সমাজের দরিদ্র প্রান্তিক মানুষদের জন্য বর্তমান সরকার বিভিন্ন রকম কর্মসূচি চালু করেছে। গুচ্ছগ্রাম, একটি বাড়ি একটি খামার, বিধবা ভাতা, দরিদ্র ভাতা, ৬৭ হাজার বাড়ি প্রদান ইত্যাদিসহ এমন পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বৃত্তি-উপবৃত্তি, স্কুলে মিড-ডে মিল ইত্যাদি কার্যক্রমও চালাচ্ছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই সরকার দরিদ্র মানুষের জন্য চিকিৎসা সহায়তার কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ক্যানসার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্তদের এককালীন ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া শুরু করে সরকার। পরে ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে স্ট্রোকে প্যারালাইসিস, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদেরও এ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়। এ ছয়টি রোগে আক্রান্তরা যেন চিকিৎসার জন্য দ্রুত টাকা পান সেজন্য ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে আবেদনকারীদের নিজ জেলা থেকেই টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় এ সহায়তার টাকা বিতরণ করছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, অন্যান্য অনেক কার্যক্রমের মতো এ ক্ষেত্রেও সরকারের কোনো কোনো পর্যায়ে ধীরে চলার পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীর পরিবার সন্তান বা সদস্যের চিকিৎসায় বিস্তর টাকা খরচের পর সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। তখন সহায়তার বরাদ্দ দ্রুত পাওয়া জরুরি। কিন্তু ঘুষ ছাড়া অর্থ আদায় না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার অসহায় পরিবারের হাত থেকে এ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর ঘিরে প্রতারকচক্রও সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকার এ ৬টি রোগে আক্রান্তদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নীতিমালা ২০১৯ (সংশোধিত) অনুযায়ী উপজেলা পর্যায়েও দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের করণীয় নির্ধারণ করে দিয়েছে। এতে ৭ দিনের মধ্যে আবেদনপত্র বিবেচনা সম্পন্ন করে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে চেক প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু কার্যত কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাপ্তরিক এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে এক বছরের বেশি সময় লাগতেও দেখা গেছে।
আমরা জানি বর্তমান সরকার দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণের কল্যাণে অনেক কর্মসূচি চালু করেছে। এগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন নির্ভর করছে সর্বস্তরের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের আন্তরিক দক্ষ ভূমিকার ওপর। কিন্তু এখানে দুর্নীতির সংস্কৃতি বেশ পুরনো এবং এর শিকড় বেশ গভীরে প্রোথিত। আবার আর্থিক লেনদেনের কাজ ঘিরে সরকারি দপ্তরগুলোয় নানা রকম প্রতারকচক্রও সক্রিয় থাকে। এর ফলে অনেক কাজেই জনগণ অভীষ্ট সুফল পায় না, সরকারও তাদের গণমুখী উদ্যোগের যথাযথ স্বীকৃতি পায় না। এটি কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। আমরা আশা করব সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে তার দ্রুত দুর্নীতিমুক্ত বাস্তবায়নও নিশ্চিত করবে।