ব্রিটেনে জাতিগত সংখ্যালঘু পরিবারের এক নারী অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন জীবনে সফল কিছু করে। আর ওই নারীর মতো হতে চায় অন্য নারীরা। এমন হতে কী করতে হবে – অভিভাবকদের এমন প্রশ্ন করে বড় হয়েছেন কিশোরী বয়সের এক মেয়ে। আর ওই মেয়ে যখন মাত্র এগার বছরের বালিকা তখন স্বপ্ন দেখত জীবনে সে একদিন আইনজীবী হবে। প্রায় ৩০ বছর পর ব্যারিস্টার হয়ে পূরণ হয়েছে ওই বালিকার স্বপ্ন। তার স্বপ্ন পূরণের সাথে হয়েছেন তিনি ব্রিটেনের প্রথম হিজাব পরিহিতা নারী জাজ। তিনি রাফিয়া আরশাদ।
৪০ বছর বয়স্ক পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত রাফিয়া আরশাদ তিন সন্তানের জননী। সম্প্রতি তিনি নিয়োগ পেয়েছেন ব্রিটেনের মিডল্যান্ড সার্কিটের ডেপুটি ডিসট্রিক্ট জাজ হিসেবে। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি খুশি এবং অন্যান্য মানুষের সাথে আমার সফলতা শেয়ার করতে পেরে বেশি আরো বেশি ভালো লাগছে। অনেক নারী ও পুরুষ আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে ই-মেইল করছে। অনেক নারী ই-মেইলে জানাচ্ছেন, তাদের ধারণা ছিলো হিজাব পরে ব্যারিস্টার হওয়া যাবে না, জাজ হওয়া তো প্রশ্নই উঠে না।
রাফিয়া আরশাদ জানান, ব্রিটেনের মতো উন্নত দেশের জাজ হতে পারবো জীবনে আমি কল্পনাও করিনি। আমার ইচ্ছা ছিলো ভালো আইনজীবী হওয়ার। তা হতে বেশ কয়েক বছর কাজও করে যাচ্ছিলাম। জাজ হতে পেরে পরম আনন্দ উপভোগ করছি বলে মনে করতে পারেন।
তিনি আরো জানান, আমার আজকের অর্জন আমার যোগ্যতার চেয়ে বেশি পাওয়া। আমি মনে করি প্রত্যেক নারীরই তাদের যোগ্যতাকে কাজে লাগানো দরকার। বিশেষ করে মুসলিম নারীদের।
ব্রিটেনের মতো দেশে হিজাব পড়ে সাফল্যের উচ্চ শিখরে পৌছতে পারবে এমনটা কখনো ভাবেননি রাফিয়া। তবে তার মনে ছিলো দৃঢ় আত্মবিশ্বাস। হিজাব নিয়ে জীবনের এমনই এক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন তিনি সাংবাদিকদের সাথে।
তিনি ২০০১ সালে বাস করতেন ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার এলাকায়। ওই সময় তিনি যখন ইনস অব কোর্ট স্কুল অব ’ল -এর স্কলারশিপের ইন্টারভিউ দিতে যান তখন তার পরিবারেরই এক সদস্য তাকে হিজাব না পরে ইন্টারভিউ দিতে পরামর্শ দেন। রাফিয়ার ওই স্বজন একইসাথে তাকে আরো বলেন, শুধু এই ইন্টারভিউ নয় জীবনে তোমার সফলতা ধীরে ধীরে কমে যাবে, যদি তুমি হিজাব পরিধান করো।
কিন্তু রাফিয়া তার পরামর্শ গ্রহণ করেননি। তিনি বলেন, আমি হিজাব পরেই ইন্টারভিউতে যাই। আমার বিশ্বাস ছিলো, আমি যেখানে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছিলাম তারা আমাকে যোগ্য মনে করলে অবশ্যই তারা আমাকে নিবে। আমি কি চাই সেটা মুখ্য বিষয় নয়। পরে আমি সফল হই, স্কলারশিপের জন্য মনোনীত করা হয় আমাকে। সেটা ছিলো আমার জীবনের প্রথম একটি অসামান্য সাফল্য।
পরে ২০০২ সালে রাফিয়া আরশাদ ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৪ সালে যোগ দেন সেন্ট মেরীস ফেমিলি ল চেম্বারে। গত ১৫ বছর যাবৎ তিনি কাজ করছেন প্রাইভেট ল চিলড্রেন, ফোর্সড মেরিজ, ফিমেল-জেনিটাল মিউটিলেশনের ওপর। এছাড়াও তিনি ইসলামিক আইনের যেকোনো বিষয়ে আইনগত সমস্যায় সমাধান দিয়ে থাকেন। রাফিয়া আরশাদ ইসলামিক পারিবারিক আইনের উপর বেশ কয়েকটি পাঠ্যবইও লিখেছেন।
ব্রিটেনের বহু সাংস্কৃতিক সমাজে বেড়ে উঠে রাফিয়া আরশাদ তার সমাজের জন্যও কাজ করতেন চান। বৈচিত্র্যপূর্ণ এই সমাজের দুঃখ বেদনা সমাজ পরিচালকদের কাছে উচ্চস্বরে ও স্পষ্টভাবে তিনি নিশ্চিতভাবে পৌছে দিতে কাজ করতে আগ্রহী তিনি। রাফিয়া আরো চান, ব্রিটেনের মুসলিম তরুণ-তরুণীরা ভালো কিছু করার ইচ্ছা থাকলে তারা তা অর্জন করতে পারবে, তারা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।