আগামী ৪ আগস্ট মিশিগান স্টেটের প্রাইমারী নির্বাচন। রাজ্য জুড়ে নির্বাচনী উত্তাপ। শুরু হয়েছে ভোটের দিন ক্ষণগণনা। ভোটযুদ্ধে মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরা। এবারের নির্বাচনে চারজন বাংলাদেশি-আমেরিকান প্রার্থী হয়েছেন।
প্রয়োজনীয় জনমত সংগ্রহের কাজ করছেন তারা। নির্বাচনে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে কমিশনার পদে কামরুল হাসান, হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ পদে সাহাব আহমেদ (সুমিন), ওয়ারেন-ম্যাকম্ব আসনে প্রিসিংন্ট ডেলিগ্যাট পদে খাজা শাহাব আহমদ এবং হ্যামট্রাম্যাক সিটিতে প্রিসিংন্ট ডেলিগেট পদে মিনহাজ রাসেল চৌধুরী মাঠে নেমেছেন।
কামরুল হাসান
মিশিগান স্টেটে ওয়েইন কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট-৩ থেকে কমিশনার পদে প্রার্থী হতে নির্বাচন করছেন বাংলাদেশি-আমেরিকান মোহাম্মদ কামরুল হাসান। তিনি হ্যামট্রাম্যাক সিটির বর্তমান কাউন্সিলম্যান। তিনবার তিনি এই পদে জয়ী হয়েছেন। এবারে ভোটারদের মূল্যবান ভোটের প্রত্যাশা করে, গত কয়েক মাস ধরে চষে বেড়াচ্ছেন তার নির্বাচনী এলাকায়। তিনি দিন রাত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।
কামরুল হাসান বলেন, ‘ভালো চাকরি করেও এখন পর্যন্ত পুরোনো ও ছোট বাসায় থাকি। এখনো পেইড অফ করতে পারিনি, মর্টগেজ দিতে হয়। হ্যামট্রাম্যাককে ভালোবেসে এখনো এই সিটিতেই আছি। রাজনীতি আমাকে নিঃস্ব করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ভোটের মাধ্যমে একজন ভোটার তার এলাকার কিংবা দেশের জন্য যোগ্য দায়িত্বশীল বা প্রতিনিধি নির্বাচিত করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি-আমেরিকানরা এক হয়ে তাদের একজন দায়িত্বশীল প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন এটা আমার বিশ্বাস।’
কামরুল হাসান আরও বলেন, ‘এখন অনেকেই রাজনীতিতে আসেন অর্থ কামানোর ধান্দায়। আমার সে চিন্তা আগেও ছিল না, এখনো নাই, শুধু এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে চাই, মানুষের জন্য কাজ করতে চাই, আইনশৃঙ্খলা, রাস্তাঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইত্যাদির উন্নয়ন ও সংস্কার প্রয়োজন। তাই আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে আপনাদের অধিকার আদায় করুন।’
‘মিশিগানের হ্যামট্রাম্যাক ও ডেট্রয়েট সিটিতে সব থেকে বেশি বাংলাদেশি আমেরিকানরা বসবাস করেন, আমি মনে করি, আমাদের বাংলাদেশি ভোটাররা যদি সার্বিক সহযোগিতা করেন, যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে সঠিক সময়ে এবং ঠিকমত ভোট দেন তাহলে আমাদের বিজয় হবে’ যোগ করেন কামরুল হাসান। এ কারণে দলীয় প্রার্থী হিসেবে তাকে মনোনীত করার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সাহাব আহমেদ
আমেরিকার মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ পদে নির্বাচনে ডিস্ট্রিক্ট-৪ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশি আমেরিকান সাহাব আহমেদ (সুমিন)। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার দাউদপুর তুরুকখলায় জন্ম নেওয়া সাহাব আহমেদ অল্প বয়সে পরিবারের সঙ্গে আমেরিকায় আসেন। নিজের কর্মজীবন গড়ে তোলার পাশাপাশি নিজেকে রাজনীতিতে জড়িয়ে হয়ে উঠেছেন এক আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত রেখেছেন সবসময়। মিশিগান রাজ্যের হ্যামট্রাম্যাক শহরে বিভিন্ন সময়ে আগত উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন ও মাল্টি-কালচারাল কো-অর্ডিনেটর হিসেবে তিনি বিভিন্ন জাতিসত্তার মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করেছেন।
১৯৯৯ সালে হ্যামট্রাম্যাক শহরের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে বাঙালি আমেরিকান ও আরব আমেরিকানদের নাগরিক ও ভোটাধিকার সংরক্ষণে তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়। যার ফলশ্রুতিতে আজকের হ্যামট্রাম্যাকের অধিবাসীরা আরও সুরক্ষিত নাগরিক অধিকার ভোগ করছে।
আমেরিকার ইতিহাসে সর্বপ্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০০৩ সালে সাহাব আহমদ হ্যামট্রাম্যাক সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত হন। পরবর্তী আট বছর তিনি এই পদে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। ২০০৬ সালে আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত বাংলাদেশি হিসেবে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটসের পক্ষ থেকে তৎকালে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাসের আমন্ত্রণে হোমটাউন ডিপ্লোম্যাট হিসেবে সাহাব আহমেদ বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। এই সময় আমেরিকান সেন্টার আয়োজিত তার জন্মভূমি সিলেটসহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে সাহাব আহমেদ বক্তৃতা করেন, যা বাংলাদেশের সেই সময়ের প্রায় সব প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়েছিল।
আমেরিকার ইতিহাসে সর্বপ্রথম লাউড স্পিকারে আজান দেওয়ার অনুমতি আদায় করা হ্যামট্রাম্যাক সিটির কোনান্ট অ্যাভিনিউ নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার নামকরণ ‘বাংলাদেশ অ্যাভিনিউ’ করা; স্থানীয় জনগণ বিশেষ করে সংখ্যালঘু ইমিগ্রান্টদের সামাজিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো ছিল তার অর্জনগুলোর অন্যতম।
নিজের কমিউনিটি ও ইমিগ্রান্টদের জন্য আরও শক্তিশালী এবং গঠনমূলক কিছু করার ইচ্ছায় সাহাব আহমেদ আগামী ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ পদে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে স্টেট কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্ব করতে চান। নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হবেন বলে অনেকেই আশাবাদী।
খাজা শাহাব আহমদ
বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি থেকে বেড়ে উঠা, সিলেটের এম সি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে শুরু করে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের রাজপথ কাপানো এবং মেধাবী ছাত্র নেতা সময়ের সাহসী যোদ্ধা, মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার, ব্যক্তি হিসাবে অত্যন্ত বিনয়ী, দানশীল, শিক্ষানুরাগী এবং পরোপকারী। যার নেশা-বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সিলেট জেলার কানাইঘাট থানার খাজা বাড়ির কৃতি সন্তান সাবেক নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটি ছাত্র সংসদের (সিনেটর) সাংসদ খাজা শাহাব আহমদ আগামী ৪ আগস্ট ২০২০ সালের নির্বাচনে আমেরিকার মিশিগান স্টেট, ম্যাকম্ব-কাউন্টির-কাউন্টি ডেলিগ্যাট পদে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এবং আগামী ৩রা নভেম্বর ২০২০ সালের আমেরিকার জাতীয় নির্বাচনে Fitzgerald School District বোর্ডের (ছয় বছর মেয়াদী) নির্বাচনে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে লড়ছেন। তিনি সকলের ভোট এবং দোয়া প্রার্থী।
খাজা শাহাব আহমদ, ওয়ারেন সিটির প্রথম বাংলাদেশি প্যানেল কাউন্সিলর, প্রথম ওয়ারেন সিটি ডেমোক্রেটিক পার্টির অফিসিয়্যাল ডাইভার্সিটি চেয়ারম্যান, মিশিগান স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ লরি স্টোনের কমিউনিটি আউট-রিচ ডিরেক্টর, মিশিগান-বি,এ,ডি.সি. (মিশিগান-বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ককাসের) ষ্ট্যানডিং কমিটির চেয়ারম্যান। BAM (বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব মিশিগানের) এক্সিকিউটিভ মেম্বার। চেয়ারম্যান ফর খাজা ট্রাস্ট, মেম্বারর্স ফর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আমেরিকান লায়ন্স, রেড-ক্রস।
বর্তমানে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। যাচ্ছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি, দোয়া চাইছেন এবং সকলকে উৎসাহিত করছেন ভোট প্রদানের জন্য, তিনি জানান ভোট আমাদের জাতীয় অধিকার একথা উল্লেখ করে তিনি আসছে নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
মিনহাজ রাসেল চৌধুরী
মিশিগান ডেমোক্রেটিক পার্টির ১৪ তম কংগ্রেস ডিস্টিকের ভাইস চেয়ার এবং যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের কার্যকরী সদস্য মিনহাজ রাসেল চৌধুরী মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হ্যামটরমিক সিটির ৫ নং প্রিসিংন্টের ডেলিগেট হিসাবে আগস্টের ৪ তারিখ নির্বাচন করছেন।
উল্লেখ্য, মিনহাজ রাসেল চৌধুরী ৭ম দেশীয় এসায়েন্স আব লেবার আসালের মিশিগান চ্যাপ্টারের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডন্ট। মিনহাজ রাসেল চৌধুরী আগস্টের ৪ তারিখের নির্বাচনে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি নির্বাচনে তাকে জয়লাভ করার জন্য বাংলাদেশি ভোটারদের কাছে ভোট চাচ্ছেন এবং ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সকলকে ভোট প্রদানে উৎসাহিত করছেন ।
মিনহাজ চৌধুরী বলেন, ‘ভোট আমাদের জাতীয় অধিকার। ভোট দিন যোগ্য প্রার্থীদেরকে। আমাদের বাংলাদেশি অন্যান্য প্রার্থী অন্যান্য আসনে নির্বাচন করছেন। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের বাংলাদেশি ক্যান্ডিডেটদের নির্বাচিত করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা মনে রাখবেন ভোট যেমন নাগরিক ও নৈতিক দায়িত্ব, তেমনি আসুন আমরা আদমশুমারিতে সকলকে গণনায় সহায়তা করি। এখনই সময় আমাদের সিভিক দায়িত্ববোধকে যথাযথভাবে পালন করা, তিনি সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী।’