ইবোলা ভাইরাসের ওষুধ রেমডেসিভির ব্যবহার করা হচ্ছে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ওষুধ হিসেবে। এটি ইনজেকশন হিসেবে রোগীর শরীরে পুশ করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান এফডিএ রেমডেসিভির ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার পর বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ওষুধটি ‘কোভিড-১৯’-এর ওষুধ হিসেবে উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে। রেমডেসিভির নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ হাসপাতালে ওষুধটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দেয়া হয়। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ওই হাসপাতালে এক হাজার কোভিড-১৯ রোগীর ওপর ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়। দেখা গেছে, ওষুধটি প্রয়োগে রোগীরা ১১ দিনের মাথায় সুস্থ হয় তাদের তুলনায় যাদের প্রচলিত অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ দিয়ে করোনার রোগীদের সুস্থ করা হচ্ছে। অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ দেয়া হলে কোভিড-১৯ রোগীরা গড়ে ১৫ থেকে ১৭ দিন পর সুস্থ হয়ে থাকে। অন্যভাবে বলা যায়, রেমডেসিভির প্রয়োগের পর করোনার রোগীদের হাসপাতালে অবস্থানের হার ৩১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়, রোগীরা তুলনামূলক আগে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে এই ওষুধ সেবনে মৃত্যুর হার খুব একটা কমে না। রেমডেসিভির ইনজেকশন হিসেবে ৫ থেকে ১০ দিনের মেয়াদে দেয়া হয়।
এফডিএ রেমডেসিভিরকে বর্তমানকার করোনাভাইরাসের ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের জন্য সাময়িক অনুমোদন দিয়েছে, সংস্থাটি স্থায়ী অনুমোদন দেয়নি। ওষুধটি সব করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য অনুমোদন দেয়া হয়নি বলেও নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে। তারা বলেছে, রেমডেসিভির কেবলমাত্র গুরুতর অসুস্থ করোনা আক্রান্ত রোগীদের দেয়ার জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের রোগীদের বাঁচানোর জন্য এই ওষুধটিকে নতুন অস্ত্র হিসেবে পেয়েছেন বলেও নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে। ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস মেডিক্যাল স্কুলের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রবার্ট ফিনবার্গ বলেছেন, ‘এটা একটি প্রথম এবং বিশাল পদক্ষেপ।’
রেমডেসিভির যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি গিলিয়াড প্রথমে ইবোলা ভাইরাসের চিকিৎসায় প্রস্তুত করেছিল। রেমডেসিভির ইবোলা, করোনাভাইরাসসহ অন্য কিছু ভাইরাসের পুনঃ উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে অকার্যকর করে দেয়। ফলে কোভিড-১৯ রোগীর ইমিউন সিস্টেমকে (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না।
বাংলাদেশে বেক্সিমকো ও এসকেএফ রেমডেসিভির উৎপাদনের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই দুটো ওষুধ কোম্পানি ছাড়া ইনসেপ্টা, অপসোনিন, পপুলার, হেলথকেয়ার, স্কয়ার ও বিকন ওষুধটি উৎপাদনের অনুমতি পেয়েছে ওষুধ প্রশাসন থেকে। গতকাল রোববার ইনসেপ্টার ডিজিএম মার্কেটিং হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, ইনসেপ্টাও খুব শিগগিরই রেমডেসিভির নিয়ে বাজারে আসছে। বেক্সিমকোর চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা জানান, বেক্সিমকো এ মাসেই এ ওষুধটি উৎপাদনে যাচ্ছে এবং প্রথমেই সরবরাহ করা হবে দেশের বাজারে।
রেমডিসিভির বাংলাদেশে বাজারজাত করা নিয়ে ইতোমধ্যে দু’টি ওষুধ কোম্পানিকে মনে হলো তারা বেশ বড় ধরনের প্রতিযোগিতায় নামতে যাচ্ছে। একটি কোম্পানি নমুনা বিশ্লেষণ করে ড্রাগ ল্যাবে পাঠালেও আরেকটি কোম্পানি জমা না দেয়ায় ওষুধ প্রশাসনের পরিচালক মো: রুহুল আমিন গত ৯ মে সকালে সংবাদপত্রে স্পষ্টীকরণ বিবৃতি দিয়েছেন। পরে অবশ্য সন্ধ্যার আগে তিনি জানিয়েছেন তার স্পষ্টীকরণ বিবৃতিটির আর উপযোগিতা নেই। কারণ ওই কোম্পানিটি বিকেলেই তাদের বিশ্লেষণের নমুনা ড্রাগ ল্যাবে জমা দিয়েছে বলে তিনি গত ৯ মে সন্ধ্যার পর নয়া দিগন্তের এই প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের রোগীদের জন্য দেশের ৮ কোম্পানি খুব তড়িঘড়ি করে উৎপাদনের কাজ করলেও কোনো কোম্পানি ওষুধটি দাম কম রাখছে না। প্রায় সবাই ওষুধটি প্রতিটি ভায়ালের মূল্য রাখতে যাচ্ছে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের মোট ৫ থেকে ১১ ডোজ রেমডেসিভির প্রয়োজন হতে পারে। রোগীর জন্য ঠিক কতটুকু প্রয়োজন হবে তা গবেষণা সম্পন্ন হলেই বলা যাবে। রোগের তীব্রতার ওপর নির্ভর করবে রোগীর কতটুকু ওষুধ প্রয়োজন হবে। একজন করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য ২৫ থেকে ৬৬ হাজার টাকা রেমডেসিভির লাগতে পারে।
ওষুধের মূল্য ধরার পেছনে যুক্তি হিসেবে ওষুধ প্রশাসনের পরিচালক মো: রুহুল আমিন জানান, ওষুধটির কাঁচামালের অভাব রয়েছে। তবে তিনি বলেন, ওষুধটির দাম সংশ্লিষ্ট কোম্পানিই নির্ধারণ করেছে, ওষুধ প্রশাসন করেনি।