১৮০১ সালের ৪ মার্চ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস ১৮০০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী টমাস জেফারসনকে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেছিলেন।
তাই অনেক বিশ্লেষক বলেন, ২০শে জানুয়ারির ”মধ্যাহ্নের নীতিটি” তো এখনও ট্রাম্পের জন্য লেখা হয়নি। সেটি হলো, অ্যাডামস ট্রাম্পের মতোই একগুঁয়েমি করেছিলেন। তিনি অফিস ছাড়বেন না। তাই অফিসই তাকে তালাক দিয়েছিল।
দৃশ্যটি ছিল এরকম- জেফারসন শপথ নিচ্ছিলেন। কিন্তু সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন অ্যাডামস। তিনি বয়কট করেছিলেন। সেই মুহুর্তে যারা দায়িত্বরত ছিলেন হোয়াইট হাউসে, মানে সেখানকার কর্মচারীরা।
তারা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
তারা বেয়াড়া ভাড়াটেকে উচ্ছদের মতোই হোয়াইট হাউস থেকে প্রেসিডেন্টের জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেছিলেন। অ্যাডামসই ছিলেন প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি নতুন সরকারি বাসভবন অর্থাৎ হোয়াইট হাউসের প্রথম বাসিন্দা ছিলেন। প্রেসিডেন্টের জন্য চলমান সমস্ত সুরক্ষা তুলে নেয়া হলো। সমস্ত অফিশিয়াল যোগাযোগ কেটে দেয়া হলো।
প্রেসিডেন্টের সমস্ত কর্মচারীরা অ্যাডামসের নির্দেশনা গ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এভাবেই অ্যাডামস পরে টের পেলেন, তিনি থেকেও ” নেই”। ঢাকায় পর্যবেক্ষকরা কৌতূহলী হচ্ছেন এটা ভেবে যে, প্রায় সোয়া দুশো বছর পরে সেই একই ঘটনার কিংবা একই নাটক পুনরায় মঞ্চস্থ হতে চলেছে কিনা!
সেই সময় থেকে হোয়াইট হাউসের সমস্ত দায়িত্বপ্রাপ্তরা এ বিষয়টি মনে রেখে চলছেন। বিশেষ করে বিদায়ী প্রেসিডেন্টের পরাজয়ের খবর পৌছামাত্র বাক্সপেটরা, লোটা কম্বল গোছানো শুরু করেন। কারো নির্দেশের অপেক্ষা করতে হয় না।
কারণ ভোট গ্রহনের সিদ্ধান্তের মতো রাষ্ট্রের স্বতন্ত্র অঙ্গগুলো আপনা-আপনি কাজ শুরু করে দেয়। তাই সম্ভাব্য অপমান বা বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে, হেরে যাওয়ার লক্ষণগুলো দেখলেই তাড়াতাড়ি ছেড়ে যাওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত হন। সেনা, সিক্রেট সার্ভিস , সিআইএ, এফবিআই এবং সমস্ত হোয়াইট হাউস কর্মচারী , তারা সকলেই একটি আইনের আওতায় কাজ করে । তারা সকলেই একজনের প্রতি অনুগত, জনগণ যাকে বেছে নিয়েছেন, তার প্রতি।
জো বাইডেন ম্যাজিক নম্বর ২৭০ ভোট পাওয়া মাত্রই, এবং সেটা রিটার্নিং অফিসারদের দ্বারা ঘোষণা হওয়া মাত্রই, নিম্নলিখিত বিষয়গুলো ঘটতে থাকবে:
১. গোপনীয় পরিষেবা মানে সিক্রেট সার্ভিসের লোকেদের মনোযোগ ভাগ হবে। আগত প্রেসিডেন্টের দিকে তাদের নজর তীক্ষ্ণ হবে।
২. সিআইএ উভয়কে ( বাইডেন ও ট্রাম্প) ব্রিফ করবে। এটা সাধারণত কমাণ্ডার-ইন চিফ হিসেবে ট্রাম্পই পাওয়ার বিষয় ছিল।
৩. সিআইএর কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স টিমও উভয়ের কাছে রিপোর্ট করা শুরু করবে।
৪. ২০শে জানুয়ারির মধ্যাহ্নে হোয়াইট হাউস কর্মীরা সরকারি বাড়ি থেকে ট্রাম্পের সমস্ত জিনিসপত্র সরিয়ে নেবেন। এসময় তারা নতুন প্রেসিডেন্টের জিনিসপত্র নিয়ে আসবেন। এজন্য তারা কারও নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করেন না।
৫. ট্রাম্পের বেতন নেয়ার ক্ষেত্রে হোয়াইট হাউসে থাকা বাবদ ভাড়া কাটা বন্ধ হবে জানুয়ারিতে।
৬. এর পরিবর্তে জো বাইডেনের প্রেসিডেন্টের বেতন থেকে হোয়াইট হাউসের ভাড়া জানুয়ারি থেকেই কাটা শুরু হবে।
৭. মেলানিয়া ট্রাম্প ২০শে জানুয়ারি মধ্যাহ্ন থেকেই হোয়াইট হাউসের বসগিরি বন্ধ করে দিয়েছেন বলে ধরে নেয়া হবে।
৮. এর পরিবর্তে ডঃ জিল বাইডেন ২০শে জানুয়ারির মধ্যাহ্নেই হোয়াইট হাউস-এর নতুন বস হিসেবে মান্য হবেন।
৯. ২০শে জানুয়ারির মধ্যাহ্নে সরকারের সমস্ত নেটওয়ার্ক ট্রাম্পের সঙ্গে কেটে দেবে। পেন্টাগন, সিআইএ, এফবিআই, অ্যাটর্নি জেনারেল, তারা আর কথা বলেবেন না ট্রাম্পের সঙ্গে।
তবে একটা গোপনীয় পরিষেবার ন্যূনতম অঙ্গ যোগাযোগ বজায় রাখবে। যেহেতু ট্রাম্প তার সারাজীবনই এক্স-প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিরাপত্তা রক্ষী পাবেন।
১০. ২০শে জানুয়ারিতে দ্য বিস্ট এবং এয়ারফোর্স ওয়ান নামের প্রেসিডেন্টকে গত ৪ বছর ধরে বহনকারী বিমানবহর তাকে শেষ বারের মতো অভিবাদন জানাবে। এবং বাইডেনের দিকে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
আর ঐতিহ্য অনুসারে দি বিস্ট বাইডেনের রক্তের নমুনা বহন করা শুরু করবে। এবং এসব দায়িত্ব পালন করতে তারা কারও কাছ থেকে নির্দেশের অপেক্ষায় থাকবে না।
মার্কিন এই রীতি গত দুশো বছরেরও বেশি সময় ধরে বহাল রয়েছে। দেখা যাক ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এটা কিভাবে কাজ করে?