এক হিন্দু নারীকে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগে ভারতের উত্তর প্রদেশে এক মুসলিম তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিতর্কিত ধর্মান্তর-বিরোধী আইন পাসের পর এটিই প্রথম কোনো গ্রেপ্তার। আজ বুধবার উত্তর প্রদেশের বারেলি জেলার পুলিশ গ্রেপ্তারের খবরটি টুইটারে নিশ্চিত করে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, বিয়ের মাধ্যমে হিন্দু নারীদের ধর্মান্তর ঠেকানোর এই আইন মূলত কথিত ‘লাভ জিহাদ’কে কেন্দ্র করে। অনেক দিন ধরে উগ্র হিন্দু গোষ্ঠীরা শব্দটি ব্যবহার করে আইনি ব্যবস্থার দাবি তুলে আসছে। নতুন আইনে তার প্রতিফলন ঘটেছে, যাকে সমালোচকেরা ‘ইসলামভীতি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। উত্তর প্রদেশের পর কমপক্ষে ভারতের আরও চারটি রাজ্যে ‘লাভ জিহাদের’ বিরুদ্ধে আইন চূড়ান্ত হওয়ার পথে।
গত সপ্তাহে এক হিন্দু তরুণীর বাবার এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ থানায় দায়ের করেন। ওই ব্যক্তির অভিযোগ, গ্রেপ্তারকৃত ওই যুবক তার মেয়েকে জোর করে ধর্মান্তরিত করছে। অন্যথায় তাকে হত্যার হুমকি দেয়। অভিযুক্ত মুসলিম তরুণের সঙ্গে অনেক দিন সম্পর্ক থাকলেও চলতি বছরের শুরুতে অন্য এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছেন ওই তরুণী।
জানা যায়, ওই তরুণকে গ্রেপ্তারের পর ১৪ দিনের বিচারিক হেফাজতে পাঠায় আদালত। যদিও তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন ও সাংবাদিকদের বলেন, ওই নারীর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
নতুন অজামিনযোগ্য এই আইনে দোষী প্রমাণিত হলে ১০ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে ওই মুসলিম তরুণের। গত শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য নাথের পাঠানো এ সংক্রান্ত খসড়া বিলে সই করে অনুমোদন দেন উত্তর প্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেল। পরদিনই গেজেট নোটিফিকেশন করে অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হয়।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আপাতত অরডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ হিসেবে আইনটি প্রয়োগ করা হলেও পরে বিধানসভায় পাশ করিয়ে পূর্ণাঙ্গ ধর্মান্তর-বিরোধী আইনে পরিণত করা হবে এটিকে। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব সরকারের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে জানিয়েছেন, বিধানসভায় তাদের সদস্যরা এর বিপক্ষেই ভোট দেবেন।
অনেক দিন ধরে হিন্দু মেয়ের সঙ্গে মুসলিম ছেলেদের বিয়ের বিরোধিতায় সরব কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। তাদের অভিযোগ, হিন্দু মেয়েদের প্রেমের ছলে ভুলিয়ে ধর্মান্তর করে বিয়ে করাটা আসলে মুসলিম ‘জেহাদিদের’ কৌশল। এরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘লাভ জেহাদ’। অভিযোগ আছে, অনেক সময়ে গরিব হিন্দু মেয়েদের বিয়ে ও সংসারের লোভ দেখিয়েও ধর্মান্তর করা হচ্ছে।
এই আইন অনুযায়ী কেউ যদি অভিযোগ করেন জোর করে, প্রলোভন দেখিয়ে বা ভুল বুঝিয়ে তাকে ধর্মান্তর করা হয়েছে, তবে অভিযুক্তদের শাস্তি ছাড়া ক্ষতিপূরণও তিনি পেতে পারেন। এই ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ৫ লাখ রুপি পর্যন্ত। মন্ত্রী সিদ্ধার্থ নাথ সিং আগেই জানান, জোর করে বা ছল করে ধর্মান্তর প্রমাণ হলে সাধারণ ক্ষেত্রে ১ থেকে ৫ বছরের কারাবাসের সাজা হবে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত নারী বা পুরুষ নাবালক অথবা তফসিলি জাতি বা জনজাতিভুক্ত হলে শাস্তি বেড়ে ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। সঙ্গে জরিমানা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ধর্মান্তরিত নিজে ছাড়াও তার রক্তের সম্পর্কের যে কেউ প্রশাসনের কাছে এই আইনে অভিযোগ জানাতে পারবেন।