‘দরবেশ বাবা’ পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত এক নারী সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে সাত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রতারক চক্র। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গ্রেপ্তাররা হলেন চক্রের হোতা মো. হাসেম ও তার সহযোগী তানজিল আহমেদ। হাসেম নিজেকে সৌদি আরবের মসজিদে নববীর ইমাম পরিচয় দিয়ে মানুষের সমস্যার সমাধান করার কথা বলে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
আজ রবিবার বিকেলে সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের কথা বলে চক্রের হোতা হাসেম ভুক্তভোগী আনোয়ারা বেগমের কাছ থেকে প্রথমে মোবাইল ব্যাংকি অ্যাকাউন্ট বিকাশ ও রকেটের মাধ্যমে ছোট ছোট অংকের টাকা নিতেন। এরপর বড় অংকের টাকা নেওয়ার সময় তানজিলকে ভুক্তভোগীর কাছে পাঠাতেন একসঙ্গে ৩০-৪০ লাখ আনার জন্য। এভাবে কয়েক ধাপে তারা আনোয়ারা বেগমের কাছ থেকে প্রায় সাত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর ওই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে হাসেমকে ভোলার বোরহানুদ্দিন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
সিআইডি জানায়, আনোয়ারা বেগম (৫৯) একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তার তিন ছেলেমেয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত, তারা দেশের বাইরে থাকেন। তার স্বামী দেশের একজন নামকরা চিকিৎসক। চাকরি থেকে অবসরের পর আনোয়ারা দিনের অধিকাংশ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করেন। এমন অবস্থায় হঠাৎ একদিন ফেসবুক বিজ্ঞাপনে দেখেন দরবেশ বেশধারী ব্যক্তি নিজেকে সৌদি আরবের মসজিদে নববীর ইমাম পরিচয় দিয়ে মানুষের সমস্যা সমাধানের কথা বলছেন। তিনি কোরআন-হাদিসের আলোকে মানুষের সমস্যা সমাধানে কাজ করেন। স্বামী-স্ত্রীর অমিল, বিয়ে না হওয়া, বাচ্চা না হওয়া, লটারি জেতানোসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেন। বিজ্ঞাপনে দুজন মেয়ের সাক্ষাৎকার দেখানো হয়। যেখানে মেয়ে দুটিকে বলতে শোনা যায়, তারা এই ‘দরবেশ বাবার’ কাছ থেকে তাদের সমস্যার সমাধান পেয়েছেন। একপর্যায়ে আনোয়ারা বেগম তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তার বিকাশ নম্বরে বড় অ্যামাউন্টের টাকা পাঠাতে বলেন। এবাবে আনোয়ারা বেগমকে ফোন করে বিভিন্ন অজুহাতে ও ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের প্রলোভন দেখিয়ে ধাপে ধাপে প্রায় ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এক সময় আনোয়ারা বেগম বুঝতে পারেন তিনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন, তখন প্রতিকার পেতে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন।
সিআইডি আরও জানায়, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে হাসেম জানিয়েছে- তিনি ২০০৫ সাল থেকে এ ধরনের প্রতারণার কাজ করছেন। প্রথম দিকে বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিতেন। ২০১৬ সাল থেকে পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি তিনি ইউটিউব ও ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু করেন। ফেসবুকে চার লাখ টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন ও পোস্ট বুস্ট করেন। মূলত সৌদি আরব, দুবাই, ওমান, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত স্বল্প শিক্ষিত প্রবাসী বাঙালিরা তার টার্গেট। এছাড়াও ইউরোপের ইতালি ও ফ্রান্সে বিজ্ঞাপন প্রচার করতেন তিনি। এভাবেই অনেক মানুষের কাছে ‘দরবেশ বাবা’ পরিচয় দিয়ে কথা বলে তাদের ভয়-ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিতেন। হাসেম হিন্দি ও আরবিসহ বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারেন, যা তিনি প্রতারণায় ব্যবহার করতেন।
এর আগে, ফ্রান্স প্রবাসী ইমাম হোসেনের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকার লটারি জিতিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন হাসেম। এছাড়া এক ইতালি প্রবাসীর কাছ থেকে লটারি ও জুয়ায় টাকা জিতিয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীকালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।