সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো বটেই! বাংলাদেশে রাত জেগে যারা ইউরোপের লিগ দেখেন তাদের কাছে লিওনেল মেসি অন্যতম আনন্দের উৎস। বার্সেলোনা ও লিওনেল মেসির কোনোদিন বিচ্ছেদ হতে পারে সেটা অনেকে আঁচ করতে পারলেও বেশিরভাগ ফুটবল সমর্থকরা বিশ্বাস করতেন না। চিরকাল তো কেউ ফুটবল খেলবেন না। একদিন অবসরে যেতেই হয়। সবার কল্পনা ছিল, মেসি বার্সেলোনার হয়েই অবসর নেবেন। সেই বিশ্বাস ও কল্পনা এখন খান খান হয়ে যেতে বসেছে। লিওনেল মেসি বার্সেলোনা ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। পরিস্থিতি এখন এমন- এ খবরের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তো বটেই বাংলাদেশের ফুটবলপাড়ার আলোচনায় মেসির প্রসঙ্গ উঠে আসছে। বারবার যে কথাটি আসছে সেটা হচ্ছে- পেশাদারিত্ব, আবেগ না গত কয়েক বছর ধরে মেসির সঙ্গে বার্সেলোনার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে সেটা কারণ। মেসি বার্সেলোনায় সামনে মৌসুম থেকে আর না খেলতে পারেন এটাই অকল্পনীয়!
স্বাভাবিকভাবেই একজন ফুটবলার যখন ক্লাব ছেড়ে যেতে চান তখন গুঞ্জন শুরু হয়। আর সেটা হচ্ছে পরবর্তী গন্তব্য কোথায় হতে যাচ্ছে? মেসির ব্যাপারে বায়ার্ন মিউনিখ, লিভারপুল, রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আগ্রহ দেখানোর সাহস পাবে দুটি কারণে। একটি সমর্থক ও আরেকটি হচ্ছে করোনা পরবর্তী অর্থনীতি। মেসি এমন এক ক্লাবে যাবেন সেখানে তিনি স্বাধীনভাবে মনের মতো ফুটবল খেলতে পারবেন। যদি মেসি বার্সেলোনা ছাড়েন তা হলে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে আপন জায়গা আর হয় না। এর অবশ্য কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত সিটির কোচ পেপ গার্দিওলা। আর মেসির বেতন ও ট্রান্সফার ফি দেওয়ার মতো ক্ষমতা সিটির রয়েছে। আবার সার্জিও অ্যাগুয়েরো এই ক্লাবে খেলছেন। এই তিনটি মূল কারণ হলেও মেসিকে নিতে চাইবে না এমন কোনো ক্লাব নেই। তবে সামর্থ্যরে একটা ব্যাপার তো রয়েছেই। সিটি ১০ নম্বর জার্সিটি নাকি তুলে রেখেছে। মেসির জার্সি নম্বর ১০ এটা সবাই জানেন। প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের সামর্থ্য রয়েছে। তবে সেখানে মেসির ইচ্ছা থাকবে কিনা সেটাও ভাবতে হবে। গার্দিওলা সাবেক কোচ মেসির। বার্সেলোনায় মেসিকে নিয়ে তিনি একসময় সব জিতেছেন। আর দুজনের সম্পর্কও বেশ ভালো। সিটি মেসির চাহিদামতো অন্য খেলোয়াড়দেরও আনতে পারে। আর মেসির জার্সি বিক্রি করেও ভালো পয়সাও চলে আসবে। আরও অন্যান্য স্পন্সরের কথা বাদই গেল।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসির ফ্যানবেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ক্লাবপাড়ায় রয়েছে। রোনালদো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার সময় অনেকে যোগ দেন মাদ্রিদে। আবার মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে আসার পরও রোনালদোর সমর্থকরা সেখানে হাজির ছিলেন। মূল কথা রোনালদো যেখানে সমর্থকরা সেখানে। লিওনেল মেসি যদি এখন সিটিতে যোগ দেন। তা হলে সমর্থকরা সিটিতে যোগ দেবেন এটা খুবই স্বাভাবিক। মেসির জন্যই বেশিরভাগ সমর্থক বার্সেলোনাকে সমর্থন করেন। সিটির ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টুইটার পেজে বড় বিপ্লব ঘটবে ধরে নেওয়াই যায়। বাংলাদেশের মেসি সমর্থকদের একজন রাতুল। তিনি বলছিলেন, ‘আসলে আমরা মেসিকে আর তার খেলার জন্য বার্সেলোনা সমর্থন করি। তিনি সিটিতে গেলেও এ ভালোবাসা কমবে না। তবে মেসিবিহীন বার্সেলোনা অকল্পনীয়।’
চিরকাল কেউ এক ক্লাবে থাকবেন না এটাই স্বাভাবিক। তবে এমন গুটিকয়েক খেলোয়াড় রয়েছেন। যারা পুরো ক্যারিয়ার এক ক্লাবে খেলেছেন। এর মধ্যে অন্যতম ফ্রান্সেসকো টোট্টি সারাজীবন রোমার হয়ে খেলেছেন। মালদিনি সারাজীবন খেলেছেন এসি মিলানের হয়ে। পেশাদারিত্বের এই দুনিয়ায় এমন ঘটনা বেশ বিরল। মেসি সিটিতে গিয়ে সুখী থাকলে সে ব্যাপারে কারও কোনো কথা থাকার অবকাশ নেই।