বাংলাদেশে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। আজ মঙ্গলবার বিকেলে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিএনপির বিভাগীয় শোভাযাত্রা আগে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘তারা যে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাতে তাদের (আওয়ামী লীগ) এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। যারা মেশিনগান দিয়ে নিরস্ত্র ছাত্রদের হত্যা করেছে। যারা গত ১৭ বছর গণতন্ত্রকে পদদলিত করে রেখেছে। যারা অতীতেও সকল দলকে নির্বাসিত করে বাকশাল কায়েম করেছিল এই দল গনতন্ত্রের শত্রু। যারা গণতন্ত্রের শত্রু তাদেরকে গণতন্ত্রের মিত্র হিসেবে বলতে পারি না।’
হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশে এক শ্রেণির তথাকথিত বুদ্ধিজীবী আছে, যাদের গণতন্ত্র ভালো লাগে না, গরীব মানুষের শাসন ভালো লাগে না। সাধারণ মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের রায় দেবে, এটা তাদের ভালো লাগে না। তারা নিজেরা কোনো দিন ভোট দেন নাই। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা তো দূরের কথা, তাদের গণতন্ত্রের যে মূল বক্তব্য তাদের মধ্যে ঘাটতি আছে।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সরকার নির্বাচন সম্পর্কিত সংস্কার সাধন করে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেবেন। যাতে এ দেশে নির্বাচিত ব্যক্তিদের দিয়ে শাসন কায়েম হয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে বিএনপি তাদের মাথায় তুলে রাখবে। কোনো সন্দেহ নেই বিএনপি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে এসেছি।’
আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া আবারও দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। আপনারা দৃঢ় অবিচলভাবে অপেক্ষা করে থাকুন। তারেক রহমান সবাইকে শৃঙ্খলাভাবে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। জিয়াউর রহমানে দল হিসেবে আমরা এমন কোনো কাজ করব না, যাতে বিএনপির মুখে কালিমা লেপন হয়। নিজেরা সাবধান থাকবেন, দুর্বৃত্তরা অপকর্ম করে বিএনপির ওপর দোষ দেবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি ৩০ দফা সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের এই সংস্কার প্রস্তাবকে মান্য করে ৬টি কমিশন গঠন করেছে, যার ফলে আমরা যে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছি সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ ড. ইউনুসের সরকার নেবে বলে আমরা মনে করি। বর্তমান সরকার অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করুক। গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে একটি কমিশন গঠন করুক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘ঢাকা ও যশোর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা খুনি। গত ৫ তারিখে যেদিন এই সরকার পতন হয়েছে সেদিন ৪৮৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছে। তারা সবাই খুনি ও দুর্বৃত্ত। যশোর ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নিয়েছে আরও কয়েকজন খুনি। জনরোষের পরে যে পুলিশ বাহিনী জনগণকে নিরাপত্তা দেবে কিন্ত তারা খুনি বাহিনী হিসেবে নিজেরাই পালিয়েছে।’
সরকারের পতনের পর রংপুরের এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে আজ সকাল থেকেই কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে জমায়েত হতে শুরু করেন বিভাগের আট জেলার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে সমাবেশস্থল পরিণত হয় জনসমুদ্রে। এ সময় স্লোগানে মিছিলে রংপুর পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। সমাবেশ শেষে শুরু হয় গণতন্ত্র দিবসের র্যালি। র্যালিটি কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দান থেকে শুরু হয়ে নগরীর শাপলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে অংশ নেন হাজারো নেতাকর্মী।