দুনিয়ায় যারা নম্রতার সাথে চলে; তাকওয়া অবলম্বন করে অর্থাৎ সবসময় আল্লাহর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত থাকে তারাই হলো মুত্তাকি। তাই তো মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন- ‘এটি সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই, মুত্তাকিদের জন্য এটি পথপ্রদর্শক, যারা অদৃশ্যে ঈমান আনে, যারা সালাত কায়েম করে ও তাদের যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে।’ (সূরা বাকারাহ : ২-৩)
আবু উমামা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেন, ‘দু’টি ফোঁটার চেয়ে বেশি প্রিয় আল্লাহর কাছে আর কিছু নেই। একটি হলো- ওই চোখের পানির ফোঁটা যা আল্লাহর ভয়ে ফেলা হয়; আরেকটি হলো জিহাদের ময়দানে যে রক্তের ফোঁটা ঝরে।’ (তিরমিজি)
আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, ‘আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা কম হাসতে ও বেশি কাঁদতে।’ (বুখারি-মুসলিম)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন- ‘আমার সেই অনুগ্রহকে তোমরা স্মরণ করো যা দিয়ে আমি তোমাদের দয়া করেছি এবং আমার সাথে তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করো। আর তোমরা শুধু আমাকেই ভয় করো।’ (সূরা বাকারাহ-৪০)
আল্লাহ তায়ালা দেখতে চান বান্দা তাকে কতটুকু ভয় করে এবং ভালোবাসে। কেননা, মুমিনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে হবে আল্লাহভীরু। সব ক্ষমতার উৎস ও মালিক আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা মানুষকে ভয় করো না; একমাত্র আমাকেই ভয় করো এবং আমার আয়াতগুলো তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করো না। আল্লাহ তায়ালা যা প্রেরণ করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিধান দেয় না তারাই অবিশ্বাসী।’ (সূরা বাকারাহ-৪৪)
আল্লাহ তায়ালা মুমিন বান্দাদের উদ্দেশে বলেছেন- ‘হে ঈমানদার ব্যক্তিরা তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করো এবং আত্মসমর্পণকারী না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ (সূরা আলে ইমরান-১০২)
একই সাথে আল্লাহ তায়ালা সূরা আল ইমরানের ১০৬ ও ১০৭ নম্বর আয়াতে বলেছেন- ‘সেদিন কতক মুখ হবে উজ্জ্বল এবং কতক মুখ হবে মলিন। আর যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে তারা আল্লাহর অনুগ্রহে সেখানে থাকবে এবং তারা সেখানেই স্থায়ী হবে।’ আর যারা এর বাইরে থাকবে; আল্লাহর অবাধ্য হবে তারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে- এ কথা কুরআনুল কারিমের বহু জায়গায় বর্ণিত হয়েছে।
ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়ায় যারা আনন্দে মেতে পাপের স্রোতে ভাসে, তাদের উচিত কম হাসাহাসি করা এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে গুনাহ মাফের জন্য কান্নাকাটি করা।
আমরা যদি আমাদের পাপের দিকে তাকাই তবে লজ্জায় মাথা অবনত হয়ে যায়। তাই তো কম হেসে আমাদের বেশি কাঁদা উচিত। মুত্তাকিরা তো একমাত্র আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। তারা গোপনে প্রকাশ্যে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে। কেউ দেখুক না দেখুক তারা সবসময় আল্লাহকে হাজির-নাজির জেনে নিজেদের জীবন পরিচালনা করে। এসব মুত্তাকির জন্য মহামহিম আল্লাহ তায়ালার কাছে রয়েছে উত্তম প্রতিদান। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে বলেন- ‘যারা দৃষ্টির অগোচরে মহান আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত ও মহাপুরস্কার।’ (সূরা মুলক-১২)
মুত্তাকিদের মূল পরিচয় হলো- তারা বিশুদ্ধ ঈমানের অধিকারী এবং আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে খুশু-খুজুর সাথে সালাত কায়েমসহ অন্যান্য ফরজ ও সুন্নত আমল আন্তরিকতার সাথে পালন করে। মুত্তাকিরা সব কাজের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য ও রাসূল সা:-এর অনুসরণে অগ্রগামী।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যে তার প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়াকে ভয় করে এবং পাপাচার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে, নিশ্চয়ই তার আবাস হবে (সুসজ্জিত) জান্নাত।’ (সূরা নাজিয়াত-৭৯)
মুত্তাকিদের আরেকটি বিশেষ গুণ হলো- তারা কোনো ভুল হয়ে গেলে অনুশোচনাসহ আল্লাহর দরবারে তাওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার অপার দয়া ও ক্ষমা লাভ করে।
আল্লাহর ভয়ে কান্না করা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘যেদিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা নিজের আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। তার মধ্যে একজন হলো সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে, ফলে তার চোখে অশ্রুধারা বইতে থাকে।’ (বুখারি-৬৬০)
আল্লাহর হাবিব সা: আরো বলেছেন, ‘আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারী জাহান্নামে যাবে না, যেমন দোহনকৃত দুগ্ধ ওলানে ফিরিয়ে নেয়া যায় না। আর আল্লাহর পথের ধুলা ও জাহান্নামের ধোঁয়া কখনো একত্র হবে না।’ (তিরমিজি-১৬৩৯)
হাদিসের এক বর্ণনায় পাওয়া যায়, এক ব্যক্তি তার হারিয়ে যাওয়া উট ফিরে পেয়ে অত্যধিক আনন্দে ভুলবশত বলে ফেলে- ‘হে আল্লাহ আমি তোমার রব আর তুমি আমার বান্দা।’
মহানবী সা: বলেন, ‘ওই বান্দা হারানো উট ফিরে পেয়ে যেমন আনন্দিত হয় হারানো বান্দা ফিরে পেলে দয়াময় আল্লাহ তার চেয়ে আরো বেশি খুশি হন।’ (মুসলিম-২৭৪৬)
লেখক :
সাংবাদিক