‘এ সম্বন্ধে যাহাকিছু বলিবার, কাগজে পত্রে তাহা নানাপ্রকারে বলা হইয়া গেছে; কিন্তু দেশের উৎকণ্ঠা ঘুচিতেছে না।’ প্রাইমারি শিক্ষা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ কথাটা বহু বছর বাদে এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গেও মিলিয়ে নেওয়া যায়। ভোটের হিসাব বলছে, চার বছর আগে রাজনীতির মঞ্চে ‘হঠাৎ আবির্ভাব’ ঘটেছিল যে নেতার, সেই রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গদিচ্যুত করতে যাচ্ছেন ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন, যার আধেক জীবন কেটেছে রাজনীতির মাঠে। কিন্তু যেহেতু ভোট গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত, এবং এখনো সব ভোট গণনা সম্পন্ন হয়নি, সেহেতু কবির সুরেই বলতে হচ্ছে, ‘আমাদের পক্ষে যুক্তি আছে বলিয়া যে জয়ও আমাদের দিকে, তাহা আশা করা কঠিন।’
ধোঁয়া দেখে যেমন আগুন আঁচ করা যায় দূর থেকেই, তেমনি ক্ষমতাসীন শিবিরে উত্তেজিত উচ্ছৃঙ্খলা, বক্তব্যে বিশৃঙ্খলা এবং চাপা ক্রন্দন রোল দেখে আঁচ করা যায়, হেরে বসে আছেন ট্রাম্প।
অন্যদিকে জনরায় পক্ষে বুঝেও নিজেকে ‘প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত’ হিসেবে সরাসরি ঘোষণা করে এখন অবধি বক্তব্য দেননি নীল শিবিরের নেতা। বাইডেন বরং শান্ত সুরে বারবারই বলছেন, হিসাব বলছে জয় সুনিশ্চিত, কিন্তু ধৈর্য ধরে বসে আছি, প্রতিটি ভোট গণনা শেষ হোক আগে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এবং পুরো বিশ্বের সাধারণ মানুষ বাইডেনকে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনানুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা জানানো শুরু করেছে।
এ নির্বাচনের ফল নিয়ে পশ্চিমের গণমাধ্যমগুলো একই সময় একেক রকম পরিসংখ্যান দিচ্ছে, তথ্যসূত্রের যৌক্তিক ভিন্নতার কারণেই। এ প্রতিবেদনে দ্য গার্ডিয়ানের পরিসংখ্যান নেওয়া হয়েছে।
গত রাত নয়টায় এ প্রতিবেদন তৈরির সময় পর্যন্ত বাইডেন ২৬৪ ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন। ট্রাম্প আটকে আছেন ২১৪টিতে। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যে পাঁচ রাজ্যে দুই নেতার ভাগ্য আটকে ছিল, তিনটিতেই তখন বাইডেন এগিয়ে। আরও বড় ব্যাপার হলো, যে পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্প প্রায় সাত লাখ ভোটে এগিয়ে ছিলেন, ডাকযোগে পাঠানো ভোট গণনায় পাশার দান পাল্টে গেছে সেখানেও, বাইডেন উল্টো সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে এগিয়ে গেছেন। এখনো সেখানে দেড় লাখের মতো ভোট গণনা বাকি। এ রাজ্যে জয় পাওয়া মানে, ঝুলিতে আরও ২০টি ইলেকটোরাল ভোট যোগ হওয়া। এ ছাড়া জর্জিয়া (১৬টি) এবং নেভাদায় (৬টি) এগিয়ে আছেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট। এসব রাজ্যে জয় নিশ্চিত হলে বাইডেনের মোট ইলেকটোরাল ভোট গিয়ে দাঁড়াবে ৩০৬টি। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই সংখ্যক ভোটই পেয়েছিলেন ট্রাম্প।
জনপ্রিয় ভোটেও বাইডেন তার দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। ট্রাম্পের তুলনায় প্রায় ৩৯ লাখ বেশি।
বাইডেনের জয়ে যুক্তরাষ্ট্র পাবে দেশটির প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট। ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস সে দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ এবং প্রথম এশীয়-মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা শুক্রবার থেকেই ‘সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট’ বাইডেনের নিরাপত্তা জোরদার করছে। এ থেকেও বাইডেনের বিজয় অবধারিত, তা অনুমান করা যায়।
বাইডেন গতকাল টুইটারে বলেছেন, ‘কেউ আমাদের গণতন্ত্রকে আমাদের কাছে থেকে কেড়ে নিতে পারবে না। এখনো না, কখনো না।’
নির্বাচনের পরদিনই বাইডেন টুইট করেছিলেন, ‘আস্থা রাখুন। আমরাই এবার জিততে যাচ্ছি।’ তবে তহবিল ওঠানোর লক্ষ্যে তিনি গতকাল আরেক টুইটে বলেছেন, ‘লড়াই এখনো শেষ হয়নি। কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোট গণনা বন্ধে আদালতে দৌড়াচ্ছেন। আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রচেষ্টা সফল করেছি। এখন জয়ের জন্য আপনাদের সাহায্য চাই।’
সব ভোট গণনা হলে পরে, যেমনটা এ ডেমোক্র্যাট প্রার্থীও অতিনিশ্চিত, বাইডেনের টুইটার পরিচিতিতে ‘সিনেটর, ভাইস প্রেসিডেন্ট’-এর বদলে হয়তো লেখা থাকবে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট’।