সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৫ পূর্বাহ্ন

ভেসে গেছে ৮৫৮ কোটি টাকার মাছ – প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি ৪৮ কোটি টাকা

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৯ মে, ২০২৪
  • ৫৮ বার

ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে সামগ্রিকভাবে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফসলে যতটা না ক্ষতি হয়েছে কৃষকের, এর চেয়ে বহুগুণ ক্ষতি হয়েছে মৎস্য খাতে। উপকূলীয়সহ মোট ১৮টি জেলার ৮৮টি উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রেমালে মোট ৩৪ হাজার ৭৭টি পুকুর দীঘি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চিংড়ি ঘেরে। মোট ৪৯ হাজার ২৩৬টি ঘের ভেসে গেছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের পানিতে। ভেসে গেছে কৃষকের চার হাজার ৭১৯টি কাঁকড়া ও কুচিয়া খামার। মৎস্য অধিদফতরের গতকাল পর্যন্ত দেয়া হিসাবে বলা হচ্ছে ১৮ জেলায় মৎস্য খাতে প্রায় ৮৫৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে, ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সবমিয়ে হাজার কোটি টাকার উপরে মৎস্যচাষিদের মাছ ঘূর্ণিঝড় রিমালের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মৎস্য অধিদফতরের তথ্য মতে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায়। এই তিন জেলায় প্রায় ৭২২ কোটি ১৭ লাখ টাকার মৎস্য ভেসে গেছে। এর মধ্যে চিংড়ির ঘের তলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩২৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। পোনা মাছ ৮৫ কোটি টাকা, কাঁকড়া ও কুচিয়া প্রায় ২০ কোটি টাকা। বরিশাল বিভাগের বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনা জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এ ছাড়াও ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রায় ১৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকার মৎস্য ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারি ও কৃষক পরিবারে হাহাকার চলছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বরগুনা, খুলনা, লক্ষ্মীপুর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলায় প্রাণিসম্পদ খাতে মোট প্রায় ৪৮ কোটি (৪৭ কোটি ৯৫ লাখ) টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারের সংখ্যা ২ হাজার ৯৩৮টি। এর মধ্যে গবাদিপশুর পাশিাপাশি হাঁস, মুরগির খামারও রয়েছে। ক্ষতি হয়েছে কৃষকের বোনা ঘাস, খড় ও দানাদার খাদ্যও।

এসব বিষয়ে জানতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।
কৃষি ফসলের ক্ষতি কম : কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) তাজুল ইসলাম পাটোয়ারি জানান, সারা দেশে গড়ে ৯০ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে ধান প্রায় কাটা শেষ হয়েছে। এই মূহুর্তে ওইসব এলাকায় তেমন কোনো ফসল নেই। তাই খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি কৃষি ফসলে।
একই ধরনের কথা জানান ডিএই’র মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ^াস। তিনি বলেন, প্রধান প্রধান ফসল যেমন ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের বেশির ভাগই হারভেস্ট হয়ে গেছে। তাই ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। ফাইনাল রিপোর্ট এখনো পাইনি। হয়তো আগামীকাল (আজ বুধবার) পাব। তখন বিস্তারিত বলা যাবে। তবে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে ১০ হাজার জন চাষিকে আমরা আর্থিক সহায়তা দিতে পারব বলে আশা করছি।

কলাপাড়ায় ২২ স্পটে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, কলাপাড়া উপকূলে চলছে এখন দুর্গত মানুষের আহাজারি। রেমাল উপকূল অতিক্রম করলেও এখনো বইছে দমকা বাতাস, থেমে থেমে হচ্ছে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত। এতে ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের, পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত অনেক মানুষ খোলা আকাশের নিচে পরিবার-পরিজন নিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে গবাদিপশু নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন, কেউ কেউ অবস্থান নিয়েছেন মুজিব কিল্লায়। অগনিত গাছপালা উপড়ে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তাই বৃষ্টি উপেক্ষা করে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা সড়ক থেকে গাছপালা অপসারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিদ্যুৎ ও মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সমগ্র উপজেলা। কলাপাড়া পৌর শহরের নাগরিকরা পানিসেবা পাচ্ছেন না গত তিন দিন ধরে। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার অন্তত ত্রিশ হাজার মানুষ তাদের জীবন রক্ষায় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাগত ভবিষ্যতের দুঃশ্চিন্তা পড়েছেন তারা। এখনো পানিবন্দী কয়েক হাজার পরিবার।

খুলনায় পুকুর-ঘের ভেসে ২৪৬ কোটি টাকার ক্ষতি
খুলনা ব্যুরো জানায়, রেমালের তাণ্ডবে জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে খুলনার ৯ হাজার ১১৫টি ঘের ও ৩ হাজার ৬০০ পুকুর। এতে ক্ষতি হয়েছে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের।
জেলা মৎস্য অফিস জানায়, উপকূলীয় উপজেলা কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা এবং ডুমুরিয়া ও রূপসার ৩৮টি ইউনিয়নের মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। ঝড়ের তাণ্ডবে জেলায় ওই ছয়টি উপজেলার ৩৫৫ দশমিক ৩০ হেক্টর জমির ৩ হাজার ৬০০টি পুকুর এবং ১০ হাজার ২২৩ দশমিক ৭৫ হেক্টর জমির ৯ হাজার ১১৫টি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেইসাথে ১ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমির ১ হাজার ৩৫৬টি কাকড়া/কুচিয়া খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে মোট ক্ষতি হয়েছে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৎস্যসম্পদ। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে খুলনায় মৎস্যচাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করেছি। এতে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার সাদা মাছ, চিংড়ি, পোনা, কাঁকড়া ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে।

ঝালকাঠিতে ৬ শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, রিমালের তাণ্ডবে ঝালকাঠিতে ৬ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আাংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ঘরবাড়ি। সোমবার রাতে ঝড়ের সময় জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের বলতলা গ্রামে গাছ চাপা পড়ে জাকির হোসেন (৫৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ দিকে জেলার ৬ হাজার ১৯০ হেক্টর জমির ফসল এবং বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে সাড়ে ৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই হাজার ৭০টি পুকুর ও ১৫৯টি মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া বিদ্যুতের খুঁটির ওপর গাছ পরে রোববার রাত থেকে টানা দুই দিন ধরে পুরো জেলা বিদুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
এ দিকে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গুদামে পানি প্রবেশ করায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

যশোরের ১০ লাখ গ্রাহক তিন দিন অন্ধকারে
যশোর অফিস জানায়, যশোরে পল্লী বিদ্যুতের ১০ লাখ গ্রাহক তিন দিন ধরে অন্ধকারে রয়েছে। একটানা তিন দিন বিদ্যুৎ না থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে লাখ লাখ মানুষ। ইতোমধ্যে অসংখ্য মানুষের মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে গেছে। নষ্ট হচ্ছে ফ্রিজে থাকা খাদ্যসামগ্রী, সেই সাথে ফ্রিজও। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ আসতে পারে সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছুই বলছেন না পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা। উপরন্তু সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে কর্মকর্তারা রুঢ় আচরণ করছেন বলে অভিযোগ বহু গ্রাহকের।
সাইক্লোন রেমাল রোববার সন্ধ্যায় আঘাত হানে। সন্ধ্যার পরপরই স্থলভাগে পৌঁছে রেমাল। তার পরপরই যশোরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদিও যশোরের ঝড়ের প্রভাব পড়ে মাঝরাতে। পরের দিন শহরে ওজোপাডিকো বিদ্যুৎ চালু করতে পারলেও তিন দিনে পারেনি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। টানা তিন দিন অন্ধকারে রয়েছে যশোর পল্লী বিদ্যুতের ১০ লক্ষাধিক গ্রাহক। গরমের মধ্যে অন্ধকারে থাকা গ্রাহক পরিবারের লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
কবে নাগাদ বিদ্যুৎ আসতে পারে জানতে চাইলে সিনিয়র জিএম ইসহাক আলী বলেন, যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার তিন ভাগের দু’ভাগ ঠিক করা হয়েছে। বাকি একভাগ কাজ আজকের (মঙ্গলবার) মধ্যে ঠিক হবে। ঝড়ে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে ইসহাক আলী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘এটি আপনাদের জানার বিষয় না, আমাদের বিষয়।’

দু’দিন অন্ধকারে পিরোজপুরবাসী
পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পিরোজপুরের মানুষের জীবনযাত্রা। রাস্তার ওপর গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে দু’দিন ধরে যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে অনেক এলাকা। এ ছাড়া বন্যার পানিতে পুরো এলাকা প্লাবিত হওয়ায় মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। পানিতে ঘরের আসবাবপত্র নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অনেকের কাঁচা মেঝের ঘর ধসে পড়েছে। এ ছাড়া অনেকের ঘরের ওপর গাছ পড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার সকল পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বন্যার পানিতে সবজিক্ষেত প্লাবিত হয়ে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে সাধারণ কৃষকেরা। উঁচু এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও, এখনো নিম্ন এলাকাগুলো রয়েছে পানির নিচে। এ ছাড়া রোববার রাত থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকায় ভেঙে পড়েছে পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থা।

কক্সবাজার উপকূলে বেড়িবাঁধে ভাঙন
কক্সবাজার অফিস ও উখিয়া সংবাদদাতা জানান, দু’দিন ধরে জোয়ারে কক্সবাজারের উপকূল এলাকায় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে কুতুবদিয়া, মহেশখালী সদর এবং টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপে বেড়িবাঁধ উপচে সাগরের পানি ঢুকেছে লোকালয়ে। এতে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে জেলার অর্ধশত গ্রাম। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলের লোকালয়ে সাগরের পানি ঢুকেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রেমালের প্রভাবে দুদিন ধরে সাগরে তিন থেকে চার ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। জোয়ারের পানির তোড়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, কুতুবদিয়া দ্বীপ, সদর উপজেলার ভারুয়াখালী, মহেশখালী উপজেলার সিকদার পাড়া মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা এলাকায় বেড়িবাঁধে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে জেলার ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। মহেশখালী উপজেলার সিকদার পাড়া এলাকায় জোয়ারের তোড়ে একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। বিশেষ করে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরাটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, মোস্তাকপাড়া, ফদনার ডেইল, নুনিয়ারছড়া, পেকুয়া উপজেলার উজান্টিয়া ও রাজাখালী এলাকা কুতুবদিয়া দ্বীপ এবং মহেশখালী উপজেলার সিকদার পাড়া ধলাঘাটা ও মাতারবাড়ি ইউনিয়নের কিছু এলাকায় পুরনো বাঁধ ভেঙে গেছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি দ্বীপের কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন ধরেছে। ঝড়ো হাওয়া ও তীব্র বাতাসে জেলার অনেক এলাকায় গাছপালা ওপরে পড়েছে। কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তালতলীতে ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী
তালতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, তালতলীতে টানা বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী মানুষের মধ্যে এখন চরম খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া টানা ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে পুরো উপজেলা। পল্লিবিদ্যুতের বিভিন্ন সঞ্চালন লাইনের উপরে ঘরবাড়ি ও গাছের ডালপালা উপড়ে পড়লে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ। এক দিকে পানিবন্দী, অন্য দিকে অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে উপজেলার জনসাধারণ।
পল্লী বিদ্যুৎ তালতলী কার্যলয়ের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার বলেন, পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অধীনে এ উপজেলায় ২৭ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন। প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে গেছে ৩০টি বৈদ্যৃতিক খুঁটি ও একাধিক ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে। ৬ শতাধিক গাছ ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। এর ফলে এ উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। বিদ্যুৎকর্মীরা এসব লাইন মেরামত ও খুঁটি বসানোর কাজ শুরু করেছেন।

পাইকগাছা লণ্ডভণ্ড
পাইকগাছা (খুলনা) সংবাদদাতা জানান, রেমালের তাণ্ডবে উপকূলীয় পাইকগাছা উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল লণ্ডভণ্ড হয়েছে। বিশেষ করে জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার বিভিন্ন পোল্ডারে পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রামে লবণ পানি প্রবেশ করে। এতে হাজার-হাজার বিঘার চিংড়ি ঘের তলিয়ে ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মাছ। রোববার রাতের জোয়ারের ওপর জলোচ্ছ্বাসে ১০/১২ নং পেল্ডারের গড়ইখালীর কুমখালীর ক্ষুদখালীর ভাঙন, ২৩ নং পোল্ডারের লস্করের বাইনতলা, কড়ুলিয়াসহ ৩টি স্থানে, লতা, দেলুটি, হরিঢালী, রাড়ুলী, কপিলমুনিসহ সোলাদানার একাধিক পয়েন্টে বাঁধ উপচে লোকালয়ে লবণ পানি ঢুকে

ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে।
কুষ্টিয়ায় ঘরচাপায় বৃদ্ধ নিহত
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ার মিরপুরে টিনের চালা পড়ে বাদশা মল্লিক (৬০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। গত সোমবার সকালে উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের দাসপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত বাদশা দাসপাড়া এলাকার মৃত খবির মল্লিকের ছেলে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবদুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, সকালে মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের দাসপাড়া এলাকার বাসিন্দা বাদশা মল্লিকের বাড়ির টিনের চালা ঝড়ো বাতাসে ভেঙে পড়ে। চালার নিচে চাপা পড়ে বাদশা মারা যান।

ভেঙে গেল তেঁতুলিয়া বেড়িবাঁধ
বোরহানউদ্দিন (ভোলা) সংবাদদাতা জানান, উপজেলার তেঁতুলিয়া বেড়িবাঁধ অবশেষে ভেঙে গেছে। গত সোমবার রাতে রেমালের প্রভাবে তেতুলিয়ার গঙ্গাপুর ও কুতুবা এলাকায় বেড়িবাঁধের কয়েকটি জায়গায় ভাঙন দেখা যায়। ভেসে যায় পুকুর ও খামারের মাছ। জোয়ারের পানিতে অনেক মানুষের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়।
কয়েক দিন ধরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট বেড়ে যায়। এ সময় কুতুবা ও গঙ্গাপুর ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী বেড়িবাঁধ এলাকায় প্রচণ্ড পানির চাপ লক্ষ করা যায়। পাশাপাশি তেতুলিয়া নদীর সব চর ডুবে যায়। এ সময় সিদ্দিক খনকার, টুটুল হাওলাদার, গাজী বাড়ির সামনেসহ তিন-চার জায়গায় বাঁধ ভেঙে যায়।

 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com