়, পারিস্পারিক বিভক্তিকে অনিবার্য করে তোলে, আমরা তাদের আর সমর্থন করবো না। এখন জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় অপরিহার্য হয়ে উঠেছে আমাদের একতা’র।

নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক ও বাংলাদেশ সম্মেলনের আয়োজক আলমগীর খান আলমের সভাপতিত্বে দুদিনব্যাপী বাংলাদেশ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী পবন দাস বাউল ও তার দল। এছাড়া সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সেলিম চৌধুরী, প্রয়াত শিল্পী খালিদ হাসান মিলুর সন্তান শিল্পী প্রতীক হাসানসহ নিউইয়র্কে বসবাসকারী বিশিষ্ট বাংলাদেশী শিল্পীরা।

প্রথম দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমেরিকার বুকে বাংলাদেশের নামে এই সম্মেলন আমাকে নয় শুধু গোটা বাংলাদেশী সমাজ ও আমাদের নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে। এর আয়োজকরা যেভাবে একতার ঢেউ তুলে চলেছে আমি তাকে স্বাগত জানাই। যখন আমেরিকায় বাংলাদেশিদের বিভক্ত রূপ দেখানোর প্রতিযোগিতা চলছে। বিভিন্ন স্থানে ফোবানা’র ছয়টি অনুষ্ঠান হচ্ছে। আমাদের ভাই ও বন্ধুরা, তাঁরাও আমাদের আপনজন, এভাবে বাংলাদেশের বিভক্ত রূপ দেখিয়ে কী আনন্দ পেয়েছেন আমি জানি না। যেভাবে রাজনীতিতে আমাদের বিভক্ত করা হয়, এক গ্রুপ দিয়ে আরেক গ্রুপকে হত্যা করার জন্য লেলিয়ে দেয়া হয়, সেভাবেই আমরা বিভক্ত হয়ে পড়ছি। এর বিপরীতে বাংলাদেশ সম্মেলন এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ তার বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর প্রতি তার সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও অভিবাদন জানিয়ে বলেন, তার অধিনায়কত্বে যুদ্ধ করে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলাম। অথচ যুদ্ধের রাজনীতিতে তাকে হারিয়ে দেয়া হয়। আমরা হেরে যাই। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন বলেন, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর আগরতলা থেকে হেল্কপ্টার যোগে যখন কুমিল্লায় গিয়ে ভারতীয় জেনারেলের সঙ্গে দেখা করেন, তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে তাকে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত করা হয় ও সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হয়। এটা হচ্ছে যুদ্ধের রাজনীতি। এই যুদ্ধে আমরা হেরে গেলাম। আমরা আর আমাদের জেনারেলকে পাইনি। তিনি বলেন, জেনারেল আপনি নেই, আমি আবু জাফর মাহমুদ এখন জেনারেল। আপনার নেতৃত্বের শক্তি ধারণ করি। আমরা আগামীর যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত।

 

ড. আবু জাফর মাহমুদ বাংলাদেশ সম্মেলনে উপস্থিত শিল্পীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের বড় বড় শিল্পীদের কুটনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগিয়ে থাকে। বহির্বিশ্বে একটি দেশের পরিচিতিসহ বিভিন্নমুখী উৎকর্ষের প্রশ্নে শিল্পীদের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা সে কাজটি করতে পারিনি। আমাদের রাষ্ট্র ও সরকার এ পর্যন্ত সে চিন্তাটি করেনি। শিল্পীদের দায়িত্বটি অনেক বড়। তাদের কুটনৈতিক কাজে মনোযোগী হতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশী যেখানেই থাকুক আমাদের মধ্যে একতা সৃষ্টির কাজে সবাইকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। এই কাজে আর দেরি করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, যে একতা একদিন আমাদের যুদ্ধ শিখিয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে যে অনুপ্রেরণা দিয়েছে, সেই একতার কাছে ফিরতে হবে। আমাদের সামগ্রিক মুক্তির জন্য একতার কোনো বিকল্প নেই। আবু জাফর মাহমুদ বলেন, এই আমেরিকায় আমরা যখন সারা পৃথিবীর নেতা, আমেরিকা যখন নের্তৃত্ব করে আমরাও নের্তৃত্ব করি। দৃষ্টিভঙ্গিতে আমরা যেন পরিস্কার থাকি। যুদ্ধের সময় আমরা যখন যুদ্ধ করেছি, তখন ঢাকার মিরপুরে বিহারিরা ছিল। বিহারিরা এই ভূমির সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ বিরোধীতা করেছে।

এই আমেরিকায় বসবাস করেও অনেকে আমেরিকাকে গালি দেয়। ঠিক ওই বিহারির মতো। আমি তেমন বিহারি নই। বাংলাদেশে থেকে যারা আমাদেরকে এখানে বিভক্ত ও বিভ্রান্ত করছে যে রাজনৈতিক দলনেতা আমাদেরকে উল্টোপথে ঠেলে দেয়। পৃথিবীর দেশে দেশে দেশের সংগঠনের শাখা কমিটির অনুমোদন দেয়, তারা দেশদ্রোহী ও মানবতাবিরোধী; বাংলাদেশের জন্য মুনাফেক।

দু’দিনব্যাপী বাংলাদেশ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ড. আবু জাফর মাহমুদ মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী, সকল সেক্টর কমান্ডার, সাব সেক্টর কমান্ডার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তার প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের সকল কর্মীদের মাধ্যমে ফুলেল শ্রদ্ধার্ঘ জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com