দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর পর বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে কথা বলেছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ঈদের দিন সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’র দোতলায় তাদের এই সাক্ষাৎ হয়। এসময় করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুরক্ষায় সবাইকে ঘরে থাকা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
উল্লেখ্য যে, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ৬ মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয় বিএনপি প্রধানকে। গত ২৫ মার্চ মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাড়ি ফিরোজায় ওঠেন খালেদা জিয়া; তারপর থেকে সেখানেই আছেন তিনি। এরপর থেকে গুলশানের ওই বাসায় ‘কোয়ারেন্টিনেই’ ছিলেন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। বাইরে থেকে শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা গিয়ে তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেওয়া ও চিকিৎসার বন্দোবস্ত দিচ্ছিলেন।
এর মধ্যে গত ১১ মে ওই বাসায় গিয়ে খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যান্য নেতাদের সেখানে যাওয়ার সুযোগ ছিল না বলে দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন। খালেদা জিয়া মুক্ত হওয়ার পর স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে এটাই তার প্রথম সাক্ষাৎ। ‘শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে’ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দলীয় প্রধানের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, এই চরম একটা সঙ্কটের সময়ে যখন আপনার সামাজিক দূরত্বকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, তার মধ্যেও উনি আমাদেরকে সময় দিয়েছেন। আমরা পুরোপুরি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে, আমাদের নেত্রীকে নিরাপদ রাখার জন্য আপনারা লক্ষ করেছেন যে, আমরা সবাই স্পেশাল পিপিই পরে, হাতে গ্লাভস নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছি।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শারীরিক অবস্থা আমি আগেও বলেছি, উনার কোনো উন্নতি হয়নি। উন্নতির মধ্যে যেটুকু হয়েছে আগে থেকে মানসিক অবস্থাটা তার অনেক ভালো হয়েছে, শারীরিক অবস্থার তার খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ সুরক্ষায় খালেদা জিয়ার পরামর্শ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদের মাধ্যমে উনি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এই যে মহাসংকট করোনাভাইরাস মহামারী সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোকাবিলা করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি ম্যাডাম আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশবাসীর প্রতিও তিনি আহ্বান জানিয়েছেন যে, বাড়িতে থাকুন, একটু কষ্ট করুন। বাড়িতে থেকেই এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে হবে-একথা তিনি বার বার বলেছেন। তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, জনগণ যেন ঘরে থাকে এবং এই মহামারীকে প্রতিরোধ করবার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে সমস্ত বিধান দিয়েছে তা যেন তারা মেনে চলে। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও বিএনপি নেতা-কর্মীরা দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করায় খালেদা জিয়া সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান তিনি। তিনি বার বার বলেছেন, এখন সাহস না হারিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।