স্বপ্নের দেশ আমেরিকার স্বপ্নের নগর নিউইয়র্কে ১২ এপ্রিল আরেকটি বাংলাদেশি আমেরিকান পরিবারে করোনাভাইরাসে বিপর্যয় নেমে এসেছে।করোনা আক্রান্ত হয়ে নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় ১২ এপ্রিল রোববার মারা গেলেন তানজিদ রাশেদ নামের আরেক বাংলাদেশি নারী। তানজিদ রাশেদের স্বামী বিপ্লব করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর বাবাও আক্রান্ত হন। গত ৩ এপ্রিল তিনি এই ভাইরাসে মারা যান। বিপ্লব করোনা থেকে মুক্তি পেলেও এখন তার বাবার মতো তাঁর স্ত্রী তানজিদ রাশেদ আক্রান্ত হয়ে ওপারে চলে গেলেন। তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আমেরিকায় মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। মৃত্যুর এই তালিকায় প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে বাংলাদেশিদের নাম। শোক গ্রাস করছে পুরো পরিবার, পুরো কমিউনিটিকে। কোথায় গিয়ে এই মিছিল থামবে, জানা নেই কারও। মৃত্যুশোকের কান্নায় নিউইয়র্কের আকাশ এখন ভারী। এমন এক পরিস্থিতি সেই করোনার ভয়ে কেউ কাউকে পাশে থেকে সমবেদনাও জানাতে পারছে না। একটি মৃত্যুর খবর শোনতে গিয়ে আসছে আরেকটি মৃত্যুর খবর। যুক্তরাষ্ট্রে এ নিয়ে করোনাভাইরাসে ১১৫ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করা গেছে। আমেরিকায় করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াল। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আরও ২৬ হাজার ৪৬৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩২ হাজার ৮৭৯ জনে।নিউইয়র্কে বসবাসকারী টাঙ্গাইলের সন্তান বনিতা টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ঊপদেষটা শহরের কলেজ পাড়ার সুপরিচিত মরহুম এডভোকেট সেতাব আলী খানের নাতনি এবং মরহুম জহিরুল ইসলাম খান মজনু’র মেজ কন্যা। এছাড়াও তিনি টাঙ্গাইল জেলা সোসাইটি ইউএসএ’র সাবেক আহবায়ক শামসুজ্জামান খানের ভাতিজি।
তাজিন খান মৃত্যুকালে স্বামী, এক ছেলে (৮), এক মেয়ে (সাড়ে ৩) সহ মা, দু’বোন, চাচা-চাচি সহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এদিকে বনিতা তাজিনের শশুর ও মোহাম্মদ তারিক রাশেদ-এর বাবা টাঙ্গাইলের বিশিষ্ট আইনজীবি হায়াত আলী আকন্দ গত ৩ এপ্রিল লং আইল্যান্ড জুইস (এলআইজি) হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। কিনডী জটিলতা সহ অন্যান্য শারীকি সমস্যায় ভুগছিলেন এবং কিডনী ডায়ালাইসি করতে গিয়ে করনায় আক্রান্ত হয়ে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। এডভোকেট হায়াত আলী এক সময় টাঙ্গাইলের গোপালপুরে শিক্ষকতা পেশার সাথে জড়িত ছিলেন।
জানা গেছে কুইন্সের জ্যামাইকার ব্রয়ারউড এলাকায় বসবাসকারী বনিতা তাজিন সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শে বাসায় অবস্থান করছিলেন। শনিবার দুপুরের খবারের পর স্বামী তারিক রাশেদ-এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঘুমুতে যান। এদিকে তারিক রাশেদ দুই সন্তান নিয়ে সময় কাটাতে থাকেন। পরবর্তীতে রাত হয়ে গেলেও স্ত্রী তাজিনের কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে তারিক রাশেদ রাত সোয়া ১১টার দিকে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখে তার স্ত্রী আর নেই। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সাথে সাথে তিনি ৯১১ এ কল করলে জরুরী কাজে নিয়োজিত স্বাস্থকর্মীরা এসে তার (তাজিন) মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে পার্ক ফিউনালের হোম কর্তৃপক্ষের কাছে তাজিনের মরদেহের জানাজা ও দাফন-কাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানাগেছে । উল্লেখ্য, তারিক রাশেদ নিজেও অসুস্থ এবং কয়েকদিন আগে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন। বনিতা তাজিন ৪/৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হয়ে নিউইয়র্কে বসবাস করছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এদিকে বনিতা তাজিনের মৃত্যুতে টাঙ্গাইল জেলা সোসাইটি ইউএসএ’র সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম খান প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসীদের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে মরহুমার বিদেহী আত্তার শান্তি কামনা করেছেন।