খুলনার পাইকগাছায় গৃহবধূর চোখ-মুখে সুপার গ্লু আঠা দিয়ে আলোচিত ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনার মূল হোতা এনামুল জোয়াদ্দারকে (২৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার কপিলমুনির কাশিমনগরস্থ একটি পরিত্যক্ত মাছের ডিপো থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি উপজেলার গদাইপুর এলাকার বাসিন্দা একরামুল জোয়াদ্দারের ছেলে।
গ্রেফতারকালে তার দেহ তল্লাশি করে ১টি দেশীয় তৈরী ওয়ান শুটারগান, ১ রাউন্ড তাজা গুলি, ১শ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৫০ পিস চেতনা নাশক ট্যাবলেট উদ্ধার হয়।
শুক্রবার দুপুরে খুলনা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এ সংক্রান্তে প্রেস ব্রিফিংয়ে সদ্য পদন্নোতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারের পর আলোচিত ধর্ষণের ঘটনার মূল হোতা এনামুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার মায়ের কাছ থেকে একটি চোরাই মোবাইল ও পাশ্ববর্তী ডুমুরিয়া উপজেলার মালতিয়া গ্রামের দীপক হালদারের ছেলে স্বর্ণকার সুমন হালদারের (৪০) কাছ থেকে চোরাই স্বর্ণের কানের দুল উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে পুলিশ ওই মামলায় রাড়ুলীর ছামাদ সরদার (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারপূর্বক আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ভিকটিমের স্বামী উপজেলার রাড়ুলী ইউনিয়নের বাসিন্দা কাঁচমাল ব্যবসায়ী মান্নান সরদার ( ৫০) গড়ইখালী হাটের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ওই দিন রাতে দুর্বৃত্তরা মান্নানের একতলা বিল্ডিংয়ের চিলেকোঠার দরজা ভেঙ্গে তার স্ত্রীর শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে প্রথমে ওড়না দিয়ে তার হাত-পা বেঁধে ফেলে। এর পর কানে থাকা দু’আনা ওজনের স্বর্ণের দুল, গচ্ছিত ১১ হাজার টাকা ও গৃহবধূর ব্যবহৃত ১টি আইটেল মোবাইল নিয়ে চলে যাওয়ার আগে গৃহবধূর চোখে-মুখে আঠা দিয়ে ধর্ষণ শেষে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
এরপর ভোর রাতে প্রতিবেশী বৃষ্টি খাতুন এক গৃহবধূ (ভিকটিমের) গোঙ্গানির আওয়াজ পেয়ে চিৎকার দিলে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে হাত-পা বাঁধা ও রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে থানা পুলিশে খবর দেয়। এরপর সোমবার সকালেই তাকে অজ্ঞান অবস্থায় চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।
খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সহকারী পুলিশ সুপার (ডি সার্কেল) মো: সাইফুল ইসলাম ও পাইকগাছা থানার ওসি মো: ওবাইদুর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভিকটিমের বিছানা থেকে রক্তমাখা বাঁলিশ, কাথা-কাপড়সহ ১টি সাবল উদ্ধার করেন।
সর্বশেষ এ ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী মান্নান সরদার অজ্ঞাত ২/৩ জনের বিরুদ্ধে লুটপাট ও ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা করেন (যার নং-১৩)।
পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: ওবায়দুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চত করে বলেন, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলোচিত ধর্ষণ মামলার মূলহোতা এনামূলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তার দেহ তল্লাশী করে ১টি দেশীয় তৈরী ওয়ান শুটারগান, ১ রাউন্ড তাজা গুলি, ১০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৫০ পিস চেতনানাশক ট্যাবলেট উদ্ধার হয়।
তিনি আরো বলেন, তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অন্য একটি চুরির মামলায় স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় আটক সুমনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তবে আলোচিত ধর্ষণের ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে তার ব্যাপক জিসাজ্ঞাবাদ জরুরি। তবে মামলার তদন্ত স্বার্থে বিস্তারিত পরে জানানোর কথা বলেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।