শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ অপরাহ্ন

মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে পতন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০২০
  • ২৫৮ বার

করোনা সংকটে সাধারণ ছুটির সময় ডিজিটাল প্ল্যাটফরম মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন ব্যাপক হারে বাড়ে। এ ছাড়া রপ্তানিমুখী কারখানার শ্রমিকদের বেতন ও করোনাকালীন বিভিন্ন সরকারি সহায়তা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে জুলাইয়ে সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড হয়। করোনাকালীন বিশেষ লেনদেন বন্ধ হওয়ার পর আগস্টে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন অনেক কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের জুলাই মাসে রেকর্ড ৬৩ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় ডিজিটাল এ মাধ্যমে। কিন্তু পরের মাস আগস্টে ব্যাপক হারে লেনদেন কমে গেছে। ওই মাসে লেনদেন নেমে এসেছে ৪১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকায়, যা আগের মাসের চেয়ে ৩৪ শতাংশ কম। এ ছাড়া জুলাইয়ে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ২ হাজার ৩২ কোটি টাকা। আগস্টে তা ৩৪ শতাংশ কমে হয়েছে ১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার এ দুর্যোগকালীন গ্রাহকের কাছে মোবাইলের লেনদেন আরও জনপ্রিয় করতে বিশেষ ছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময়ে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষ সরাসরি সাক্ষাতে নগদ লেনদেনের চেয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশলেস লেনদেন বেশি নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। পাশাপাশি শ্রমিকদের বেতন-বোনাস,

সরকারের সামাজিক সুরক্ষার বিভিন্ন ভাতা ও অনুদান মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দেওয়া হয়। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটায় লেনদেন ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে জুলাই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হয়েছিল। এখন করোনা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক স্বাভাবিক। পাশাপাশি ঈদপরবর্তী মানুষের কেনাকাটা কমে গেছে। সরকারি বিভিন্ন পেমেন্টও তেমন হয়নি। সেই সঙ্গে মোবাইলে রেমিট্যান্স প্রবাহও কমেছে। সব মিলিয়ে জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনে কম হয়েছে। তবে লেনদেন কমলেও আগের মাসের চেয়ে আগস্টে গ্রাহক, এজেন্ট সংখ্যা বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোট ১৫টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত। ২০২০ সালের জুলাই মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ কোটি ২৯ লাখ ৩৭ হাজারে, যা তার আগের মাস মের চেয়ে দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।

টানা তিন মাস একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবকে নিষ্ক্রিয় হিসাব বলে গণ্য করে থাকে এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তথ্য বলছে, আগস্টে এমএফএস সেবার লেনদেনের সঙ্গে সেবায় সক্রিয় গ্রাহকসংখ্যা কমেছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। আগস্ট মাস শেষে এমএফএস সক্রিয় গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ২৬ লাখ ৭৮ হাজারে। আর আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৯ হাজার ৪৩০ জনে।

আগস্টে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোয় টাকা জমা পড়ে ১১ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। এ সময়ে উত্তোলন করেছে ১২ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা। যা আগের মাস জুলাইয়ের চেয়ে টাকা জমার পরিমাণ কমেছে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং উত্তোলন কমেছে ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ। জুলাইয়ে টাকা জমা হয়েছিল ১৭ হাজার ৫৮ কোটি টাকা এবং উত্তোলন করেছে ১৯ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে এমএফএসে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে ১০৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে ৩৮ শতাংশ কম। চলতি বছরের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আলোচিত সময়ে ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ১২ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ ৭৬ শতাংশ কমে ১ হাজার ৬৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

আগস্টে বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৯০৮ কোটি টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা। সরকারি পরিশোধ মাসের ব্যবধানে ৯৮ শতাংশ কমে ১৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া অন্য হিসাবে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা।

২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com