মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৭ পূর্বাহ্ন

কে এই খুনি হাসপিল, কীভাবে পরিচয় ফাহিমের সঙ্গে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৯ জুলাই, ২০২০
  • ২২৯ বার

রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহর এক লাখ ডলার চুরি করেও ক্ষমা পেয়েছিলেন তার ব্যক্তিগত সহকারী টেরেস ডেভোন হাসপিল। অথচ তিনিই ফাহিমকে খুন করেছেন বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ (এনওয়াইপিডি)।

গতকাল শুক্রবার এনওয়াইপিডি’র গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান রডনি হ্যারিসন এ ধারণার কথা জানিয়ে বলেন, ‘এক কথায়, অন্য কেউ এ ঘটনায় জড়িত কি না তার কোনো তথ্য প্রমাণ নেই। আর যেহেতু সিসিটিভি ফুটেজে টেরেস ডেভোন হাসপিলকে দেখা গেছে, আমরা তাকে প্রাথমিকভাবে খুনি হিসেবে ধরে নিয়েছি।’

আজ শনিবার টেরেস ডেভোন হাসপিলকে নিউইয়র্কের আদালতে তোলা হয়। তার বিরুদ্ধে ‘সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডারে’র অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

কে এই টেরেস ডেভোন হাসপিল

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো বলছে, টেরেস ডেভোন হাসপিল নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি লং আইসল্যান্ড হাইস্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন বলে জানিয়েছেন। তবে ডেইলি নিউজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে পারেননি তিনি।

কীভাবে ফাহিমের সঙ্গে পরিচয়

ফাহিমের সঙ্গে তিনি কাজ করার সুযোগ পান একটি প্রতিযোগিতা থেকে। ২০০৯ সালে প্র্যাঙ্ক ডায়াল নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন ফাহিম। সেটিতে কাজ করার জন্য ওয়েব ডিজাইনের প্রতিযোগিতা হয়। সেটিতে টিকে গিয়ে ফাহিমের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান। হাসপিলকে অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিতে চিফ অব স্টাফ হিসেবেও যোগ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি ফাহিমের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি।

তবে পুলিশ বলছে, হাসপিল প্রতারক স্বভাবের ব্যক্তি। তিনি ফাহিমের ১ লাখ ডলার চুরি করেছেন। তবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ওই ব্যক্তি হাসপিলের কাছ থেকে আরও কিছু অর্থ পেতেন। গোয়েন্দা প্রধান রডনি হ্যারিসন বলেন, ‘চুরি করা অর্থের পাশাপাশি হাসপিল আরও বড় অঙ্কের অর্থ ভুক্তভোগী থেকে ধার নিয়েছিলেন বলে আমরা ধারণা করছি।’

গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে নিজের বিলাশবহুল ফ্লাটে খুন হন ফাহিম। পরদিন (মঙ্গলবার) ফের তার ঘরে গিয়ে লাশ গুমের চেষ্টা করেন হাসপিল। কিন্তু ফাহিমের বোন চলে আসায় তা আর করতে পারেননি তিনি।

আদালতে কী হয়েছে

নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় ১৭ জুলাই মধ্যরাতের কিছু পরে টেরেস ডেভোন হাসপিলকে ম্যানহাটনের ফেডারেল আদালতে হাজির করা হয়। ভার্চ্যুয়াল শুনানিতে তাকে আদালতে উপস্থাপন করেন ম্যানহাটনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি লিন্ডা ফোর্ড। আদালতকে তিনি বলেন, হোমডিপো নামে একটি দোকান থেকে ফাহিমকে হত্যায় একটি ইলেকট্রিক করাত কেনেন হাসপিল। এ ছাড়া ফাহিম সালেহর অ্যাপার্টমেন্টে ধোয়ামোছার সরঞ্জামাদি পাওয়া গেছে। সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যাওয়া সন্দেহভাজন খুনির পোশাক টাইরেস হ্যাসপিলের ব্রুকলিনের বাড়িতে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া নিউইয়র্ক পুলিশের তদন্ত দল হ্যাসপিলকে প্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করতে পেরেছে। ফাহিম সালেহর হত্যার সঙ্গে হাসপিলের জড়িত থাকার জোরাল প্রমাণ আছে। অন্তত দুজন শনাক্তকারী অপরাধ সংঘটনের আগে ও পরের সার্ভিল্যান্স ভিডিও থেকে তাকে শনাক্ত করেছেন।

লিন্ডা ফোর্ড আদালতকে আরও বলেন, টাইরেস হাসপিল তরুণ প্রযুক্তিবিদ ফাহিম সালেহর অন্তত ১ লাখ মার্কিন ডলার চুরি করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে পুলিশ বা আইনি আশ্রয়ে না গিয়ে ফাহিম তাকে কিস্তিতে অর্থ ফেরত দেওয়ার সুবিধা করে দিয়েছেন। আমরা নিশ্চিত নই, তবে ধারণা করা হচ্ছে, অর্থের লেনদেন এবং ব্যক্তিগত বিষয়ই এই হত্যাকাণ্ডের কারণ। হ্যাসপিল কোনো অর্থ ফেরত দিয়েছেন কিনা, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অর্থ ফেরত না দিতে চেয়ে পুলিশে রিপোর্ট হওয়ার ভয়ে হাসপিল খুন করেছেন কিনা তাও  খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আদালতের বিচারক জোনাথন সভেটকি জামিনের সুবিধা ছাড়াই হাসপিলকে আটক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মাত্রার খুনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাতে করে হাসপিল ১৫ থেকে পঁচির বছরের কারাদণ্ডের সাজা পেতে পারেন। আগামী ১৭ আগস্ট তাকে আবার আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com