সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৪ অপরাহ্ন

রিজার্ভ নামল ১৮ বিলিয়নে

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১২ মে, ২০২৪
  • ৪০ বার

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে নামল ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। মার্চ-এপ্রিল মাসের এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় গত বৃহস্পতিবার ১৬০ কোটি ডলার বা ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে ওই দিন নিট রিজার্ভ এক হাজার ৮২৩ কোটি ডলার বা ১৯ দশকি ২৩ বিলিয়নে নেমে এসেছে; যা আগের দিন অর্থাৎ ৮ মে ছিল এক হাজার ৯৮৩ কোটি ডলার বা ১৯ দশমিক ৮৩ কোটি বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ডলার সঙ্কটের কারণে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে কমে যাচ্ছে। গত দুই বছরের ব্যবধানে সামগ্রিক আমদানি অর্ধেকে নেমে গেছে। অন্য দিকে ডলার আন্তঃপ্রবাহের চেয়ে বেশি ব্যয় হওয়ায় নিট রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। বর্তমান কমে যাওয়ার ধারা অব্যাহত থাকলে সামনে বৈদেশিক দায় মেটাতে চাপে পড়ে যাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে ব্যাংকগুলোর কাছ বৈদেশিক মুদ্রা ধার নেয়া শুরু হয়। কোনো ব্যাংকের হাতে বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নির্ধারিত সময়ের জন্য ধার দিতে পারে। তবে বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে নগদ টাকা পাবে। আবার নির্ধারিত সময় শেষে ব্যাংকগুলোর প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রাখা বৈদেশিক মুদ্রা স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে ফেরত নিতে পারবে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে পৌনে ৩ শতাংশ চার্জ পরিশোধ করতে হবে। তবে ব্যাংকগুলোর যখন সাময়িক সময়ের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করবে, ওই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে। যেমনÑ গত এপ্রিল শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলো ধার দিয়েছে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার দরে সমপরিমাণ স্থানীয় মুদ্রা পরিশোধ করে। আর এ সুবাদে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৮৩ বিলিয়নে উঠেছিল। কিন্তু এ ডলার বিক্রি করা হয়েছিল এক মাসের জন্য। চলতি মাসেই এ অর্থ রিজার্ভ থেকে ফেরত দিতে হবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো কমে যাবে।

এ দিকে বাজার থেকে ডলার ধার নিয়ে বিপরীতে টাকা দেয়ায় নগদ টাকার প্রবাহ বেড়ে গেছে। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সঙ্কুচিত মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছিল। আর এর মূল্য উদ্দেশ্যই ছিল বাজার থেকে টাকার প্রবাহ কমিয়ে দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা। বাজার থেকে ১ বিলিয়ন ডলার ধার নেয়ার অর্থ হলো বাজারে ১১ হাজার কোটি টাকা ছেড়ে দেয়া। এতে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এ কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আর বৈদেশিক মুদ্রা ধার নেয়া হচ্ছে না। তবে এ সিদ্ধান্ত একেবারেই সাময়িক। টাকার প্রবাহ কমে গেলে আবারো বৈদেশিক মুদ্রা ধার নেয়া শুরু করা হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বাজারে ডলার সঙ্কট কাটছে না। যে পরিমাণ ডলার আহরণ করা হচ্ছে ব্যয় হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। আর এ কারণে এক দিকে কাক্সিক্ষত হারে পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। এতে আমদানি ব্যয় ৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামালসহ সামগ্রিক পণ্য আমদানি প্রতি মাসে ৮৫০ কোটি ডলারে উঠেছিল। কিন্তু দুই বছরের ব্যবধানে সেই পণ্য আমদানি এখন ৪ বিলিয়নের ঘরে নেমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ৮৪৩ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছিল। পণ্য আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বরের থেকে প্রায় ৫৭ শতাংশ। ঠিক এক বছর পর অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ৬০৪ কোটি ২৯ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়। এতে দেখা যায়, ওই বছরের ডিসেম্বরে পণ্য আমদানির প্রবৃদ্ধি হয় ঋণাত্মক ২৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ; অর্থাৎ এক বছরে পণ্য আমদানি কমে যায় ৮৫ শতাংশের ওপরে। পণ্য আমদানির এ ধারাবাহিকতার দিকে তাকালে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে তা আরো কমে হয় ৪৮৫ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয় ঋণাত্মক ১৩.১৮ শতাংশ; অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে পণ্য আমদানি কমে যায় প্রায় ১০০ শতাংশ। সর্বশেষ হিসাবে গত ফ্রেরুয়ারিতে পণ্য আমদানি হয় ৪৮৬ কোটি ডলারের।

পণ্য আমদানি ভয়াবহ আকারে কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো ডলার সঙ্কট। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ডলার সঙ্কটের কারণে তারা কাক্সিক্ষত হারে শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ কাঁচামাল আমদানি করতে পারছেন না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাহিদার এক-তৃতীয়াংশও এলসি খোলা যাচ্ছে না। কাক্সিক্ষত হারে এলসি খুলতে না পারায় শিল্পের উৎপাদন অনেক ক্ষেত্রেই অর্ধেকে নেমে গেছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় এক দিকে স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়ছে, তেমনি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। লোকসানের ধকল কাটাতে না পেরে অনেক প্রতিষ্ঠান থেকেই শ্রমিক ছাঁটাই করতে হচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় কমে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে ব্যাংকের ওপর। ব্যাংক বিনিয়োগ নিয়ে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানাগুলো থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এতে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান নতুনভাবে পণ্য আমদানি করতে পারছে না। একপর্যায়ে রুগ্ণ শিল্পের কাতারে শামিল হচ্ছে।

এ দিকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের দায় বা আকুর দায় প্রতি দুই মাস অন্তর পরিশোধ করতে হয়। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের দায় গত মার্চে পরিশোধ করা হয় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। আর মার্চ-এপ্রিলের আকুর দায় পরিশোধ করা হয় ১ দশমিক ৬ লিয়ন ডলারের। আর এ সুবাদে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছেছে।

প্রসঙ্গত, আঞ্চলিক দেশগুলোর লেনদেনের নিষ্পত্তির একটি মাধ্যম হলো আকু। তেহরানভিত্তিক এ সংস্থার সদস্য দেশ হলো ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান। সদস্য দেশগুলো প্রতি দুই মাস অন্তর অর্থ পরিশোধ করে। আকু পেমেন্ট করার পর সাধারণত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়। প্রতি দুই মাসের দায় পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করে এসব দেশ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com