মধ্যরাতে বাড়ি থেকে সাংবাদিককে তুলে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনসহ তার কার্যালয়ের সাবেক তিনজন সহকারী কমিশনারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে সরকার। পাশাপাশি তাদের চাকরি থেকে কেন বরখাস্ত করা হবে না, তাও জানতে চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জনপ্রশাসন সচিব জানান, আগের কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে ওই চার কর্মকর্তাকে পরবর্তী পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত রাখা হয়েছে। তাই তারা এখন বেতনভাতা পাচ্ছেন না। যখন তাদের ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হবে তখন তারা বেতন পাবেন।
প্রসঙ্গত, ডিসি সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফ এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। এ ছাড়া, সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে ডিসি সুলতানা পারভীনের অনিয়ম নিয়েও প্রতিবেদন তৈরি করেন আরিফুল। এ সময় একাধিকবার তাকে ডিসি অফিসে ডেকে নিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনার জেরে গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফের বাসায় হানা দিয়ে তাকে তুলে ডিসি অফিসে এনে নির্যাতন করা হয়। এরপর আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ এনে ওই রাতেই তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা ওই অভিযান পরিচালনা করেন। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন ও সহকারী কমিশনার এস এম রাহাতুল ইসলামও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
কুড়িগ্রামের ওই সময়কার ডিসি সুলতানা পারভীনের নির্দেশেই আরিফুল ইসলামকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয় বলে আরিফুলের পরিবারের অভিযোগ।
হাসপাতালে থাকাকালীন আরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পর তাকে ‘বিবস্ত্র করে অমানুষিক নির্যাতন’ করা হয়। চোখ বেঁধে তার কাছ থেকে স্বাক্ষরও নেওয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এম রাহাতুল ইসলামকে কুড়িগ্রাম থেকে অপসারণ করে সরকার।
গত ১৯ মার্চ ডিসি সুলতানা পারভীন, সাবেক তিনজন সহকারী কমিশনারসহ ৩৫-৪০ জনের বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ করেন সাংবাদিক আরিফুল। হাই কোর্ট ওই অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ডের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাকে দেওয়া সাজা স্থগিত করেছে।