শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন

হাদিসে বর্ণিত যে ৮ আমলে জিহাদের সওয়াব

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৭০ বার
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম জিহাদ বা আল্লাহর পথে লড়াই। এর প্রতিদান জান্নাত। মুমিন ব্যক্তি তার যাপিত জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ও চিন্তা-ভাবনায় শয়তান ও কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করে। সঠিক ক্ষেত্র ও পরিস্থিতিতে বৈধভাবে সশস্ত্র লড়াই করার জন্য প্রস্তুত থাকে।

এমন কিছু আমল আছে, যা সম্পাদন করলে জিহাদের সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। যেমন— 

১. জিলহজ মাসের প্রথম দশকের আমল
জিলহজ মাসের প্রথম দশকের নেক আমল আল্লাহর কাছে জিহাদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘(বছরের) যেকোনো দিনের সৎ আমলের চেয়ে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের নেক আমল মহান আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়।’ লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয় কি? তিনি বলেন, ‘না, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়।

তবে ওই ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে তার জান-মাল নিয়ে জিহাদে বের হয়েছে এবং কোনো একটি নিয়েও ফিরে আসেনি।’ (অর্থাৎ সে শহীদ হয়ে যায়)। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৩৮, তিরমিজি, হাদিস : ৭৫৭) 

২. এক নামাজের পর অন্য নামাজের জন্য অপেক্ষা করা 
জিহাদের মর্যাদা লাভের আরেকটি মাধ্যম হলো মসজিদে ফরজ সালাত আদায় করে অন্য সালাতের জন্য অপেক্ষমাণ থাকা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক সালাতের পরে আরেক সালাতের জন্য আপেক্ষমাণ ব্যক্তি সেই অশ্বারোহী সৈনিকের মতো, আল্লাহর পথে যার কোমরে ঘোড়ার লাগাম শক্ত করে বাঁধা আছে।

ফেরেশতামণ্ডলী তার জন্য রহমত প্রার্থনা করতে থাকেন, যতক্ষণ না তার অজু টুটে যায় অথবা মুসল্লা ছেড়ে উঠে পড়ে। আর সে যেন সীমান্ত প্রহরার মহান কাজে নিয়োজিত।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৮৬২৫) 

৩. মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ
আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় অন্যতম আমল হলো মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করা এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমি আপনার কাছে হিজরত ও জিহাদের ওপর বায়াত করতে চাই, যার দ্বারা আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাত কামনা করি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার মা-বাবার কেউ জীবিত আছেন কি?’ লোকটি বলল, হ্যাঁ।

বরং দুজনেই বেঁচে আছেন। আমি তাদের উভয়কে ক্রন্দনরত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। রাসুল (সা.) বললেন, ‘এর পরও তুমি আল্লাহর কাছে পুরস্কার আশা করো? লোকটি বলল, হ্যাঁ। তিনি বলেন, ‘তুমি তোমার মা-বাবার কাছে ফিরে যাও এবং তাদের সর্বোত্তম সাহচর্য দান করো এবং তাদের কাছেই জিহাদ করো।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৪৯) 

৪. বিধবা ও মিসকিনদের সহযোগিতা
সহায়-সম্বলহীন মিসকিন ও স্বামীহারা বিধবা নারীদের সহযোগিতার মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মতো মর্যাদা লাভ করতে পারে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বিধবা ও মিসকিনদের ভরণ-পোষণের জন্য চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ অথবা সারা দিন সিয়াম পালনকারী ও সারা রাত (তাহাজ্জুদ) সালাত আদায়কারীর সমান সওয়াবের অধিকারী।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৬৯, নাসাঈ, হাদিস : ২৫৭৭)

৫. হজ ও ওমরাহ পালন করা
হজ একটি ফরজ ইবাদত। কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত। পাশাপাশি এর মাধ্যমে জিহাদের নেকিও অর্জিত হয়। শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমি আল্লাহর পথে জিহাদ করতে চাই। তখন তিনি বলেন, ‘আমি কি তোমাকে এমন এক জিহাদের সন্ধান দেব, যাতে কোনো কষ্ট নেই?’ লোকটি বলল, অবশ্যই। তিনি বলেন, ‘বায়তুল্লাহর হজ করা।’ (তাবারানি, মুজামুল কাবির, হাদিস : ৭৯২)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমি ভীরু ও দুর্বল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, ‘চলো! এমন একটি জিহাদে যাই, যে জিহাদের পথে কোনো কাঁটা নেই। আর তা হলো হজ করা।’ (সহিহুল জামে, হাদিস : ৭০৪৪)

৬. অত্যাচারী শাসকের সামনে হক কথা বলা
অত্যাচারী শাসকের সামনে হক কথা বলা এবং তাদের সৎ কাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করা অন্যতম জিহাদ। যারা এই কাজ করতে গিয়ে নিহত হয়, তারা শহীদের মর্যাদা লাভ করে। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শহীদদের সর্দার হলো হামজাহ ইবনু আব্দুল মুত্তালিব এবং ওই ব্যক্তি, যে কোনো অত্যাচারী শাসকের কাছে গিয়ে তাকে সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে। ফলে তাকে হত্যা করা হয়।’ (সহিহুত তারগিব, হাদিস : ২৩০৮, সহিহুল জামে, হাদিস : ৩৬৭৫)

৭. আল্লাহর কাছে শহীদি মৃত্যু কামনা করা
শহীদের মর্যাদা লাভের অন্যতম উপায় হলো সব সময় শহীদি মৃত্যু কামনা করা। যার অন্তরে শাহাদাতের তামান্না থাকে, সে নিজ গৃহে মৃত্যুবরণ করলেও শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে। সাহল ইবনে হুনাইফ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে শাহাদাত প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদায় অভিষিক্ত করবেন, যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যুবরণ করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫২০, তিরমিজি, হাদিস : ১৬৫৩)

৮. শহীদের মর্যাদা দানকারী বিপদ ও রোগ
এমন কিছু বিপদ-আপদ ও রোগ-ব্যাধি আছে, যারা সেই বিপদ-আপদ ও রোগে মৃত্যুবরণ করে, হাদিসের ভাষ্য মতে তারা শহীদের মর্যাদা লাভ করতে পারে। জাবের ইবনে আতিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি ছাড়াও আরো সাত শ্রেণির শহীদ আছে। তারা হলো—১. মহামারিতে মৃত (মুমিন) ব্যক্তি, ২. পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি, ৩. ‘জাতুল জাম্ব’ নামক (মেয়েলি) কঠিন রোগে মৃত ব্যক্তি, ৪. (কলেরা, ডায়রিয়া বা অনুরূপ) পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি, ৫. আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি, ৬. ধসে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি, ৭. গর্ভাবস্থায় মৃত নারী।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১১১)

মহান আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com