নির্বাচন কমিশনার মো: আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচনে কাউকে ভোটকেন্দ্রে না যেতে বলাটাও গণতান্ত্রিক অধিকার। আপনি কাউকে বলতে পারেন যে ভোট কেন্দ্রে যাবেন না, কিন্তু সেটা শান্তিপূর্ণ আহ্বান হতে হবে। কোনো আক্রমণ করে বা কাউকে ভয় দেখিয়ে সে আহ্বান জানানো যাবে না।’
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় কিশোরগঞ্জে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে মতবিনিময়ের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজনৈতিক সভা সমাবেশ বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ’এটা টোটালি একটা অপপ্রচার। আমরা যে চিঠি দিয়েছি সেটা কোনো শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির বিপক্ষে নয়। প্রচলিত নিয়ম মেনে শান্তিপূর্ণভাবে সভাসমাবেশ করতে পারবে সবাই। এটি সবার গণতান্ত্রিক অধিকার। রাজনৈতিক কর্মসূচি করার জন্য বর্তমানে যে নিয়ম প্রচলিত আছে, আগে যে নিয়ম প্রচলিত আছে, সেটা অব্যাহত থাকবে। আমরা নতুন করে সেখানে কোনো পক্ষে বা বিপক্ষে কিছুই বলিনি। আমরা শুধু যেটা বলেছি, আমাদের নির্বাচনী যে আচরণ বিধিমালা আছে এবং আমাদের আরপিওতে নির্বাচনের জন্য যে অপরাধগুলো আছে, সেই অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো রকম কার্যক্রম নেয়া যাবে না এবং নির্বাচনে বাধা দেয়ার জন্য কোনো হুমকি দেয়া, নির্বাচনকে বাধা দেয়ার জন্য কাউকে আহত করা, কাউকে ভয় দেখানো, জ্বালাও পোড়াও করা, নির্বাচন অফিসে আগুন দেয়া, এগুলো যাতে না হতে পারে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমাদের পত্র দেয়া আছে। এমনিতে সাধারণ যে-সমস্ত জনসভা করা বা সমাবেশ করা, সেগুলোর ক্ষেত্রে যে নিয়ম আছে, সে নিয়ম প্রচলিত আছে, ওইখানে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই, বাধা নেই। এটাকে কেনো যেন আপনাদের মাধ্যমেই হোক বা অন্য কোনো মাধ্যমেই হোক বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে।’
নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ইসি কোনো চাপের মুখে রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মো: আলমগীর বলেন, ‘এখনো না, পূর্বেও না, কখনো না। কখনোই আন্তর্জাতিকভাবে আমাদেরকে (নির্বাচন কমিশনকে) কেউই চাপ দেয় নাই। আন্তর্জাতিকভাবেও না স্থানীয়ভাবেও না। সরকারের পক্ষ থেকেও না। কোনো পক্ষ থেকেই আমাদের ওপর কোনো চাপ নাই। আমরা এখন আমাদের বিবেকের চাপের কাছে আছি।’
সকল দলের অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বর্তমান তফসিল বাতিল করে নতুনভাবে নির্বাচন আয়োজনের পদক্ষেপ নিতে দেশের ৪০ বিশিষ্ট নাগরিকের আহ্বান সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল আর পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী নমিনেশন পেপার দাখিলের যে শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর। এরমধ্যে কোনো রাজনৈতিক দল এসে যদি আমাদেরকে অনুরোধ করত, সে ক্ষেত্রে আমরা বিবেচনা করতে পারতাম। এই মুহূর্তে বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমাদের যে পর্যায়ে গেছে, এ পর্যায়ে সংবিধান অনুযায়ী আমাদের একটা টাইম লিমিট আছে, এই টাইমের মধ্যে আমাদের নির্বাচন করতে হবে। সে হিসাবে এখন আর কোনো সুযোগ নাই।’
নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা যেহেতু সশস্ত্র বাহিনী, তাদের কাজ হল দেশ রক্ষা করা, আমরা যখন সিভিল প্রশাসনে আমাদের কোনো সাহায্য লাগে তাদেরকে আমরা আহ্বান করি। তারা সাহায্য করে। তাদেরকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যার কাছে অস্ত্র থাকে তাকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া যাবে না। বিচার এবং অস্ত্র এক হাতে থাকতে পারে না। এজন্য আপনারা দেখেছেন পুলিশের হাতে যেহেতু অস্ত্র থাকে, পুলিশ কিন্তু বিচার করতে পারে না। তাদেরকে আদালতের কাছে যেতে হয়, আসামিকে সেখানে হস্তান্তর করতে হয়। এটা জাস্টিসের একটা পদ্ধতি। তাই সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়ার দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
নির্বাচন কমিশনার মো: আলমগীর এ সময় আরো বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ হল একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা। এজন্য আমাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’8 পরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ইউএনও, ওসি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য কর্মকর্তা, নির্বাচন কর্মকর্তাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন নির্বাচন কমিশনার মো: আলমগীর। এতে সভাপতিত্ব করেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।