শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন

‘সন্তানকে শিকল বেঁধে কাজে যান মা’, অতঃপর…

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯
  • ৩১৮ বার

রোদ কিংবা বৃষ্টি। আবার কখনো কনকনে শীত। পেটে ক্ষুধায় কিছুক্ষণ কান্নার পর থেমে যায় কিংবা কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। ভাগ্যের নির্মমতার কাছে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে এক শিশু। শিকলে বাঁধা তার ছোট্ট এক জীবন।

নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় নদীবন্দরের জেটির (টার্মিনাল) পাশে শিকল দিয়ে বাঁধা ওই ছোট্ট শিশুকে দেখেন নদীপথে মুন্সীগঞ্জ ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষ। কেউ কেউ কৌতূহলে ছবি তোলেন। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, নিজের সন্তানকে রেখে কাজে যান তার মা। ক্লান্ত শরীরে বা বৈরী আবহাওয়া সব কিছুকেই সহ্য করে মানিয়ে নিতে হয় এ শিশুটিকে। গত বুধবার এই একটি ছবি পাওয়া যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। ছবির সত্যতাও পাওয়া যায় টার্মিনাল ঘাটে গিয়ে।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একটি ছেলেকে তার মা শিকল দিয়ে বেঁধে কাজে চলে গেছেন। সেখানে অস্থায়ী কয়েক দোকানি জানান, মূলত ছেলে যেন হারিয়ে না যায় বা কোথাও চলে না যায়, সে জন্যই মা এ কাজ করেন। আবার অনেকে ভিক্ষা করতে বিভিন্ন স্থান থেকে শহরে আসেন তখন তাদের সন্তানকেও এখানে বেঁধে রেখে যান।
টার্মিনাল ঘাটের পত্রিকার হকার বাবুল মিয়া জানান, এরকম দৃশ্য তিনি মাঝে মধ্যেই দেখেন। অনেক সময় রাত অবধি এভাবেই বাঁধা থাকে শিশুটি। মূলত মা সাথে করে শিশুকে এনে এখানে বেঁধে তার পর কাজ করে আবার যাওয়ার সময় নিয়ে যান। তবে কখন বাঁধেন আর কখন খোলেন সেটি অনেক সময় দেখেন না তারা।
তবে দুপুরের পর পাল্টে যায় চিত্র। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি নজরে আসে পুলিশের। পরে পুলিশ লঞ্চঘাট গিয়ে শিশুটি উদ্ধার করে। এ সময় শিশুটির মাকে সন্তানসহ পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়।

পুলিশ জানায়, নারায়ণগঞ্জের লঞ্চ টার্মিনাল ঘাটে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা শিশুটি ও তার মাকে উদ্ধার করার পর গাজীপুরের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে (সেফহোম) পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এ-সংক্রান্ত একটি আদেশের জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করা হয়। পরে সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদেশের পর ব্যবস্থা নেবে কোর্ট পুলিশ। বর্তমানে শিশুটি ও তার মা রয়েছেন কোর্ট পুলিশের হেফাজতে।
উদ্ধার করার পর সেই শিশুটির মা জানান, তার নাম শ্রীদেবী এবং সন্তানটি তার। যদিও তার বাবাকে সেটি তিনি জানাতে পারেননি। ওই নারীর কথাবার্তাও কিছুটা অসংলগ্ন মনে হচ্ছিল।

নিজের সন্তানটি মেয়ে জানিয়ে একেক সময় তার একেক নাম বলেন তিনি। নিজে মাজারে ঘোরেন ও এদিক-সেদিক কাজ করে টাকা কামান আর সেই কাজে যাওয়ার সময় সন্তানকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন বলেন জানান শ্রীদেবী।
তিনি বলেন, মাইনসেইতো আমারে কয় বাইন্দা থুইতে যেইলেইগা আমার ছাও আরাইবোনা। আমিতো এই শিহল (শিকল) কিন্না হেরপরে বাইন্দা থুইয়া কামে যাই। আমি মাজারে থাহি, খাই। হেতির বাফের (বাবার) নাম কমু না।

এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, সংবাদের পর আমরা পুলিশ সুপারের নির্দেশে দ্রুত শিশু ও তার মাকে উদ্ধার করি। ওই নারীর কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হলে এবং কোনো নাম ঠিকানা না বলতে পারায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে তাকে গাজীপুরের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর আবেদন করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক বলেন, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এ ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। আদালতে সেফহোমে পাঠানোর একটি আবেদনের কপি পেয়েছি, আদালতের আদেশ এখনো হাতে পাইনি। আদেশ পেলেই তাদের পাঠিয়ে দেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com