রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২৩০০ পৃষ্ঠার রায় হিন্দিতে কেন?

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২০
  • ২৫৩ বার

ভারতে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেবার ২৮ বছর পর সেই ধ্বংস ষড়যন্ত্র মামলার রায় বেরোলো বুধবার। ২৩০০ পৃষ্ঠার এই রায়ে অভিযুক্ত ৩২ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে যাদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপি নেতা এল কে আদবানি, মুরলী মনোহর যোশি, সাক্ষী মহারাজ, বিনয় কাটিয়ার, উমা ভারতী, কল্যাণ সিংহ প্রমুখ। কংগ্রেস-টিএমসি- ডিএমকেসহ বিরোধী দলগুলো সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের এই রায়ের তীব্র সমালোচনা করেছে এবং একে ‘রাজনৈতিক রায়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

২৩০০ পাতার এই রায় প্রদানের ভাষাটি আরেকটি ষড়যন্ত্র বলে অনেকে মনে করছেন। এটি পুরোটাই হিন্দিতে লেখা ছিল, ইংরেজিতে নয়। ভারতের বেশিরভাগ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মানুষের ভাষা মোটেও হিন্দি নয়। বাবরি মসজিদ ধ্বংস ষড়যন্ত্র মামলার একটি জাতীয় গুরুত্ব রয়েছে। দেশের বৃহৎ অংশের মানুষের সঙ্গে এর অনুভূতি জড়িয়ে রয়েছে। অথচ এই বিচারের রায় দেয়া হলো হিন্দি ভাষাতে, যার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই রায় পড়ে কিছুই বুঝতে পারবেন না, পড়তে পারবেন না।

উদাহরণস্বর‍ূপ তামিলনাড়‍ু ও কর্নাটকে আদালতের প্রধান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামিল ভাষাতেই কাজ চালান। অনেক সময় ইংরেজিরও ব্যবহার করা হয়। সিবিআই, এনডিপিএস-এর মতো বিশেষ আদালতে সবসময়ই ইংরেজি ব্যবহার করা হয়। কারণ এদের মামলাগুলোর একটি জাতীয় গুরুত্ব থাকে। কেরলে গেলে দেখা যাবে, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফার্স্ট ক্লাস কোর্ট থেকে পিডিজে, সবাই ইংরেজি ব্যবহার করছেন।

যদিও আবেদন মারাঠি ভাষাতে করা হয় মহারাষ্ট্রে, কিন্তু রায় দেয়া হয় ইংরেজিতে। অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানাতেও ইংরেজি ব্যবহার করা হয়। ইংরেজি ভাষাতেই সাধারণত রায় দেয়া হয় সবার বোঝার সুবিধার্থে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষাতেও রায় প্রদান করা হয়ে থাকে। উত্তরপ্রদেশে অফিসিয়াল ভাষা হিন্দি হলেও সেখানে যখন কোনো মামলার জাতীয় গুরুত্ব থাকে তখন সেটি ইংরেজিতে লিখিত দেয়া হয়।

ভারতের সংবিধান অনুসারে, জনগণের সমস্ত তথ্য জানার অধিকার রয়েছে। তাই বাবরি ধ্বংস মামলার কী রায় দেয়া হচ্ছে, জনগণ সেটা যাতে পড়ে বুঝতে পারে, সে অধিকারও জনগণের রয়েছে। কিন্তু সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত বুধবার পুরো হিন্দিতে রায় ঘোষণা করে রীতিমতো বিতর্ক সৃষ্টি করল ভারতে। দেশের অধিকাংশ মানুষই হিন্দি জানে না। তারা কীভাবে রায় পড়বে যতক্ষণ না কোনো খবরের কাগজ, নিউজ চ্যানেল কিংবা কোনো ব্যক্তি একে ইংরেজিতে পরিণত করছে।

অথচ কী ভিত্তিতে রায় দেয়া হলো, কোন প্রমাণের ভিত্তিতে রায় দেয়া হলো, এসব জানার অধিকার সবারই রয়েছে। এ থেকেই বিশ্লেষক মহল মনে করছে, এটি একটি ষড়যন্ত্র এবং পাশাপাশি পিছনের দরজা দিয়ে অহিন্দিভাষীদের উপরে হিন্দিকে চাপিয়ে দেয়ার একটা সাম্রাজ্যবাদি পরিকল্পনাও বলা চলে। ইংরেজিতে রায় দিলে হয়তো সেটা নিয়ে বিতর্ক হতো। হিন্দি রায় আন্তর্জাতিক মিডিয়া বুঝতে পারবে না। তাই বিতর্ক বা সমালোচনাও করা মুশকিল হবে। এজন্যও হিন্দিতে রায় দেয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সূত্র : পুবের কলাম

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com