শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫২ পূর্বাহ্ন

উন্নয়ন প্রকল্পে লুটপাট

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৬ জুন, ২০২০
  • ২৫৭ বার

উন্নয়ন প্রকল্পে কেনাকাটার মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থ লুটপাট চলছে। প্রকল্পের জন্য কেনা পণ্যের দামের সাথে বাজার দরের আকাশপাতাল ফারাক। এভাবে আকাশচুম্বি মূল্য দিয়ে লুটপাট করা হচ্ছে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ। যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাবনায় প্রতিটি লিফটের দাম প্রায় ২ কোটি টাকা, এসির দাম ৫২ লাখ টাকা, সিকিউরিটি ও গেট লাইট প্রতিটি সাড়ে ১২ লাখ টাকা ও সভা কক্ষের টেবিল ১২ লাখ টাকা দাম ধরা হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এ ধরনের অবাস্তব দামের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। এর আগে হাসপাতাল ও রূপপুর প্রকল্পে এমন আজগুবি দামে পণ্য কেনার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের দৃষ্টান্তও দেশবাসীর সামনে আছে।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, দেশের সাতটি জেলায় সাতটি যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে আগামী তিন বছরে। যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। বরিশালের বাকেরগঞ্জে, ফেনীর ফুলগাজী, যশোর সদরে, ময়মনসিংহের সদর, বগুড়া সদর, রংপুর সদর এবং রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এসব কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। যুবসমাজের উন্নয়ন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আধুনিক সুবিধাসংবলিত পরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ করাই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

প্রেক্ষাপটে জানা যায়, যুব উন্নয়ন অধিদফতরের আওতায় দেশের ৫৩টি জেলায় ৫৩টি আবাসিক যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রের মধ্যে ৪৭টির বহুতল একাডেমি কাম অফিস ভবন, প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য পুরুষ ও মহিলা হোস্টেল, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাসস্থানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো রয়েছে। কিন্তু নতুন এই প্রকল্প এলাকার সাতটি কেন্দ্রে আধাপাকা অবকাঠামো রয়েছে, যা বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এতে দাফতরিকসহ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, এসব কেন্দ্রের জন্য ২১টি প্যাসেঞ্জার লিফট কেনা হবে। যার প্রতিটির মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। বিডি স্টারের ওয়েব সাইটের তথ্যানুযায়ী, যেখানে তুরস্কের সাড়ে ৮ শ’ কেজির ১০ জন প্যাসেঞ্জারের এলিভেটর লিফটের দাম সাড়ে ২৪ লাখ টাকা, সাড়ে ৪ শ’ কেজির দাম সাড়ে ২২ লাখ টাকা, এক হাজার কেজির কেবিন ডোর লিফটের দাম সাড়ে ২৫ লাখ টাকা, ফুজিএক্সডি এফসিজেও মডেলের এক হাজার কেজির দাম ১৪ লাখ টাকা। আর চীনের তৈরি জয়লাইভ এক হাজার কেজির আবাসিক ভবনের লিফটের দাম সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ডলার বা ১২ লাখ টাকা। চীনের সিক্সার এলিভেটর জিআরপিএস-২০ মডেলের সর্বোচ্চ দাম ৩০ হাজার ডলার বা সাড়ে ২৫ লাখ টাকা। এখানে সাতটি কেন্দ্রের জন্য ২১টি প্যাসেঞ্জার লিফট কেনার জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

অন্য দিকে এই প্রকল্পে বিভিন্ন কেন্দ্রের জন্য প্রতিটি ৫২ লাখ টাকা দরে ৫০ টন এসি কেনা হবে। সিকিউরিটি ও গেট লাইট প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে সাড়ে ১২ লাখ টাকা। পিএবিএক্স ব্যবস্থার দাম প্রতিটি ধরা হয়েছে প্রতিটি ১৫ লাখ টাকা, লাইটনিং এরেস্টার বা আর্থিং প্রতিটি সাড়ে ১৭ লাখ টাকা, প্রতিটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক খরচ ১০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।

এ ছাড়া সিসি ক্যামেরা ৩০ হাজার টাকা, আইপিএস ৬০ হাজার টাকা, ইনকিউবেটর ৮০ হাজার টাকা, খাঁচা ৪০ হাজার টাকা, ফুল সাচিবিক টেবিল প্রতিটি ৮০ হাজার টাকা, হাফ সাচিবিক টেবিল প্রতিটি ৫০ হাজার টাকা, রিভলভিং চেয়ার প্রতিটি ২০ হাজার টাকা, হাতলসহ কুশন চেয়ার ১২ হাজার টাকা, ঘাসকাটার মেশিন ৩০ হাজার টাকা মূল্য ধরা হয়ছে। এ ছাড়া একটি গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণেই খরচ ধরা হয়েছে ছয় লাখ টাকা। আর নির্মিত ভবন উদ্বোধনে ব্যয় হবে ২১ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, সম্প্রতি একটি প্রকল্পের আওতায় ১১টি জেলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস খালি পড়ে আছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে ২-৩ ঘণ্টার ট্রেনিংয়ের জন্য প্রশিক্ষণার্থীরা ছাত্রাবাসে থাকতে আগ্রহী না। তাই প্রকল্প থেকে ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস বাদ দেয়া প্রয়োজন। এসবে শুধুই অর্থ অপচয় হবে।

কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, এখানে অনেক পণ্যের মূল্য অতিমাত্রায় ধরা হয়েছে, যা বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ। প্রতিবেদনে সুপারিশ নেই। প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে একটি কেন্দ্রে একাডেমি কাম অফিস ভবন নির্মাণ করা হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে প্রকল্পের সাতটি কেন্দ্রেই একাডেমি কাম অফিস ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের সব ক্রয়পদ্ধতি উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে উল্লেখ করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা হলো, শুধু আসবাবপত্র বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন থেকে ডিপিএম তথা সরাসরি সংগ্রহ করতে হবে।

এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, এসব ব্যয় প্রস্তাব অসৎ লোকদের দ্বারা করা হয়। প্রকল্প তৈরির ক্ষেত্রে কিছু লোকের অসততা কাজ করে। তারা এসব ইচ্ছাকৃতভাবে করে। যদি কোনো ফাকে পাস হয়ে যায় তাহলে তাদের ভাগ্য খুলবে। তবে পিইসি আমার কাছে, এসব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আমি দেখব।

তিনি বলেন, একটা লিফটের দাম কোনোভাবেই প্রায় ২ কোটি টাকা হতে পারে না। মূল দাম সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা হতে পারে। তার সাথে ভ্যাটসহ অন্যান্য চার্জ থাকলে সেটাসহ আরো কিছু বেশি হতে পারে। আর এসি কিভাবে ৫২ লাখ টাকা ধরা হয়? এটা ৫২ হাজার টাকার বেশি হবে না। তিনি বলেন, আমরা সব সময় বলি প্রাক্কলনের সময় ইন্টারনেট থেকে কোম্পানি ও মডেলসহ পণ্যের নাম যুক্ত করতে হবে। কিছু অসৎ লোকের কারণে এসব হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com