দেশের বীমা শিল্পে দীর্ঘদিন ধরেই স্বচ্ছতা ও আস্থার অভাব। রয়েছে প্রডাক্টের সংকটও। ফলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হয়েও বীমা দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা অনুযায়ী জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি। তাই হারানো আস্থা এবং শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সেবার মান ও নতুন প্রডাক্টের প্রতিই এবার তাদের নজর। বীমা নিয়ে মানুষের নেতিবাচক মনোভাব দূর করতে এগোচ্ছে ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ নামের নতুন ধারণা নিয়ে।
সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকাস্যুরেন্স ধারণাটি চালু হলে বীমা পলিসি ব্যাংকের শাখাগুলোই বিক্রি করে দেবে। গ্রাহকদের তখন আর বীমা কোম্পানিতে যেতে হবে না। অর্থাৎ ব্যাংক তার নিজের গ্রাহকের কাছে ব্যাংক পণ্যের পাশাপাশি বীমা পণ্যও বিক্রি করবে। তখন বীমা কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম সংগ্রহের খরচও কমে যাবে। যেহেতু বীমার তুলনায় ব্যাংকের ওপর গ্রাহকদের আস্থা বেশি, সেহেতু ব্যাংকাস্যুরেন্সের আওতায় বীমা পলিসি কেনার প্রতিও আগ্রহ বাড়বে। চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউল হক আমাদের সময়কে বলেন, ‘এটি ইতিবাচক উদ্যোগ। এতে করে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা বাড়বে।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে বীমা খাতের ব্যাপক প্রসার হবে। তবে নতুন এ আর্থিক পণ্যের সম্ভাবনা আটকে আছে নীতিমালার কারণে। অথচ ব্যাংকের মাধ্যমে বীমা খাতের উন্নতির অনেক উদাহরণ রয়েছে উন্নত বিশ্বে। এমনকি নিকট প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকাও এতে সফল হয়েছে। অন্যদিকে ৬০টি ব্যাংক ও ৭৮ বীমা কোম্পানি থাকা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে বাংলাদেশ।
আইডিআরএ অবশ্য ব্যাংকাস্যুরেন্স সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে এমন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকাস্যুরেন্সের এজেন্ট হতে পারবে। সে জন্য বীমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে হবে তাদের। তবে কোনো ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্ট তিনটির বেশি জীবন বা সাধারণ বীমা কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে না। এ জন্য বীমা কোম্পানিকেও নিতে হবে আইডিআরএর অনুমোদন। আর ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্টকে অনুমোদন নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকও ব্যাংকাস্যুরেন্সের বিষয়ে একমত হয়েছে। মতামতের জন্য সরকারি দুই সংস্থাসহ সব বেসরকারি কোম্পানিকে খসড়াটি পাঠিয়েছে আইডিআরএ।
গার্ডিয়ান লাইফের এমডি ও সিইও এমএম মনিরুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স সময়ের দাবি। এতে ব্যাংক ও বীমা কোম্পানি শুধু লাভবান হবে না, গ্রাহকেরাও উপকৃত হবেন। আর এর প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতেও। অনেক সময় বীমা কোম্পানির এজেন্ট ভুলভাবে পলিসি বিক্রি করেন। এতে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হন। ফলে মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়। কিন্তু ব্যাংকাস্যুরেন্সু চালু হলে পেশাদারিত্ব বাড়বে। কারণ ব্যাংক হিসাব খোলার সময় গ্রাহকের কেওয়াইসি (পূর্ণাঙ্গ পরিচিতি) ফরম পূরণ করা হয়। ফলে নতুন করে পলিসি করার সময় তাকে আর ফরম পূরণ করতে হবে না। এ ছাড়া ব্যাংকার নলেজেবল। তারা সুন্দর করে গ্রাহককে পলিসি সম্পর্কে বুঝিয়ে তা বিক্রি করবেন। এতে গ্রাহকের মধ্যে ভুল বোঝার সুযোগ কম থাকবে। টাকাটাও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া হবে। তাতে মানুষের আস্থার সংকট থাকবে না। অন্যদিকে এ উদ্যোগের ফলে ব্যাংকের ননফান্ডেড আয় বাড়বে। কমবে ইন্সুরেন্সের খরচ। গ্রাহক সঠিক সেবা পাবেন। এতে করে সব পক্ষই উপকৃত হবেন।’