সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ডিম ও মুরগির দাম। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সব ধরনের সবজির দাম। ৬০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজিই। দ্রব্যমূল্যের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না নাগরিকদের আয়। ফলে বাজারের তালিকা প্রতি দিনই কাটছাঁট করতে হচ্ছে তাদের। অনেক সময় দ্রব্যমূল্যের সাথে তাল মেলাতে না পেরে বাজার থেকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। এর পরেও দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে পারছে না সরকার। কয়েকটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়ে দায় সেরেছে। নির্ধারিত দামে সেই পণ্যগুলো বিক্রি হচ্ছে কি না সেই তদারকির কেউ নেই।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা বাজারে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেয়। সে হিসাবে গত এক মাসেও এসব পণ্যের বেঁধে দেয়া দর বাজারে কার্যকর হয়নি। ওই দামে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা, ডিমের ডজন ১৪৪ টাকা এবং আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকার মধ্যে বিক্রি হওয়ার কথা। অথচ বাজারে এখন পেঁয়াজ ৮০ থেকে ১০০ টাকা, আলু ৫০ টাকা এবং ডিমের ডজন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকায়। বরবটি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, পটোল প্রতি কেজি ৬০ টাকায়, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সবজির মধ্যে সবচেয়ে কম দাম বলতে পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। এ ছাড়া ঝিঙা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, প্রতি পিস জালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, লাউ প্রতি পিস ৭০ টাকায়। কাঁচা কলা প্রতি হালি (৪টি) ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, বাজারে মূলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ধুন্দল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কচুর মুখি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকায়। অন্য দিকে দেশী পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায় আর আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
সরকার নির্ধারিত মূল্যে পণ্য না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। সরকার কয়েকটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেই দামে বাজারে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। গত সপ্তাহে যে সবজি কিনেছি এই সপ্তাহে এসে তাতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। বাজারে জিনিসপত্রের এত দাম, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কেনার অবস্থা নেই। মাছ-গোশত কেনার অবস্থা নেই। ভর্তা-ভাত, সবজি খেয়ে থাকবো সেটাও অবস্থা নেই। কোনো কিছুর দামই কমছে না। এত দাম হলে আমরা সাধারণ ক্রেতারা তো মাছ-গোশতের মতো সবজিও কিনতে পারব না।
বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে যেটি বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩৩০ টাকা আর দেশী মুরগি প্রতি কেজি ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে বাজারে গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় আর খাসির গোশত প্রতি কেজি ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া বাজারে বিভিন্ন শাকের দামও বেড়ে গেছে। প্রতি আঁটি লাল, মুলা, কলমি শাক ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, লাউশাকের আঁটি ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজারে তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এক কেজি ওজনের রুই মাছের দাম ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, দুই-আড়াই কেজি ওজনের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, আর তিন কেজির বেশি ওজনের হলে দাম হাঁকা হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। মাঝারি ও বড় সাইজের কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, পাবদা মাছ প্রতি কেজি ৩৮০ থেকে ৪৬০ টাকা, শিং মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, কাতল মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা, রূপচাঁদা প্রতি কেজি ৮৫০ টাকা, ইলিশ ৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ১২০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।