শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৭ অপরাহ্ন

বিজয় নিশান উড়ছে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৬৯০ বার

দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত, ত্যাগ আর বীরত্বগাথা দিয়ে রচিত এই বাংলাদেশ। লাল-সবুজের প্রিয় মাতৃভূমি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হলো কাঙ্ক্ষিত সেই দিন, যে দিনটির অপেক্ষায় দামাল ছেলেরা প্রাণ দিয়ে সংগ্রাম করেছিল এই ভূখণ্ডের জন্য। সেই দিন আজ আমরা বিজয় দিবস হিসেবে উদযাপন করি, বুকের মধ্যে লালন করি।

আনন্দের এই বিজয়ের রং লাল-সবুজ। আনন্দের সঙ্গে পোশাক পরার রয়েছে এক গভীর যোগসূত্র। বিজয় দিবস আনন্দের দিন। আর সাজ-পোশাকের মাধ্যমে আনন্দভাব তুলে ধরতে বাঙালির জুড়ি নেই। দিবসভিত্তিক পোশাক পরার ব্যাপারটা আমাদের সংস্কৃৃতিতে চলে আসছে বছরের পর বছর। একেক দিবসের রং একেক। তাই উৎসবের ধরন বুঝে নকশাকারের দল পোশাকে আনে নতুনত্ব, ফুটিয়ে তোলে পোশাকের জমিন।

এবারের বিজয় দিবস সামনে রেখে দেশের ফ্যাশন হাউসগুলো বরাবরের মতো সাজিয়েছে বিজয় দিবসের সম্ভার, থাকছে নানান আয়োজন। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্যাশন হাউসগুলো রুচিশীল ও উৎসবনির্ভর পোশাক তৈরি করেছে। ছোট সোনামণির জামা থেকে শুরু করে সব বয়সীর জন্যই রয়েছে বিজয় দিবসের আয়োজন।

বিজয়ের রং লাল ও সবুজ; তাই পোশাকে জমিনে স্বাধীনতা ফুটিয়ে তোলার জন্য এই দুটো রঙের আধিপত্য থাকছে বরাবরের মতো। নতুন নতুন পোশাক ডিজাইন করে এ দিনটিকে ভিন্ন এক মাত্রা দিয়ে থাকে ডিজাইনাররা। এবারের বিজয় দিবসের আয়োজনে পোশাকে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে সুনিপুণভাবে। পোশাকের জমিনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে লাল-সবুজের চেতনা। ফ্যাশন হাউসগুলো ঘুরে দেখা গেছে থ্রি পিস, শাড়ি, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়ার রমরমা আয়োজন। বেশ কিছু দোকানে বিজয় দিবস উপলক্ষে লাল-সবুজের মিশেলে স্কার্ফ, ব্লাউজ পিস, উত্তরীয়, ব্যান্ডানাও পাওয়া যাচ্ছে।

পোশাকের জমিনের নকশা ফুটিয়ে তোলার জন্য নানা ভ্যালু অ্যাডেড মিডিয়ার ব্যবহার হয়েছে। এর মধ্যে এমব্রয়ডারি, অ্যাপ্লিক, ব্লক, সুতোয় বোনা হাতের কাজের পোশাক চোখে পড়ার মতো। প্রতিটি পোশাকে বিজয় আর মুক্তিযুদ্ধের মাহাত্ম্য তুলে ধরা হয়েছে। ভিন্ন মাত্রার এই পোশাকের মাধ্যমে সব সময় বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে আসছে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো।

বিজয় দিবসের আয়োজন উপলক্ষে বিশ্বরঙ-এর কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলেন, বিজয় দিবসের পোশাকগুলো ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয় বরং দেশের প্রতি দায়িত্ব ও মূল্যবোধ থেকেই তৈরি করা হয়েছে। লাল-সবুজ আমাদের বিজয়ের প্রতীক। বিজয়ের এই মাসজুড়ে তাই লাল-সবুজের আয়োজন নিয়ে ক্রেতাদের জন্য সাজানো হয়েছে বিজয়ের পোশাক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফুটিয়ে তুলতে সবুজ জমিনে লাল দিয়ে অলংকরণ করা হয়েছে ৭১। শাড়ির সবুজ আঁচলের জমিনের মাঝে যেন টকটকে লাল সূর্য। উত্তরীয়তে থাকছে জাতীয় সংগীতের টাইফোগ্রাফি। এ ছাড়া টি-শার্টে থাকছে বাংলাদেশের পতাকার গ্রাফিক্যাল ফর্মের নান্দনিক উপস্থাপনায় টাইফোগ্রাফি ও ক্যালিওগ্রাফির সমন্বয়ে বাংলাদেশের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের প্রতিকৃতি।

স্বাধীনতার গান ও বাংলাদেশের পতাকার বিষয় এবার তুলে ধরা হয়েছে কাপড়ের ক্যানভাসে। জানালেন রঙ বাংলাদেশ-এর স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাস। তিনি আরও বলেন, দেশে এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চাওয়ার প্রত্যাশায় গড়া ‘আমার বাংলাদেশ’ সাবব্র্যান্ডের অধীনে তৈরি করেছি বিজয় দিবসের সামগ্রী। সব বয়সীর জন্য তো পোশাক রয়েছেই, সঙ্গে থাকছে কাপল ও ফ্যামিলি ড্রেস। এ ছাড়া বিজয়ের আয়োজনে রয়েছে জুয়েলারি, পার্স ও মেয়েদের ব্যাগ। উপহারসামগ্রী হিসেবে আছে নানা ডিজাইনের মগ।

যেহেতু শীতকাল চলে এসেছে তাই এবারের পোশাকে ব্যবহার করা হয়েছে মোটা সুতি এবং খাদি কাপড়। কাজের মাধ্যম হিসেবে এসেছে ব্লক, বাটিক, টাইডাই, অ্যাপ্লিক, কাটওয়ার্ক, স্ট্ক্রিনপ্রিন্ট ইত্যাদি। লাল-সবুজকে মূল রং রেখে পোশাক অলংকরণে সহযোগী রং হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে সবুজের বিভিন্ন শেড। পাশাপাশি সাদা, নীল, টিয়া, সোনালি, হলুদ রঙের ব্যবহারও রয়েছে। পোশাকের জমিনে উঠে এসেছে পতাকা, মুক্তিযুদ্ধের গান, কবিতা, ইতিহাস, প্রতিকৃতি কিংবা স্লোগানের লাইন।

মেয়ে শিশুদের জন্য রয়েছে টপস, ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ, টি-শার্ট। ছোট ছেলেদের পাঞ্জাবি, ফতুয়া টি-শার্টও রয়েছে। সব পোশাক রাঙানো হয়েছে বিজয়ের রঙে। লাল-সবুজের পাশাপাশি হলুদ, টিয়া, কমলা কিংবা সাদার ব্যবহারও চোখে পড়বে ছোটদের পোশাকগুলোতে। পুরো পরিবারের জন্য একই রকম ডিজাইনের বিজয় দিবসের পোশাক রয়েছে। পোশাকগুলোতে বিজয় দিবসের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য তুলে ধরা হয়েছে। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোতে ঢু মারলেই আপনি পেয়ে যাবেন মনের মতো পোশাক।

কোথায় পাবেন : বিজয় দিবসের পোশাকের পসরা সাজানো হয়েছে বিভিন্ন শপিংমলগুলোতে। দামও হাতের নাগালে। ‘দেশীদশ’-এ আপনি পাবেন দেশীয় ধারার বিজয়ের পোশাক। রয়েছে প্রিয়জনকে দেওয়ার জন্য উপহার সামগ্রী। এ ছাড়া বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত স্কয়ার, আজিজ সুপার মার্কেটের বেশিরভাগ দোকানেই আপনি পাবেন বিজয় দিবস উপলক্ষে টি-শার্ট, কুর্তি, পাঞ্জাবি ও শাড়ি। আপনি চাইলে গাউছিয়া, নিউমার্কেট কিংবা খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়া থেকে গজ কাপড় কিনে মনের মতো ডিজাইন দিয়ে দর্জির কাছে বানিয়ে নিতে পারেন বিজয়ের পোশাক।

দরদাম : শাড়ি ১,২০০-৪,০০০ টাকা, সিঙ্গেল কামিজ ৮০০-২০০০ টাকা, থ্রিপিস ২০০০-৩,৫০০ টাকা, ব্লাউজ ২০০-৭৫০ টাকা, ওড়না ৫০০-৮৫০ টাকা। ছেলেদের পাঞ্জাবি ৮০০-১,৫০০ টাকা, ফতুয়া ৮০০-১,৫০০ টাকা, শার্ট ৬০০-১০০০ টাকা, টি-শার্ট ৩৫০-৬০০ টাকা। মেয়েশিশুর ফ্রক ৫০০-৯৫০ টাকা, কামিজ ৫০০-৯৫০ এবং ছেলেশিশুর পাঞ্জাবি ৬০০-৮৫০ টাকা, শার্ট ৪৫০-৬৫০ টাকা, টি-শার্ট ৩০০-৫০০ ও মগ ২০০-৩৫০ টাকা।া

পোশাক : বিশ্বরঙ, রঙ বাংলাদেশ ও কে-কদ্ধ্যাফট

স্টাইল ও অনুষঙ্গ

১. এই দিনে মেয়েরা লাল-সবুজ শাড়ি পরেন। অনেকে শুধু একরঙা লাল শাড়ির সঙ্গে সবুজ ব্লাউজ পরেন। আবার একরঙা সবুজ শাড়ির সঙ্গে লাল ব্লাউজও বেশ মানানসই। তবে শীত ও ফ্যাশন দুটোকে মাথায় রেখে ব্লাউজ পরতে পারেন থ্রি কোয়ার্টার কিংবা লম্বা হাতার অথবা শাড়ির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিতে পারেন লাল-সবুজ শালে।

২. অনেক মেয়ে শাড়িতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তাই তারা বেছে নিতে পারেন সালোয়ার-কামিজ কিংবা কুর্তি। কুর্তির সঙ্গে লাল-সবুজ উত্তরীয় কিংবা শাল রাখলে ভালো লাগবে।

৩. লাল-সবুজ পোশাকের সঙ্গে হালকা বেইজ মেকআপ করুন। সঙ্গে লাল রঙের লিপস্টিক বা টিপ পরতে পারেন। টিপ পরবেন অবশ্যই মুখের গড়ন বুঝে। শাড়ির সঙ্গে কপালে বড় লাল টিপ ভালো লাগবে। হালকা সাজের সঙ্গে বেশি গহনা বেমানান লাগবে; তাই পোশাককে গুরুত্ব দিয়ে গহনা নির্বাচন করুন। অ্যান্টিক কিংবা পুঁতির গহনা, হাতভর্তি কাচের চুড়ির মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলুন বিজয়ের সাজ।

৪. শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে মানানসই এমন জুতা পরুন। আপনি চাইলে সেমি হাইহিল পরতে পারেন। অনেকে শীতকালকে মাথায় রেখে শাড়ির সঙ্গে কনভার্স পরেন। এতে একটি ফিউশনধর্মী লুক আসে।

৫. ছেলেরা পাঞ্জাবির সঙ্গে সাদা পায়জামা পরতে পারেন। তবে অনেকে জিন্স পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এর সঙ্গে পায়ে পরুন স্লিপার কিংবা কনভার্স। যেহেতু শীত পরেছে, তাই সঙ্গে নেওয়ার জন্য লাল-সবুজ শাল ব্যবহার করতে পারেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com