দলীয় গঠনতন্ত্র ও করোনাকালীন সাংগঠনিক বিধিনিষেধ এবং মানবিক দিক অমান্য করার মধ্য দিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই ভাঙছে বিএনপি। এ নিয়ে দলটির সিনিয়র নেতারা বেশ অস্বস্তিতে রয়েছেন। কারণ করোনা মহামারীর কারণে ২৫ জুন (আজ) পর্যন্ত দলের কমিটি গঠন ও পুনর্গঠনসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। কিন্তু দলের গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে তড়িঘড়ি করে কোনো আলোচনা ছাড়াই গত ২২ জুন ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে। মহানগরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা তাদের (সিনিয়র নেতাদের) এ নিয়ে প্রশ্ন করলে দুঃখপ্রকাশ করা ছাড়া কোনো উত্তরও দিতে পারছেন না তারা। সিনিয়র নেতাদের জন্য এ বিষয়টি বেশ বিব্রতকরও। মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি বজলুল বাছিত আঞ্জু আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের গঠনতন্ত্রে আছে, সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে প্রথম যুগ্ম সম্পাদক দায়িত্বপালন করবে।’
জানতে চাইলে উত্তরের প্রথম যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের গঠনতন্ত্রে পরিষ্কার বলা আছে, সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে প্রথম যুগ্ম সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপালন করবে। প্রথম যুগ্ম সম্পাদক অপারগতা প্রকাশ করলে পরবর্তী যুগ্ম সম্পাদক দায়িত্বপালন করবে। সেটিও যদি না হয় অন্য চয়েস আপনি দিতে পারবেন। দলের ইতিহাসে এমনভাবে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন হয়নি। শুধু আমার বেলায় হলো।’
গত ৭ জুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ হাসানের মৃত্যু হলে পদটি শূন্য হয়। তার স্থলে গত ২২ জুন উত্তরের সহসভাপতি আবদুল আলীম নকিকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেয় বিএনপি। এ অবস্থায় মহানগর উত্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মী ও পরিবার ৪০ দিনের শোকের মাতমও পারও করতে পারেনি। এ অবস্থাকে মহানগর নেতারা, দলের কোনো পক্ষের চর দখলের মতো ‘পদ দখল’র সঙ্গে তুলনা করেছেন। এ বিষয়ে সদ্য ঘোষিত ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম নকি আমাদের সময়কে বলেন, গণতন্ত্রের অনেক ধারা আছে, সেই ধারার ক্ষমতাবলে (চেয়ারপারসন) ইচ্ছে করলে যে কাউকে প্রয়োজন অনুযায়ী দায়িত্ব দিতে পারেন। আমাকে ওপর থেকে (সহসভাপতি) থেকে নিচের পদে দিয়েছেন (ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক)। এ নিয়ে তো প্রশ্ন ওঠার কথা নয়। আমাকে তো উত্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে গত কয়েক দিনে মহানগরের ক্ষুব্ধ নেতারা এ নিয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বরচন্দ্র রায় ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করে সঠিক ঘটনা জানার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এসব সিনিয়র নেতা মহানগর নেতাদের জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তারাও কিছুই জানেন না। বিষয়টি নিয়ে তারা বেশ বিব্রত।
উত্তরের সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন আমাদের সময়কে বলেন, একজন সাধারণ সম্পাদক মারা যাওয়ার ৪০ দিনও পার হলো না এমনকি ঘটল এমন সিদ্ধান্ত দিতে হলো? এটি কি পদ দখল হলো? এত তড়িঘড়ি কেন? চলমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে কোনো রাজনীতি অর্র্থাৎ কোনো আন্দোলন সংগ্রামও নেই। ১২ বছর ধরে দল ক্ষমতার বাইরে, এখনো যদি আমরা ঠিক না হই কবে ঠিক হতে পারব? ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ঘোষণার আগে কোনো আলোচনাও হয়নি। আলোচনা হলেও জানতে পারতাম কেন একজন সহসভাপতিকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হলো। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। আমরা তো পূর্ণাঙ্গ সাধারণ সম্পাদকও বানাতে পারতাম।
মহানগর উত্তরের অপর সহসভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, মালয়েশিয়ায় অবস্থান করা মহানগর উত্তরের সভাপতি এমএ কাইয়ুমকে রাখতে গিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে করে কি সংগঠন থাকবে? এভাবে চললে থাকবে না। মহানগর উত্তরের সবাই এখন ক্ষুব্ধ। এক সময় আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি, এখন সবাই করবে। আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার প্রথম যুগ্ম সম্পাদক, তার দায়িত্ব পাওয়ার কথা। সে কি এখন মানবে?
আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার বলেন, এ ব্যাপারে গত ২২ জুন রাতে আমি মহাসচিব স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তিনি (মহাসচিব) আমাকে বলেছেন, ‘আনোয়ার সাহেব এ বিষয়টি আমার নলেজে নেই, আমি জানিও না। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম এ কারণে যে, আমাদের মহানগর কমিটি অনুমোদন দেন মহাসচিব।
এ ছাড়া করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে আমাদের পুনর্গঠন কার্যক্রম ২৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত আছে। দুটি সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেন তড়িঘড়ি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো? এটি গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করার আগের দিনও সভাপতি কাইয়ুম সাহেবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন হাসান ভাইয়ের মৃত্যুর ৪০ দিন পার হোক। আমার দাবি হচ্ছে, গঠনতন্ত্র মোতাবেক আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হোক। আমি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখব। এর পর সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।