করোনাভাইরাসের প্রভাবে বেশির ভাগ ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থাই খারাপ অবস্থানে চলে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় অনুযায়ী আয় হচ্ছে না। ঋণ আদায় কমে গেছে। আবার কমেছে আমানতের পরিমাণ। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দায়দেনা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কমেছে সম্পদের পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এ চিত্র উঠে এসেছে।
এ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৩৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র সাতটির তারল্যপ্রবাহ বেড়েছে। বাকি ২৬টিরই কমে গেছে। ১০টি প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পদ বেড়েছে; কিন্তুবাকি ২৩টিরই মোট সম্পদ কমে গেছে। দায়দেনা বেড়েছে ২০টির, কমেছে ১৩টির।
এ দিকে করোনার প্রভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের ওপরই বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে না পারায় আগে থেকেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আস্থার সঙ্কট দেখা দিয়েছিল, এতে আমানত প্রত্যাহারের একটু চাপ বেশি ছিল; কিন্তু করোনার প্রভাবে আমানতপ্রবাহে আরো বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুন শেষে ৩৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭টিরই আমানতপ্রবাহ কমে গেছে। মাত্র ছয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতপ্রবাহ বেড়েছে।
এর আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান ও আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিপাচলক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম জানান, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কেলেঙ্কারির ধাক্কা সামগ্রিক আর্থিক খাতেই দেখা দিয়েছিল। তবে, ভালো প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো ভালো অবস্থানে রয়েছে। তাদের তহবিলসঙ্কট নেই, বরং অনেকেরই এখন উদ্বৃত্ত রয়েছে।
তিনি মনে করেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্কট রয়েছে ওই সব প্রতিষ্ঠানের এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তবে এ জন্য প্রথমেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। প্রায় এক বছর যাবৎ ঋণ আদায়ের ওপর শিথিলতা এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বলা হয়েছে, কেউ ঋণ পরিশোধ না করলে খেলাপি করা যাবে না। গত জানুয়ারি থেকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুযোগ দেয়ায় যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন তারাও ঋণ পরিশোধ করছেন না। এতে ব্যাংকের সাথে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও সঙ্কটে পড়ে যায়। তবে, ঋণখেলাপি না করায় এ ঋণের ওপর অর্জিত সুদ আয় খাতে নিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। প্রকৃত মুনাফা না হলেও কৃত্রিম মুনাফা দেখায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্কট আরো বেড়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের এমডি মমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, চলমান পরিস্থিতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি মুনাফা না দেখিয়ে বিচক্ষণতার সাথে ভবিষ্যতের ক্ষতির কথা চিন্তা করে এখন থেকেই বাড়তি নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হবে। অন্যথায় বেকায়দায় পড়ে যাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।
তিনি বলেন, আইপিডিসি ফাইন্যান্স গত বছর মুনাফা করেছিল ৫৬ কোটি টাকা। চলতি বছর শেষে তা ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, তারা বাড়তি নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করবে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা। ভবিষ্যতের ঝুঁকি মোকাবেলায় এবং প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতে এর কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন।