করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই কারখানা খোলা রাখতে গিয়ে নানামুখী চাপের মুখে পড়ছেন তৈরিপোশাক শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা। তীব্র জনরোষের পাশাপাশি, শ্রমিক সংগঠনগুলোর চাপ এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদেরকে। তা ছাড়া সংগঠন হিসেবে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএর পক্ষ থেকে যতই বলা হোক না কেন, কাজের চাপ আছে এমন কারখানার শ্রমিকদের ওপর কাজে যোগদানের জন্য চাপ আছেই।
পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ তৈরিপোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পক্ষ থেকে গতকাল জানানো হয়, যেসব পোশাক শ্রমিক ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন তাদের ঢাকায় আসার প্রয়োজন নেই, তাদের বেতন পৌঁছে দেয়া হবে। যেহেতু সরকার আশপাশে অবস্থানরত শ্রমিকদের নিয়ে কারখানা খোলার অনুমতি দিয়েছে, সেজন্য ঢাকার বাইরে থেকে কোনো পোশাক শ্রমিককে ঢাকায় না আসার জন্য বলা হয়। সংগঠনটি জানায়, সহজে ঘরে বসে বেতন-ভাতা পেতে সম্প্রতি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রায় ২৫ লাখ নতুন অ্যাকাউন্ট খুলেছেন পোশাক শ্রমিকরা। এজন্য দেশের যেখানেই থাকুক না কেন সেখানেই বেতন পৌঁছে দেয়া সম্ভব।
সরকারের পক্ষ থেকে গত ২৩ এপ্রিল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে চলমান সাধারণ ছুটি আরো ১০ দিন বাড়ানো হয়। বিভিন্ন নির্দেশনা পালন সাপেক্ষে ২৬ এপ্রিল থেকে আগামী ৫ মে পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে করোনার কারণে সরকার প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে। পরে তিন দফায় বাড়িয়ে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। সাধারণ ঘোষণা অনুযায়ী ছুটির সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামে চলে যাওয়া শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে মালিকরা যেন বাধ্য না করে সেজন্য বিজিএমইএ এই নির্দেশনা দিয়েছে। এর আগে ছুটি ঘোষণায় বিলম্ব হওয়ার কারণে প্রথম দফায় ছুটি শেষে হাজার হাজার শ্রমিকের শহরমুখী যাত্রায় দেশব্যাপী ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এতে বিতর্কিত হয় বিজিএমইএ।
এ দিকে করোনার কারণে সরকারের সাধারণ ছুটিজনিত কারখানা বন্ধ থাকার দিনগুলোয় শ্রমিকদের কী হারে মজুরি দেয়া হবে তা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি সরকারও চাচ্ছে বন্ধের সময় শ্রামিকদের পূর্ণ মজুরি দেয়া হোক। এজন্যে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা হিসেবে দুই শতাংশ সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে ঋণ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মালিকপক্ষ চাচ্ছে বন্ধের সময়টিকে লে-অফ ঘোষণা করে এ সময়ে অর্ধেক মজুরি দিতে। বিষয়টি সুরাহা করতে শ্রমিক, মালিক ও সরকার পক্ষের দফায় দফায় বৈঠক হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তবে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে, এপ্রিল মাসে লে-অফ ও বন্ধ থাকা কারখানার শ্রমিকদের মোট বেতন ৬০ ভাগ দেয়া হবে। আর এপ্রিল মাসে যে সব কারখানা যে কয়েকদিন চালু ছিল সে ক’দিনের শতভাগ বেতন তারা পাবেন। মাসের অবশিষ্ট দিনগুলোর ৬০ ভাগ বেতনও তাদের দেয়া হবে। এ সময় শ্রমিক নেতাদের পক্ষ থেকে অযাচিতভাবে কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করার দাবি তোলা হলে ঈদের আগ পর্যন্ত আর ছাঁটাই হবে না বলে মালিক প্রতিনিধিরা অঙ্গীকার করেন।
বিজিএমইএ-বিকেএমইএ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অপর এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পোশাক কারখানার মালিকরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওয়াদা করেছেন, জনস্বার্থে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কারখানা চালু করবেন। করোনাভাইরাসে যেন আর কেউ আক্রান্ত না হন, তাই (ঢাকার) বাইরে থেকে কোনো শ্রমিক আনবেন না। ঢাকায় যেসব শ্রমিক অবস্থান করছেন তাদের দিয়েই তারা কারখানা চালু করবেন। সেভাবেই তারা কারখানা খুলছেন। তিনি বলেন, শ্রমিকরা যদি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তাহলে তাদের সুরক্ষার জন্য তারা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, সেটাও আমরা শুনেছি। বিদেশের অর্ডার রয়েছে বলে কিছু কারখানা খোলা দরকার মনে করছেন মালিকরা। তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাক্রমে কারখানা চালু করেছেন বলেও সাংবাদিকদের জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।