সুন্দরবনের হরিণ শিকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে পড়েছে বন বিভাগ। ঘটনার সাড়ে তিন মাস পরে মিথ্যা অভিযোগে বনরক্ষীদের নামে শরণখোলা থানায় পাল্টা মামলা দায়ের করেছে আসামিপক্ষ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বনরক্ষীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) এনামুল হক জানান, গত জানুয়ারি মাসের ১৬ তরিখে সুন্দরবনের তাম্বলবুনিয়া টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা নিয়মিত টহল দিচ্ছিল। টহলকালে বিকেল ৫টার দিকে তারা বনের কলামুলা এলাকায় দুইটি ডিঙ্গি নৌকা দেখতে পেয়ে চ্যালেঞ্জ করে। পরে তারা নৌকা দুইটি তল্লাশি চালিয়ে হরিণ শিকারের ফাঁদ, শিকার নিষিদ্ধ মা কাকড়া ও চারু উদ্ধার করে। এক পর্যায়ে শিকারীরা বনরক্ষীদের উপর হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায়। শিকারীদের হামলায় বনরক্ষী আবুল বাশার ও মোতালেব হোসেন গুরুতর আহত হন।
এ ঘটনায় ১৭ জানুয়ারি তাম্বলবুনিয়া টহলফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বাদী হয়ে শরণখোলা থানায় চারজনকে আসামি করে পেনাল কোর্টের ৩৩২, ৩৫৩, ৩০৭, ৩৭৯, ৪২৭, ৫০৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-০৫। আসামিরা হচ্ছেন, পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার ধাবড়ী গ্রামের আ: হক শেখের ছেলে ইউসুফ শেখ (৩৫), বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার বাঁশতলা গ্রামের হাছেন মুসুল্লির ছেলে আ: হামিদ মুসুল্লি (৩৫), হানিফ মুসুল্লি (৩৩) ও আসাদ মুসুল্লি (৩০)।
অপরদিকে, ওই ঘটনার সাড়ে তিন মাস পরে গত ১ মে উল্লেখিত আসামিদের পক্ষে মোংলা উপজেলার মিঠাখালী গ্রামের সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে শরণখোলা থানায় একটি পাল্টা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-০১। মামলায় তাম্বলবুনিয়া টহলফাঁড়ির ওসি মিজানুর রহমান, বিএম আবুল বাশার ও মোতালেব হোসেনকে আসামি করা হয়।
এ ব্যাপারে উভয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই স্বপন কুমার জানান, বন বিভাগের দায়ের করা মমলাটি তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়েছে। অপর মামলাটির তদন্ত চলছে।
সাড়ে তিন মাস পরে পাল্টা মামলা দায়েরের বিষয়ে জানতে চাইলে শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ বলেন, তারা যেহেতু মেডিকেল সনদপত্র নিয়ে এসে মারপিটের ঘটনা বর্ননা করেছেন তাই মামলা নেয়া হয়েছে। তবে ঘটনার সত্যতা না পাওয়া গেলে ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী সোহরাব হোসেন জানান, আসামিদের তিনজন তার ভাগ্নে। সুন্দরবনে মাছ ধরতে গেলে বনরক্ষীরা উৎকোচের দাবিতে তাদের মারধর করে নৌকা ডুবিয়ে দেয়। এ ঘটনায় শরণখোলা থানায় প্রথমে মামলা নিতে অনিহা প্রকাশ করায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়ে সাড়ে তিন মাস পরে মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে।