শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন

নকল নমুনা ফরমে এক দিনেই রিপোর্ট নিচ্ছে জালিয়াত চক্র

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২২ জুন, ২০২০
  • ২০৯ বার

চট্টগ্রাম বন্দরে টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের শিপ প্ল্যানার ফিলিপাইনের নাগরিক রুয়েল ইসত্রেলা কাতান। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর গত ৩ জুন করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছিলেন। শুক্রবার রাতে মারা যান বিদেশের এই নাগরিক। গতকাল রবিবার পর্যন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রামে নমুনা দিতেই দুই থেকে তিনদিন লেগে যাচ্ছে। ততদিনে রোগীরা সুস্থ হচ্ছেন অথবা মারা যাচ্ছেন। এই ভোগান্তির কারণে নমুনা দিতে গিয়ে লাইন থেকে ফিরে এসেছেন অনেকে।

বন্দরনগরীতে করোনা পরীক্ষার ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে ঘরে বসেই একদিনে রিপোর্ট পেয়ে যাচ্ছেন ৪ থেকে ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে। বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে এসব ফল যোগ হচ্ছে না সরকারি হিসাবে। চমেক হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ল্যাব এবং বাইরের একটি সংঘবদ্ধ চক্র জালিয়াতির মাধ্যমে এমন কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে এলে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে চমেক হাসপাতালের করোনা মোকাবিলায় গঠিত কোর কমিটি। সতর্ক করা হয়েছে ল্যাব সংশ্লিষ্টদের।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নমুনা সংগ্রহকারী ও ল্যাবের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে গড়ে ওঠা চক্রের সদস্যরা নমুনা সংগ্রহের ফরম জালিয়াতি করে বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছেন। একই সঙ্গে হাতে-হাতে এসব নমুনা পরীক্ষাগার থেকে পরীক্ষা করে একইদিনে রিপোর্ট নিয়ে দিচ্ছেন। সূত্র জানায়, করোনা পরীক্ষার জন্য বাইরের চক্রের সদস্যরা রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তার পর হাসপাতালের নমুনা সংগ্রহকারীকে জানানো হয়। তারা নকল ফরম নিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে একই চক্রের সদস্যের মাধ্যমে পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকা নমুনার ফাইলে ঢুকিয়ে দেন। এতে দিনে দিনেই রিপোর্ট পাওয়া যায়। অন্যদিকে ২০ থেকে ২৫ দিনেও রিপোর্ট পাওয়া যায়নি-এমন নজির আছে শত শত।

এদিকে জালিয়াতচক্রের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা চিহ্নিত করতে কাজ শুরু করেছে হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চমেক হাসপাতালের নমুনা সংগ্রহের ফরম হুবহু নকল করেছে চক্রটি। এতে ধারণা করা হয়, কলেজ ও হাসপাতালের কর্মীরাও এর সঙ্গে জড়িত। এমন একাধিক নকল ফরম পাওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলামের ধারণা-বাইরের কিছু পরিচিত লোক হাসপাতালের নমুনা সংগ্রহকারী ও ল্যাবের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জালিয়াতির কাজ করছে। জড়িতদের চিহ্নিত করতে চমেক হাসপাতালের করোনা মোকাবিলা সংক্রান্ত কোর কমিটি বিষয়টি তদন্ত করছে। কলেজ ও ল্যাব কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া চমেক হাসপাতালের নির্দিষ্ট ডাক্তারের সিল ও স্বাক্ষর ছাড়া কোনো ফরম গ্রহণ না করতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শামীম হাসান আমাদের সময়কে বলেন, বিষয়টি আমাদের জানানোর পর ল্যাব সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে। এ ধরনের কাজে কে বা কারা জড়িত তা চিহ্নিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। করোনাকালে এ ধরনের গর্হিত কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চমেক অধ্যক্ষ নমুনা ফরম নকলের বিষয়টি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে বললেও ল্যাব ইনচার্জ এহসানুল হক কাজল বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, আমাদের বেসরকারি ক্লিনিকের কোনো নমুনা সরাসরি গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। হাসপাতালের মাধ্যমে এলে সেগুলো নিতে বলেছেন। জালিয়াত সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com