দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেট বিভাগের দুই জেলার করোনাভাইরাসের জিনের বিন্যাস উন্মোচন (জিনোম সিকোয়েন্সিং) করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) একদল গবেষক।
মঙ্গলবার শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এই বিষয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে নভেল করোনাভাইরাস যখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, দেশ ও জাতির স্বার্থে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে লাইফ সায়েন্সেস অনুষদের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে কোভিড-১৯ রোগ নির্ণয় ল্যাব স্থাপন করা হয় এবং একদল গবেষক স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কোভিড-১৯ রোগ নির্ণয় শুরু করে। কোভিড-১৯ রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি দলটি ভাইরাস নিয়ে শাবি গবেষণা কেন্দ্রের অর্থায়নে গবেষণা শুরু করে।
গবেষণার অংশ হিসেবে ভাইরাসের মিউটেশনের গতি প্রকৃতি, বিস্তার, উৎপত্তিস্থল ও বৈচিত্র্য জানতে সিলেট বিভাগের চার জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে জিন বিন্যাস (জিনোম সিকুয়েন্স) উন্মোচন করা হয়। উন্মোচিত জিন বিন্যাস থেকে ১০টি (সুনামগঞ্জ-৫ ও হবিগঞ্জ-৫) নমুনার জিন বিন্যাস গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটাবেইজে (জিআইএসএআইডি) জমা দেন যা ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয় (জিএস আইডি- EPI_ISL_753697, EPI_ISL_753700, EPI_ISL_753701, EPI_ISL_754059, EPI_ISL_754176, EPI_ISL_754109, EPI_ISL_754173, EPI_ISL_754177, EPI_ISL_754178, EPI_ISL_754179)। এছাড়া এটি বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের ধরন জানতে ও ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির অধিকতর গবেষণায় কাজে আসবে।
জিন বিন্যাস বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সিলেট বিভাগে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সাথে ইতালি, ইউকে, ইউএসএ, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, রাশিয়া, ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পূর্বে পাওয়া করোনাভাইরাসের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। তাছাড়া উন্মোচিত জিন বিন্যাস বিশ্লেষণ করে ভাইরাসের জিনোম কাঠামোতে মোট ৭৯টি মিউটেশন পাওয়া যায়। প্রোটিন লেভেল এ ৪৭টি মিউটেশন পাওয়া যায়, তার মধ্যে ৩টি মিউটেশন সবগুলো নমুনাতেই পাওয়া যায়। উক্তো নমুনার মধ্যে কোনো ইউকে মিউটেন্ট (P681H) পাওয়া যায়নি তবে একই পজিশনে ভিন্ন মিউটেশন (P681R) পাওয়া যায়।
তাছাড়া দুটি ভাইরাসের জিনোমে নতুন একটি মিউটেশন (Genome: 27862: Del: ATCAT) পাওয়া যায় যা পূর্বে কোথাও দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সংক্রমণ নির্ণয়ের জন্য গত বছর ১৮ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে শিক্ষা ভবন ‘ই’এর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ২২৫ নম্বর কক্ষে এ ল্যাব চালু করা হয়। শাবিপ্রবির করোনা শনাক্তকরণ ল্যাবের তত্ত্বাবধান করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ। বর্তমানে এই বিভাগের ২৫ জনের একটি টিম প্রতিদিন কাজ করছে এবং এই টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন টিম লিডার জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক প্রধান।
সূত্র : ইউএনবি