কুষ্টিয়া, শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও দিনাজপুরের বিরামপুর জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে তিনজন মারা গেছেন।
এ ঘটনার পর দুই চিকিৎসকসহ হাসপাতালের সাত স্বাস্থ্যকর্মীকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া লকডাউন করা হয়েছে ২০-২৫টি বাড়ি।
রোববার রাতে নালিতাবাড়ী উপজেলার দক্ষিণ পলাশীকুড়া গ্রামে ও বিরামপুরে জোতবানি শিবপুর আঁচলকোল তফসিগ্রামে দুজন এবং সোমবার সকালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে একজনের মৃত্যু হয়।
কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে সর্দি কাশি ও শ্বাসকষ্টে এক ইজিবাইকচালকের মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনার পর দুই চিকিৎসকসহ ৭ স্বাস্থ্যকর্মীকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তার মৃত্যু হয়।
পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসকদের জানান, মৃত ব্যক্তি (৪০) পেশায় ইজিবাইক চালক। শহরের চৌড়হাস সাহাপাড়া এলাকায় পরিবারে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।
গত শুক্রবার তার সর্দি দেখা দেয়। এরপর কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। সকালে শ্বাসকষ্ট বেশি হলে একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েন তিনি। পরে তারা হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
আইইডিসিআরের নিয়মকানুন মেনে ওই ব্যক্তির মরদেহ দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি জানান, এ ঘটনায় কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের দুই চিকিৎসকসহ সাত স্টাফকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে মৃত ব্যক্তির বাড়িসহ আশপাশের ১০টি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করে ওই এলাকায় জনগণের চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন আরও জানান, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়। তার দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের জীবাণু আছে কিনা সেটা নিশ্চিত হতে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মাঝবয়সী এক ব্যক্তিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা। তবে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার আগেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
ইজিবাইকচালকের পরিবারে কোনো বিদেশি নেই বলে তারা জানতে পেরেছেন। কিন্তু ইজিবাইক চালানোর সময় করোনাভাইরাসের বাহক কারও সংস্পর্শে যেতে পারেন। এ জন্য নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে। এরপর মরদেহ সিভিল সার্জনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কয়েকজনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
ওই মৃত ব্যক্তির স্ত্রী জানান, বাসা থেকে হাসপাতালে নেয়ার পথে দুই থেকে তিনবার রক্ত বমিও করেছেন তার স্বামী।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জোবায়ের হোসেন চৌধুরী জানান, মৃত ব্যক্তির বাড়িসহ আশেপাশের ৮ থেকে ১০ বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। সেই সাথে ওই এলাকায় জনগণের চলাচল ও সীমিত করা হয়েছে।
শেরপুর: নালিতাবাড়ী উপজেলায় শ্বাসকষ্টে রোববার দিবাগত রাতে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম আওয়াল পাগলা(৫৫)।
এ ঘটনার পর করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে উপজেলার দক্ষিণ পলাশীকুড়া গ্রামের ওই বাড়িসহ আশপাশের ১০টি বাড়ি ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছেন স্থানীয় প্রশাসন।
সোমবার সকালে শেরপুরের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল দল ওই মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহের পর তা আইইডিসিআরে পাঠিয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম আনওয়ারুর রউফ জানিয়েছেন, মৃত ওই ব্যক্তি শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন। তার দাফন-জানাজা হবে।
পরিবারের বরাত দিয়ে ইউএনও আরিফুর রহমান জানান, বাগেরহাটের রামপাল থেকে গত তিন দিন আগে ওই ব্যক্তি শ্বাসকষ্ট নিয়ে নালিতাবাড়ীর গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। বাগেরহাটের রামপালে তিনি নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
বিরামপুর (দিনাজপুর): নাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মো.ফরহাদ হোসেন (৩০)।
রোববার গভীর রাতে উপজেলার জোতবানি শিবপুর আঁচলকোল তফসিগ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে এ ঘটনার পর করোনাভাইরাস সন্দেহে ওই ব্যক্তির বাড়ির আশপাশের বেশ কিছু বাড়ির লোকজনকে হোম কোয়রেন্টাইনে থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মৃত মো.ফরহাদ হোসেন একই এলাকার আবু হানিফের ছেলে। ওই যুবকের শরীরে করোনাভাইরাস উপসর্গ আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মরত চিকিৎসকগণ উপস্থিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক যুগান্তরকে বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তির বাড়িতে ইতোমধ্যেই গ্রামপুলিশ পাহারা দিচ্ছেন। উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স চিকিৎসকগণ এসে তার নমুনা সংগ্রহের পর জেলা থেকে ইমামসহ পাঁচজন লোক এসে তাকে গোসল করাবে। এরপরই জানাজা পড়ানো হবে।