চলতি মৌসুমের আগস্টেও দেশে ১৪.৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করে নয়া রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ চা বোর্ড। একই সাথে দেশে আগস্ট পর্যন্ত গত ৮ মাসে চা উৎপাদন ছাড়াল ৫৪.৫৮ মিলিয়ন কেজি। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ মিলিয়ন কেজি বেশি। গত বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে চা উৎপাদন হয়েছিল ৪৯.০৯৩ মিলিয়ন কেজি । চলতি মৌসুমে দেশে ১০২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে চা উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। যদিও চলতি মৌসুমের শুরু থেকে অনাবৃষ্টি প্রচণ্ড খরা ও তীব্র দাপদাহ দেখা দেয়। এর মধ্যেও চলতি মৌসুমের মার্চে ২.০৫৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের নয়া রেকর্ড গড়ার পরে পর্যায়ক্রমে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাতের কারণে চলতি মৌসুমের জুলাই মাসেও ১৩.৬৫৪ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করে ১০ বছরের পুরনো সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে, একইভাবে চলতি আগস্টেও ১৪.৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছে যা চা উৎপাদনের একটি নয়া রেকর্ড।
এদিকে দেশের ১৬৮ টি চা বাগানের সার্বিক চা উৎপাদন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও গত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে চট্টগ্রাম জোনের ২২টি চা বাগানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পিছিয়ে পড়ছে। এ জন্য চলতি মৌসুমের অনাবৃষ্টিই মূল অন্তরায় বলে মনে করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামের ২২টি চা বাগানে চলতি মৌসুমে ১২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আগস্টের ১.৪২ মিলিয়ন কেজি উৎপাদনসহ গত ৮ মাসে চা উৎপাদন হয়েছে ৫.৬০ মিলিয়ন কেজি। একই সময়ে গত মৌসুমে আগস্টের ১.৪৫ মিলিয়ন কেজিসহ ৮ মাসে উৎপাদন হয়েছিল ৬.০২ মিলিয়ন কেজি। গত মৌসুমে চট্টগ্রামের ২২টি চা বাগানে উৎপাদন হয়েছিল ১১.১৪ মিলিয়ন কেজি। বাংলাদেশ টি এসোসিয়েশন চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান মো: আবুল বাশার গতকাল দৈনিক নয়াদিগন্তকে চট্টগ্রামের চা উৎপাদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, প্রতি বছর মৌসুমের শুরু থেকে একাধারে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল ও মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অনাবৃষ্টি ও তাপদাহে দেশে চা উৎপাদন ব্যাহত হয়ে আসছে। তার পরও চা উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ চা বোর্ড গ্রহণ করেছে নানামুখি কার্যক্রম আর এই নানামুখি কার্যক্রমের কারণে দেশে চা উৎপাদন চা উৎপাদনের পরিধি বাড়ছে।
জানা গেছে, গত বছর ২০২২ মৌসুমে চা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০০ মিলিয়ন কেজি তার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল ৯৩.৮২৯ মিলিয়ন কেজি। ওই বছরের আগস্টে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে তারা কর্মবিরতি করেন সে কারণে ওই আগস্ট মাসে উৎপাদন কম হওয়ার কারণেই মূলত ২০২২ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এখন যেহেতু চা শ্রমিকদের মজুরি বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে সে কারণে চলতি মৌসুমে চা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। চা বোর্ডের হিসেব অনুযায়ী দেশে মোট নিবন্ধনকৃত ১৬৮টি টি এস্টেট ও চা বাগান রয়েছে এতে সর্বমোট ২ লাখ ৭৯ হাজার ৫০৬.৮৮ একর বাগানে চা উৎপাদন হয়ে আসছে বলে জানা গেছে।
২০২১ মৌসুমে চা উদপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭৭.৭৭৮ মিলিয়ন কেজির বিপরীতে চাপ উৎপাদন হয় ৯৬.৫০৬ মিলিয়ন কেজি। ২০২০ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫.৯৪০ মিলিয়ন কেজির তার বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উৎপাদন হয়েছিল ৮৬.৩৯৪ মিলিয়ন কেজি। ২০১৯ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪.১৪০ মিলিয়ন কেজি তার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল ৯৬.০৬৯ মিলিয়ন কেজি। ২০১৮ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭২,৩৯০ মিলিয়ন কেজি তার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল ৮২.১৩৪ মিলিয়ন কেজি। ২০১৭ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিল ৭০.৬৮০ মিলিয়ন কেজি তার বিপরীতে উৎপাদন ৭৮.৯৪৯ মিলিয়ন কেজি, ২০১৬ সালে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪.৫০০ মিলিয়ন কেজি অর্জিত হয়েছিল ৮৫.০৫০ মিলিয়ন কেজি। ২০১৫ সালে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪.০০০মিলিয়ন কেজি অর্জিত হয়েছিল ৬৭.৩৭৮ মিলিয়ন কেজি।
২০১৪ সালে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২.০০০ মিলিয়ন কেজি অর্জিত হয়েছিল ৬৩.৮৭৫ মিলিয়ন কেজি। ২০১৩ সালে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০.৫০০ মিলিয়ন কেজি আর অর্জিত হয়েছিল ৬৬.২৫৯ মিলিয়ন কেজি ।
গত ১০ বছরের চা উৎপাদনের ধারাবাহিকতা দেখে বুঝা যায় প্রতি মৌসুমে দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এদিকে ২০২২ মৌসুমে চট্টগ্রামেও অতিতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড করে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে ১৮টি টি স্টেট ও ৪টি চা বাগানে উৎপাদন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ১ কোটি কেজির বিপরীতে ১ কোটি ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯৬ কেজি। (১১.১৩৮ মিলিয়ন কেজি) অপরদিকে গত ২০২১ মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল ৯৫ লাখ ৭২১ কেজি। (৯.৫৭২ মিলিয়ন কেজি)। এবার (২০২৩) মৌসুমে চট্টগ্রামের ২২টি বাগানে চা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ কেজি (১২ মিলিয়ন কেজি)।