সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন

পাচারের গরু আসায় শঙ্কায় খামারিরা

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০২৪
  • ৪৪ বার

কোরবানি ঈদ আসন্ন। ঈদকে সামনে রেখে প্রস্তুত ২ লাখ খামারিসহ আরো কয়েক লাখ ক্ষুদ্র কৃষক। ছোট, বড় এসব খামারির প্রায় ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে, যা মোট চাহিদার চেয়ে প্রায় ২৩ লাখ বেশি বলে জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। পশুখাদ্যের উচ্চমূল্য, তীব্র দাবদাহে বাড়তি যতে্নর কারণে এবার উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। অপর দিকে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে নানা কৌশলে গরু ঢুকছে বলে অভিযোগ খামারিদের। এ অবস্থায় গবাদিপশুর ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছেন তারা।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মো: ইমরান হোসেন গতকাল রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, কুমিল্লা ও সিলেট দিয়ে প্রচুর ইন্ডিয়ান গরু ঢুকতেছে। ময়মনসিংহ ও কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু ঢুকছে।

তিনি বলেন, সরকার বলছে যে, এমনিতেই গবাদিপশু অনেক উদ্বৃত্ত আছে। এর পর যদি এভাবে গরু আসে তাহলে তো আমাদের আর যাওয়ার জায়গা থাকে না। তবে, গরু আসার বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন বলে জানান বিডিএফএ সভাপতি।
ইন্টিগ্রেটেড ডেইরি রিসার্চ নেটওয়ার্ক (আইডিআরএন) বলছে, এক বছরে দেশে প্রাণীর খাবারের দাম বেড়েছে ৫৪ শতাংশ, যেখানে বিশ্ববাজারে বাড়ে ২০.৬ শতাংশ।

বিডিএফএ সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, গবাদিপশু উৎপাদনে প্রায় ৮০ শতাংশই খরচ হয় খাদ্যে। গত বছরের তুলনায় পশুখাদ্যের দাম অনেকটাই বেড়েছে। এ কারণে পশুর প্রকৃত দাম নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। দেশের খামারিদের কাছে চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে। এ কারণে দাম না বাড়লেও খামারিরা লোকসানে পড়তে পারেন। তবে খামারি ও প্রান্তিক পর্যায়ে গরু লালন পালনে খরচের কিছুটা ফাঁরাক হয়ে থাকে। প্রান্তিক পর্যায়ের অর্থাৎ গৃহস্থ পর্যায়ের লালন পালনে দানাদার খাবার কম খাওয়ানো হয়। আর বাণিজ্যিক পর্যায়ে খামারিদের খরচ বেশি হয়ে থাকে। এর পর যদি গরু আমদানি হয়, তাহলে খামারিদের মাথায় হাত পড়বে। খামারিদের স্বার্থ রক্ষায় তিনি চোরাই পথে দেশে গরু আসা বন্ধে সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা এবং কোরবানির পশু পরিবহনে পথে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানান।

অভিযোগ রয়েছে, প্রাণী খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে কাজ করছে শক্তিশালী চক্র (সিন্ডিকেট)। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এ চক্র প্রচলিত প্রাণী খাদ্যের উপাদানগুলোর (গমের ভুসি, ধানের কুঁড়া, সয়ামিল, ডি অয়েল রাইস পলিশ, মসুর ভুসি, সরিষার খৈল, ভুট্টা, ছোলার ভুসি, মুগ ভুসি, খড়, চালের খুদ) দাম বৃদ্ধিতে আরও সক্রিয়। খেয়াল খুশিমতো গোখাদ্য মজুদ রেখে তৈরি করা হচ্ছে কৃত্রিম সঙ্কট।
মানব খাদ্যের দাম নির্ধারণ, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান থাকলেও প্রাণী খাদ্যের দামের সিন্ডিকেট দমাতে নেই কেউ। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এগিয়ে আসছে না প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের নীরবতার কারণে। ঠিক একই কারণে সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে খামারিরা। বেশি দামে পণ্য কিনে মাসুল দিচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। এমনটাই মনে করছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন মাসের ব্যবধানে গমের ভুসি প্রতি বস্তা ১৬০০-১৮০০ টাকা, ও চিকন ভুসি ২০০০-২৮০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আবার এক বাজার থেকে অন্য বাজারে বেশ ব্যবধানে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এক বাজারের দাম অন্যবাজারে মেলে না। চালের খুদ কিনতে হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা, তিন মাস আগে ছিল ৩০-৩২ টাকা কেজি। ধানের কুঁড়া ২০ টাকা। খড়ও কিনতে হচ্ছে ৫ টাকা বেশিতে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি গরুর গোশতের দাম ছিল গড়ে ৩০০ টাকা। ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয় ৪০০ টাকা। তার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর দাম বেড়েছে। ২০২১ সালে প্রতি কেজি গরুর গোস্ত বিক্রি হয় প্রায় ৬০০ টাকায়। অন্য দিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি গরুর গোশত বিক্রি হয়েছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়। অর্থাৎ ২০১৪ সালের তুলনায় এখন গরুর গোশত প্রতি কেজি ১৫০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, খুচরা পর্যায়ে চলতি বছরের শুরুতেও প্রতি কেজি গমের ভুসির দাম ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা, বুটের খোসা ৫২ থেকে ৫৩ টাকা, চালের খুদ ২৯ থেকে ৩০ টাকা ও দানাদার ফিডের দাম ৪৯ থেকে ৫০ টাকা ছিল। তবে বর্তমানে প্রতি কেজি গমের ভুসি ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, বুটের খোসা ৬২ থেকে ৬৫ টাকা, চালের খুদ ৩৮ থেকে ৪০ টাকা ও দানাদার ফিড ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পানি-বিদ্যুৎ বাবদ খরচও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খামারিরা। ফলে লালন-পালন খরচ বৃদ্ধি পেয়ে বাজারে গরুর দাম বেড়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো: আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ঈদুল আজহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি যাতে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে এবং পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে উদযাপন করা যায় সে লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও সরকারের অন্যান্য দফতর-সংস্থা কাজ করছে। দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি। যার বিপরীতে এক কোটি ৭ লাখ ২ হাজার ৩৯৪টি পশুর চাহিদা রয়েছে। ফলে কোরবানির পশু নিয়ে কোনোরকম সংশয়, সঙ্কট বা আশঙ্কার কারণ নেই। দেশে অবৈধ উপায়ে গবাদিপশুর অনুপ্রবেশ যেন না ঘটতে পারে সে জন্য সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান দেয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com