সময়টা মোটেও কথা বলছিল না তার পক্ষে। বিপিএল কাটিয়েছেন ভুলে যাওয়ার মতো করে। এরই মাঝে আবার নেতৃত্বও উঠেছে কাঁধে। স্বাভাবিকভাবেই খানিকটা চাপ থাকার কথা নাজমুল হোসেন শান্তর। কিন্তু কে দেখে বলবে চাপে আছেন তিনি। বরং বলা যায় বেশ উপভোগ করছেন নেতৃত্ব।
অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, নেতৃত্বকে আলাদাভাবে দেখছেন না তিনি।
তার সহজ-সরল স্বীকারোক্তি, ‘অধিনায়ক থাকলেও রান করতে হবে, না থাকলেও রান করতে হবে। কোনো ভিন্নতা নেই। সবার আগে আমি একজন ব্যাটসম্যান, আমার কাজ রান করা।’
কথা আর কাজে যে শান্ত সমানভাবেই ছুটছেন, এখন পর্যন্ত তা বলা যায়। নিজের কাজটা করছেন বেশ মন দিয়েই। সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই ফিফটি হাঁকিয়ে যার শুরু, চট্টগ্রামে তা যেন নিয়ে গেলেন আরো একধাপ উর্ধ্বে। লঙ্কানদের বিপক্ষে খেললেন ১২৯ বলে ১২২* রানের অনবদ্য এক ইনিংস।
রান করা তার কাজ, রান করেছেন; এই নিয়ে বলার তেমন কিছু নেই। তবে শান্ত যে অবস্থা থেকে দলকে টেনে এনেছেন বুধবার, তা বাড়তি প্রশংসার যোগ্যই বটে। ৫.১ ওভারে যখন মাত্র ২৩ রানে ৩ উইকেট হারানো দলটাকে এনে দিয়েছেন ৪৪.৪ ওভারেই ৬ উইকেটের জয়। প্রথমে মাহমুদউল্লাহর সাথে ৬৯ ও এরপর মুশফিকের সাথে গড়েন ১৬৫* রানের অবিছিন্ন জুটি।
দুর্দান্ত খেলেন মুশফিকও। অপরাজিত থাকেন শেষ পর্যন্ত ৮৪ বলে ৭৩ রানে। ম্যাচ শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনেও আসেন মুশফিক। যেখানে শান্তর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন এই ব্যাটার। সেই সাথে জানালেন, এখানেই শেষ নয়; শান্ত আরো বেশি সাবলীল, আরো দাপুটে।
শান্তর প্রত্যাবর্তন নিয়ে মুশফিক বলেন, ‘যখন মানুষের দায়িত্ব বেশি থাকে, সবকিছু নিয়ে চিন্তা করে, তখন কিছু কিছু মানুষ তাদের সেরা খেলাটা খেলে। আর শান্ত এমন মানসিকতার ছেলে যে দায়িত্বটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয় এবং সফলভাবে পালন করে। সে যেভাবে প্রক্রিয়া মেনে কাজ করে গেছে, আমার মনে হয়েছে, ওর রানে ফেরাটা ছিল শুধু সময়ের ব্যাপার।’
মুশফিক অবশ্য মনে করেন, এখনো নিজের সেরাটা দেখাননি শান্ত। তার মতে, ‘সে এর চাইতেও সাবলীলভাবে খেলে। ওর সেরাটা এখনো বাকি। এর চেয়েও দাপট দেখিয়ে খেলে। ওর মধ্যে একটা পরিবর্তন এসেছে, আগে একটা ভালো শুরু পেলে ৫০–৬০ রান পর্যন্ত থাকত। এখন ম্যাচ শেষ করে আসছে, বড় ইনিংস খেলছে।’
‘সেঞ্চুরি করার পরে অনেকে চিন্তা করে ভিন্ন কিছু খেলার। কিন্তু সে পরের বলেই সহজে একটা সিঙ্গেল নিয়েছে, এতে বোঝা যায় সে দলের জন্য কতটা চিন্তা করে।’
মুশফিককে সাথে নিয়ে শান্ত ১৬৫* রানের জুটি গড়ে দলকে জেতালেও মাহমুদউল্লাহর সাথে তার গড়ে উঠা ৬২ বলে ৬৯ রানের জুটিটা বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরাতে রাখে বড় অবদান। যা চোখ এড়ায়নি স্বয়ং মুশফিকেরও। এই নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের জুটিটা অবশ্যই ভালো হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত আসল জুটিটা ছিল রিয়াদ ভাই আর শান্তর।’
‘তারা ব্রিলিয়ান্ট ব্যাটিং করেছে। রানরেট ঠিক ছিল। এরপর আমি এবং আরো যারা ছিলাম, তাদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে গেছে। আমাদের উচ্চাভিলাষী শট খেলার দরকার ছিল না। প্রথম ক্রেডিট অবশ্যই রিয়াদ ভাইয়ের। ওই সময়ে ইনটেন্টে ব্যাটিং করায় পরে আমার আর শান্তর জন্য রান করাটায় কোনো চাপই ছিল না।’