পাঁচ শর্তে বিদেশ থেকে কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। এই অর্থের পরিমাণ ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই টাকার মধ্যে শুধু ভ্যাকসিন কেনার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই অর্থ দিয়ে প্রথম পর্যায়ে দেড় কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনা হবে।
বাকি ১০০ কোটি টাকা দিয়ে কোল্ড চেইন প্রতিষ্ঠা, এডি সিরিঞ্জ সেইফটি বক্স ক্রয়, ভ্যাকসিন কার্যক্রম প্রচারণা ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হবে। গত সোমবার অর্থ বিভাগ থেকে এ বরাদ্দের কথা জানানো হয়।
এর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য অর্থ বিভাগের কাছে ১২ শ’ কোটি টাকারও বেশি অর্থ চাওয়া হয়েছে। এই অর্থ দিয়ে অক্সফোর্ডের উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ কেনার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু এই চাহিদার বিপরীতে অর্থবিভাগ অর্ধেক টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ স্বাক্ষরিত এই বরাদ্দপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘কোভিড-১৯ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন ক্রয়, পরিবহন ও কোল্ড চেইনে পৌঁছানো পর্যন্ত তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার জন্য প্রয়োজন পড়বে এক হাজার ২৭১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এই অর্থের অর্ধেক অর্থাৎ ৬৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ভ্যাকসিন ক্রয়ের কাজে ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি আরো ১০০ কোটি টাকা দেয়া হবে ভ্যাকসিন রাখা ও পরিবহনের জন্য কোল্ড চেইন ইকুইপমেন্ট ক্রয়, এডি সিরিঞ্জ সেইফটি বক্স ও পরিবহন খরচ, লোকজনকে প্রশিক্ষণ, নিরীক্ষা, সুপারভাইজিং এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য। এই অর্থ চলতি বছরের বাজেটে করোনার জন্য রাখা ১০ হাজার কোটি টাকা থেকে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে বলে চিঠিতে জানানো হয়।
তবে ভ্যাকসিন ক্রয়ে পাঁচটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। শর্তের মধ্যে রয়েছে- ক্রয়ে সরকারি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন নিতে হবে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিরও। অর্থ বিভাগের মতামত গ্রহণ পূর্বক ব্যাংক গ্যারান্টি চূড়ান্ত করতে হবে। অর্থ ব্যয়ে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট ২০০৬ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস ২০০৮ অনুসরণসহ যাবতীয় আর্থিক বিধিবিধান যথাযথভাবে পরিপালন করতে হবে এবং ভ্যাকসিন ক্রয়, কোল্ড স্টোরেজ চেইন সিস্টেম, এডি সিরিঞ্জ সেইফটি বক্স ক্রয়সহ যাবতীয় বিল-ভাউচার যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নসহ ক্রয়ের এক মাসের মধ্যে অর্থ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে।
জানা গেছে, প্রতি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন কিনতে সরকারের খরচ পড়বে চার ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩৪০ টাকা আর তা জনসাধারণের কাছে বিক্রি করা হবে পাঁচ ডলার বা ৪২৪ টাকায়। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তিন কোটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশী বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিকে উৎপাদনে যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে কোম্পানির কাছ থেকে পাঁচ ডলার করে একটি ভ্যাকসিন কেনা হবে। এর মধ্যে সেরাম পাবে চার ডলার এবং তাদের লোকাল এজেন্ট বেক্সিমকো পাবে এক ডলার করে।