শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন

আপনার মেয়ে আপনার জান্নাত

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৫৩ বার

পৃথিবীর মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত। নারী ও পুরুষ। এটি আল্লাহ তায়ালার হেকমতের নিগূঢ় রহস্য। বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমরা একে অপরকে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে দেখি। পুরুষ যেমন একা একা চলতে পারে না, মহিলারাও একা একা বসবাস করতে পারে না। সামাজিক জীব হিসেবে পুরুষের প্রয়োজন পড়ে নারীর এবং নারীর প্রয়োজন পড়ে পুরুষের। এই বিধান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত।

আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাকো। আর ভয় করো রক্তসম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর পর্যবেক্ষক।’
নারী ও পুরুষ বিয়ের মাধ্যমে একত্রিত হয়। এতে জীবন হয় দায়িত্বের, কর্তব্য পালনের। পাশাপাশি অন্তরে বাসা বাঁধে অনাবিল সুখশান্তি। মহান আল্লাহ বলেন- ‘তাঁর (আল্লাহর) আরেকটি নিদর্শন হলো- তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যেন তাদের কাছে তোমরা প্রশান্তি অনুভব করো। তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও সহমর্মিতা তৈরি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল জাতির জন্য অনেক নিদর্শন আছে।’ (সূরা রুম, আয়াত-২১)

বৈবাহিক জীবনের একটা পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় ইচ্ছানুযায়ী কাউকে পুত্র সন্তান দান করেন, কাউকে কন্যাসন্তান দান করেন। কাউকে উভয়টি দান করেন এবং কাউকে এ নিয়ামত থেকে বঞ্চিত করেন। তখন বিজ্ঞ ডাক্তার বা অভিজ্ঞ কবিরাজের কাছে গিয়েও কোনো উপকার পাওয়া যায় না। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা করে দেন বন্ধ্যা।’ (সূরা শুরা : ৪৯-৫০)

আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার ওপর কোনো অভিযোগ চলে না। আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ সর্বদা আমাদের ওপর বিদ্যমান। আল্লাহ তায়ালা বান্দার কল্যাণার্থে সিদ্ধান্ত করেন। আমরা যেটিকে কল্যাণ মনে করি হতে পারে আল্লাহ তালার কাছে সেটি অকল্যাণ। আবার আমরা যেটিকে অকল্যাণ মনে করি, হতে পারে আল্লাহ তায়ালার কাছে সেটি কল্যাণ। পুত্র ও কন্যাসন্তান হওয়া না হওয়ার বিষয়ে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার বিশেষ হেকমত। যা অনুধাবন করা কখনোই অনুধাবন করতে পারবে না। প্রায়ই সমাজে দেখা যায়, যখন কারো পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ লাভ করে। সে তখন খুশিতে সবার কাছে এ সংবাদ প্রদান করে। আশপাশে লোকদেরকে মিষ্টি বিতরণ করে। বড় আকারে আকিকা অনুষ্ঠান করে। এভাবে আরো বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে এ খুশি প্রকাশ করে। এটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু কন্যাসন্তান হলে দেখা যায় বিপরীত চিত্র। নিজ থেকে তেমন একটা খুশি ও আগ্রহ নিয়ে কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণের কথা বলে না। কেউ জানতে চাইলেও অনেকটা মুখ ভার করে মনোকষ্ট নিয়ে কোনোরকম বলে, মেয়ে হয়েছে। মেয়ের জন্য তেমন কোনো আয়োজনই করা হয় না। সমাজের কোথাও রয়েছে এখনো জাহিলি যুগের প্রথা। কন্যাসন্তান জন্ম দেয়ার কারণে স্ত্রীকে সইতে হয় স্বামীর পক্ষ থেকে অবর্ণনীয় নির্যাতন। অথচ স্ত্রীর যে সামান্যতম কোনো দোষ নেই তা যেন মানতেই নারাজ। কন্যাসন্তানকে জন্মের সময় থেকেই বোঝা মনে করে। মুখে মেলে না সামান্যতম কোনো খুশি। এ লজ্জা ঢাকতে মানুষ থেকে মুখ লুকিয়ে বাঁচে। তাদের এমন কাজের দৃষ্টান্ত জাহিলি যুগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়; তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়েছে, সে দুঃখে সে কওম থেকে আত্মগোপন করে। আপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে? জেনে রেখো, তারা যা ফয়সালা করে, তা কতই না মন্দ! (সূরা নাহল : ৫৮-৫৯)

মুসলিম হিসেবে কখনোই অমুসলিমদের কর্মপন্থা অনুসরণ করা উচিত নয়; বরং সর্বদা তাদের বিপরীত করতে হবে। তাই কন্যাসন্তান হলে খুশি হতে হবে। তাদেরকে সম্মানের কারণ মনে করতে হবে। কেননা হাদিসে কন্যাসন্তান লালন-পালনের যে পরিমাণ ফজিলতের কথা বলা হয়েছে, পুত্রসন্তানের বেলায় সে পরিমাণ বলা হয়নি। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান বা তিনজন বোন আছে। আর সে তাদের সাথে উত্তম আচরণ করেছে, তাদেরকে নিজের জন্য অসম্মানের কারণ মনে করেনি সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (জামে তিরমিজি-১৯১২)

মেয়েসন্তান লালন-পালনে করতে গিয়ে কখনো কোনো পরীক্ষার সম্মুখীন হতে পারে। তখন অধৈর্য না হয়ে সবর করতে হবে। আল্লাহ তায়ালার মুখাপেক্ষী হতে হবে। হাদিসে এর জন্য সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। চির সুখের স্থান জান্নাত হবে তার আবাসস্থল বলে ওয়াদা করা হয়েছে। আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার মেয়েসন্তানদের জন্য কোনোরকম পরীক্ষার সম্মুখীন হয় (বিপদগ্রস্ত হয়), সে তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধরলে তার জন্য তারা জাহান্নাম হতে আবরণ (প্রতিবন্ধক) হবে।’ (জামে তিরমিজি-১৯১৩)
কন্যাসন্তান লাভের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ পাওয়া বিশেষ সৌভাগ্যের ব্যাপার। আল্লাহ তায়ালা এই অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছে দান করেন। তাই কন্যাসন্তান প্রতিপালনের প্রতি খুব মনোযোগী হতে হবে। এমন ব্যক্তি আমাদের প্রিয় নবীজী সা:-এর সাথে জান্নাতে পাশাপাশি থাকবে। এর চেয়ে সৌভাগ্য আর কী হতে পারে!

আনাস ইবনে মালিক রা: বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে লোক দুটো মেয়েসন্তানকে লালন-পালন করবে, আমি এবং সে এভাবে একসাথে পাশাপাশি জান্নাতে প্রবেশ করব। এই বলে তিনি নিজের হাতের দুটো আঙুল একত্র করে ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন।’ (জামে তিরমিজি-১৯১৪)

কন্যাসন্তান প্রতিপালনের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসগুলোয় পাওয়া যায়, আল্লাহ তায়ালা সঠিকভাবে কন্যাসন্তান প্রতিপালনের কারণে জান্নাত দান করবেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন এবং জান্নাতে নবী করিম সা:-এর সঙ্গী হওয়ার তৌফিক দান করবেন। এর চেয়ে সৌভাগ্যের আর কী হতে পারে! আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হাদিসের দিকনির্দেশনা মতো কন্যাসন্তান প্রতিপালনের তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক :

  • মিজান ইবনে মোবারক

শিক্ষার্থী, জামিয়া রশিদিয়া এমদাদুল উলুম, গৌরনদী, বরিশাল

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com