শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
চিন্ময় কৃষ্ণসহ ইসকনসংশ্লিষ্ট ১৭ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজায় ৪৮ ফিলিস্তিনি নিহত লেবাননে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ, গুলিবর্ষণ ইসরাইলের সংস্কারের কাজ দৃশ্যমান হলেই নির্বাচন হবে : মাহফুজ আলম কারিকুলামে যুক্ত হচ্ছে জুলাই-আগস্টের স্মৃতি কলকাতায় বাংলাদেশি কনস্যুলেট ঘেরাওয়ের চেষ্টা, সংঘর্ষে আহত পুলিশ চলমান অস্থিরতার পেছনে ‘উদ্দেশ্যমূলক ইন্ধন’ দেখছে সেনাবাহিনী জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যারাই যাবে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে : জামায়াত আমির বিচারপতিকে ডিম ছুড়ে মারার ঘটনায় প্রধান বিচারপতির উদ্বেগ ইসরাইলের বিরুদ্ধে জয় ঘোষণা হিজবুল্লাহর

এক মাসে ৪৯ লাশ দাফন ও সৎকার করলেন কাউন্সিলর খোরশেদ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০
  • ২১১ বার

নারায়ণগঞ্জে এক মাসে ৪৯টি লাশের দাফন ও সৎকার করছেন সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। তাদের কেউ মারা গেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে, কেউ আবার করোনা উপসর্গ নিয়ে। তাদের কেউই কাউন্সিলর খোরশেদের স্বজন নন। কিংবা তিনিও তাদের কেউ নন। অথচ ৪৯ লাশের ভার নিলেন তিনি। মুসলিমদের দিলেন নামাজে জানাজা, হিন্দুদের করলেন সৎকার।

করোনার এই দুর্যোগে নিহতের স্বজনদের কেউ এগিয়ে আসেননি। বরং মুখ লুকিয়েছে। বাবার লাশ ঘরের একরুমে আবদ্ধ রেখে খবর দিলেন কাউন্সিলরকে। প্রাণের ভয়ে স্বজনরা যেখানে এগিয়ে আসেননি। সেখানে মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে এগিয়ে এসেছেন এ জনপ্রতিনিধি। তার আরেকটা পরিচয় আছে, তিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি।

কাউন্সিলর খোরশেদের মহানুভবতায় মুগ্ধ নারায়ণগঞ্জের মানুষ। এ ক্রান্তিকালে তার জীবনবাজি রাখা সামাজিক কর্মকাণ্ডের খবর দেশে-বিদেশের মিডিয়ায় আলোচিত। নারায়ণগঞ্জের মানুষ তাকে উপাধি দিয়েছে ‘করোনা হিরো’। যেখানে বিপদ সেখানেই খোরশেদ। যেখানে লাশ সেখানেই তাকে দেয়া হয় খবর। কোনো কিছু চিন্তা না করে ছুটে যান তিনি। এ জন্য তিনি তৈরি করেছেন স্বেচ্ছাসেবী দল। তারা বিনামূল্যে দিচ্ছে মানুষের সেবা। গত ৮ এপ্রিল করোনা সাসপেক্ট আফতাব উদ্দিনের লাশের দাফন থেকে শুরু করে গতকাল বুধবার আমলাপাড়া এলাকার মৃত শাহীনের দাফনের মাধ্যমে ৪৯ লাশের দাফন ও সৎকার করেন খোরশেদ টিম।

নয়া দিগন্তকে খোরশেদ জানান, ২০ মে পর্যন্ত আমরা ৪৯ জনকে দাফন ও সৎকার করেছি। সম্ভবত করোনার নতুন রূপের শিকার হলেন আমলাপাড়া নিবাসী মো: শাহিন। তিনি গত চার দিন জ্বরে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার ১২টার দিকে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং অজ্ঞান হয়ে যান। পরিবারের লোকজন তাকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক জানান তিনি হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা গেছেন। পরিবারের আহ্বানে বুধবার সকাল ৯টায় আমরা শাহিন ভাইয়ের গোসল নামাজে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করেছি। গোসল করান আমাদের সহযোদ্ধা হাফেজ শিব্বির আহমেদ, নামাজে জানাজা পড়ান কবরস্থান মসজিদের ইমাম মাওলানা বদর শাহ। টিমে ছিলেন হিরা, হাফেজ শিব্বির, আনোয়ার, সুমন, রাফি, লিটন মিয়া।

জানা যায়, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গত ৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জে দু’জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার দিন থেকেই টিম খোরশেদ প্রত্যক্ষভাবে করোনা প্রতিরোধে কাজ শুরু করে। ৯ মার্চ ২০ হাজার লিফলেট ও মাস্ক নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে বিতরণ শুরু করেন ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। টিম লিডার খোরশেদ জুমার নামাজে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বক্তব্য রাখেন। সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলাকালীন ১৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনায় একজনের মৃত্যু ঘটে।

ফলে সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও করোনাভীতি ছড়িয়ে পড়লে বাজারে স্যানিটাইজারের চাহিদা বাড়ায় এক দিনেই সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় টিম খোরশেদ ১৯ মার্চ থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফর্মুলা অনুযায়ী স্যানিটাইজার বানানো শুরু করে। ২৮ মার্চ ৫০ এমএলের ৬০ হাজার বোতল স্যানিটাইজার ও ১০ হাজার বোতল ২৫০ এলএলের লিকুইড হ্যান্ড ওয়াস সোপ তৈরি ও বিতরণ করে।

এ সময় প্রায় ৮০টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি টিম খোরশেদের কাছ থেকে ফর্মুলা নিয়ে সারা জেলায় কমপক্ষে ৩ লাখ স্যানিটাইজার তৈরি করে বিতরণ করে। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে লাশের দাফন ও সৎকার নিয়ে অমানবিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেশীরা, এমনকি পরিবারের লোকজনও যখন লাশ সৎকার ও দাফনে অনীহা জানাতে শুরু করে তখন ৩০ মার্চ টিম খোরশেদ নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, নাসিক মেয়র ও সিভিল সার্জনের কাছে আবেদন করে তারা করোনায় মারা যাওয়াদের লাশ গোসল, জানাজা, দাফন ও সৎকার করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে। ৭ এপ্রিল টিম খোরশেদ নারায়ণগঞ্জে করোনা পরীক্ষার জন্য ল্যাব স্থাপনের আবেদন জানান।

৮ এপ্রিল প্রথম করোনা সাসপেক্ট আফতাবউদ্দিনের দাফনের মাধ্যমে শুরু করে ২০ মে পর্যন্ত ৪৯ জনকে দাফন ও সৎকার করেছেন। এর মধ্যে ১৬ জন কোভিড পজেটিভ, ১৯ জন সাসপেক্ট ও ৭ জন ছিল স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণকারীর লাশ দাফন ও সৎকার করে। গত ১৪ মে থেকে টিম খোরশেদ ও টাইম টু গিভের যৌথ উদ্যোগে করোনার শুরুতে চালু হওয়া ‘টিম খোরশেদ টেলি মেডিসিন’ সেবার একমাস পূর্ণ হয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল ৫ জন মানবিক চিকিৎসককে নিয়ে শুরু হওয়া টিমের সদস্য সংখ্যা এখন ১০ জন। গত ৩০ দিন মানবিক চিকিৎসকবৃন্দ বিনামূল্যে প্রায় ৬৫১৯ জনকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। এ ছাড়া ১০ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে সবজি বিতরণ, যারা সহায়তা নিতে চান না তাদের জন্য ২১ রমজান থেকে শুরু করে ২৮ রমজান পর্যন্ত প্রায় ১৭০০ প্যাকেট ঈদসামগ্রী ভতুর্কি মূল্যে বিক্রয় করার উদ্যোগ নেন তারা। এ ছাড়া অসহায় দরিদ্রদের জন্য সরকারি ত্রাণের সুষ্ঠু বিতরণের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাদ্যসমাগ্রী নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান কাউন্সিলর খোরশেদ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com