প্রশ্ন দিয়েই শুরু করি, বাস ভাড়া বাড়াবেন কেন? বেতন বাড়িয়েছেন? বহু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী গতমাসের বেতন এখনো পাননি। ঈদেও বোনাস হয়নি অনেক নামী-দামি সংস্থায়। চাকরি হারিয়েছেন কতজন, হিসেব করেছেন? ঈদে মার্কেট চালু হয়নি, এর একটা বড় কারণ শ্রমিকদের বেতন যাতে না দেওয়া লাগে। ত্রাণ-অনুদান-উপহারের অর্থ-খাবার পৌঁছায়নি গরিব-ভুখা-অভাবীর ঘরে। জীবন অথবা জীবিকা, এমন কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মধ্যবিত্ত সমাজে। এবার তাদেরই লুট হওয়া পকেটে ডাকাতির জন্য আকুপাকু করছেন? মালিক-শ্রমিকদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া বোঝা সাধারণের ওপর কেন চাপাবেন?
করোনা নয়, অসততা মূল সমস্যা। অর্থাৎ যা বলা হবে বাস্তবে তা করা হয় না। স্বাস্থ্যবিধির কথা যতই বলেন, মানা হবে না সিকিভাগও। একজন যাত্রীও বিশ্বাস করে না যে, বাসের আসনের অর্ধেকের বেশি আরোহী তোলা হবে না। আপনারা বলবেন, ইউরোপ-আমেরিকায় সীমিত পরিসরে গণপরিবণ চলছে। হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন, চলছে। কিন্তু একবারও তাদের যাত্রী সংখ্যা দেখেছেন। হাতে গোনা দু-চারজন নিয়েও সেকি ধোঁয়া মোছা। আর ওগুলো সত্যি সত্যিই গণপরিবহন। আর আমাদেরগুলো?
৩৬ সিটের গাড়িতে চাপাইয়া-চুপাইয়া ৪৪ সিট বসাইছেন। যেসব আরোহীর দৈহিক উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির উপরে, সিটের দুই সারির মাঝে তাদেও হাঁটু ভাজ হয় না। মনে হয়, রাস্তায় যাত্রী পরিবহণে অনুমতি পাওয়া সব গাড়িই স্কুলের কঁচিকাঁচাদের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। প্রাপ্ত বয়স্করা ভুল করে এসবে উঠেছেন। সিটে জমে থাকা ধুলা হাত দিয়ে ঝেড়ে দেখুন, ছাইয়ের গাদার মতো ময়লা উড়বে।
আর দ্বিতীয়বার যাত্রী তোলার আগে গাড়িকে স্যানিটাইজ করার কথা বলছেন? বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, এমনটা হবে আপনি (কর্তৃপক্ষ) বিশ্বাস করেন?
আচ্ছা, আরেকটা বিষয়। শ্রমিকরা কী করোনা ঝুঁকিমুক্ত? জীবাণুভর্তি টাকার নোট হাতে সারাদিন বেচারা মানুষগুলা একযাত্রী থেকে আরেক যাত্রী করবেন…. দিন শেষে তাদেও স্ত্রী-সন্তান নাই? অভাবী আর খেটে খাওয়া মানুষগুলোর ন্যায্য পাওনার কথা না বলে তাদেরকেই ব্যবহার করা হচ্ছে শ্রমদাস হিসেবে! তাদের পেটের ক্ষুধা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মৃত্যুঝুঁকি তারা ভুলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
হ্যাঁ, শতভাগ সত্য যে, শ্রমিক-মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আচ্ছা, ৭০ লাখ শ্রমিকের চাঁদায় গড়ে ওঠা কোটি কোটি টাকার কল্যাণ তহবিল কই? দুদক কী আর্থিক হিসেবে চেয়ে নেতাদের তলব করেছে?
৮০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব করে শেষে ৬০ ভাগ করেছে যে কর্তৃপক্ষ, তার নাম বিআরটিএ। তাদের প্রসঙ্গে কিছু অতীত চর্চা করি। তারাইতো ঘোষণা দিয়েছিল, সিটিং সার্ভিস নামে কিছুই নেই। সাধারণ বা লোকাল ভাড়ায় চলবে গণপরিবহন। মনে আছে? ‘বন্ধ হল সিটিংয়ের নামে চিটিং সার্ভিস’ শিরোনাম হয়েছিল সংবাদ মাধ্যমে?
কিন্তু দু-চার দিনের মাথায় আবারও ’আপাত সিটিং’ বহাল রেখে ’শক্তিশালী’ কমিটি করে ভাড়া পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছিল। কয়েক মাসের মধ্যেই প্রতিবেদন দেওয়ার কথাও উল্লেখ ছিল ঘোষণায়। তারপর যা হওয়ার তাই। সে কথা এ দেশের মানুষকে আর বলে দিতে হয় না।
নির্বাচনী প্রচারের সময় সব মেয়রপ্রার্থীই তো বলেছিলেন, সাইকেলের জন্য আলাদা লেন হবে ঢাকা মহানগরীতে। সেসময় বাই-সাইকেলে চড়ে ক্যামেরায় পোজ দেওয়া প্রার্থীদের ছবিও প্রকাশ হয়েছে খবরের কাগজে। একের পর এক তাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন দায়িত্বে আসছেন যারা, তাদের প্রতিও প্রত্যাশার চোখে তাকিয়ে আছে নগরবাসীর একটা বড় অংশ।
এখনতো জীবন-মরণ সংকট। দুর্ঘটনার ভয়ে যারা বাইসাইকেলে অফিস যাতায়াত করা থেকে বিরত আছেন, তাদের জন্য আলাদা লেনটা করে দেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকবে। বাসে চাপ কমবে। বড় কথা কমিটমেন্ট ভুলে যাওয়ার সংস্কৃতি থেকে যদি একটু সরে আসতেন… অন্তত এই সংকটে।
ভালোই-ভালো জনগণের হৃদয়ের অনুভূতিকে আমলে নেন মাননীয় কর্তৃপক্ষ। আপনাদের সীমাবদ্ধতাকে মানুষ ক্ষমা করবে। যদি আপনাদের আন্তরিক চেষ্টা সম্পর্কে মানুষ নিশ্চিত হয়। যদি না পারেন, অপারগতা প্রকাশ করে চার্টার বিমানে মহাশূন্যে চলে যান।
অনেক তো হয়েছে। করোনা কর্তৃপক্ষগুলোর বাগাম্বারিতায় গড়া ভাবমূর্তিকে একেবারে উলগ্ন করে দিয়েছে। এবার গণমানুষের বাঁচার লড়াইটাকে জারি রাখতে দিন।
জাহিদুর রহমান : সংবাদকর্মী