বিগত বছরটা নিঃসন্দেহে একটা ঘটনাবহুল সময়। প্রকৃতি, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র-সবখানেই এক ধরনের অস্থিরতা ও আতঙ্ক রাজত্ব চালিয়েছে। প্রচলিত জীবনব্যবস্থার ওপর করোনা কতটা প্রভাব ফেলবে-এমন জল্পনা নানা আশঙ্কারও জন্ম দিয়েছিল। অনেকে আশঙ্কা করেছিল, দেশ এক অভূতপূর্ব মানবিক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে। দেখা গেল পরিস্থিতি ভালোভাবেই সামাল দেওয়া গেছে। ভ্যাকসিন নিয়েও যে অনিশ্চয়তা ও সংশয় দেখা দিয়েছিল, তাও আজ অনেকটাই কেটে গেছে। সাফল্যের কৃতিত্ব সরকার দাবি করতেই পারে। এ মহাদুর্যোগ সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারলেও বিগত কয়েক মাসে সংঘটিত বেশ কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনাপরম্পরা সরকারকে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাম্প্রতিক অস্থিরতা এর জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সবাইকে সতর্ক থাকতে। সুযোগসন্ধানীরা মতলব হাসিলের জন্য ভালো সময়কেই বেছে নেয়। ইতিহাস এমন আশঙ্কারই আভাস দেয়।
দেশে অনেক ভালো কাজ হয়েছে-মত-পথ নির্বিশেষে তা স্বীকার করার সংস্কৃতির আজ ভীষণ অভাব। এখানেও মনস্তাত্ত্বিক সংকীর্ণতা কাজ করে। প্রমাণ হয় আমরা সত্যের মুখে দাঁড়াতে চাই না। আয়নার সামনে নিজেকে হয়তো অসহায়ই মনে হয়। সরকারপক্ষের একাংশের ক্ষেত্রেও একই রকম বিজ্ঞান কাজ করে। যে কোনোভাবে প্রধান প্রতিপক্ষকে দায়ী করা বা কোণঠাসা করা। এটাই যেন দলের কৌশল, দলের অবস্থান। অসুস্থ সময়ের প্রশ্রয়ে আদর্শ হয়তো দূরেই সরে যাচ্ছে। অথচ নীতিগতভাবে দলের অনেক ভালো কাজ, বঙ্গবন্ধুর উচ্চকিত আদর্শ, এমনকি দলনেতার আবেগের সঙ্গেও অনেক নেতাকর্মীকে একাত্ম মনে হয় না। ততটুকুই সমর্থন পাওয়া যায়, যতটুকু তাদের তাৎক্ষণিক স্বার্থে প্রয়োজন। এ স্ববিরোধিতা ও সুবিধাবাদিতা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে ক্রমেই অচেনা করে তুলছে।
নির্মোহ বিশ্লেষণে কোনো নিন্দুকও নানা মানদণ্ডে সরকারের সাফল্যকে অস্বীকার করবে না। কৃষি, বিদ্যুৎ, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, যোগাযোগ অবকাঠামো, সর্বজনীন শিক্ষা, মা-শিশুর স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য বা বিদেশনীতি-সবখানেই অগ্রগতির চিহ্ন স্পষ্ট। মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। মাথাপিছু আয় যেমন বেড়েছে, গড় আয়ুর সূচকও ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু যে বিষয়গুলো সরকারের সাফল্যকে ম্লান করছে তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে দুর্নীতির ব্যাপ্তি ও বিস্তার। দুর্নীতির সুবিধাভোগী সব রাজনৈতিক দল, রাষ্ট্রের প্রায় সব প্রতিষ্ঠান। চাকরি থেকে ব্যবসায়-সবখানে। এর ফলে জনস্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বিরোধী দল সুবিধাভোগ করেও সরকারের এ ব্যর্থতা থেকে নেতিবাচক সুবিধা আদায় করে নিতে পারছে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যথেষ্ট সমন্বয় দেখা যাচ্ছে না। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে অনেক মামলা হয়েছে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে। অথচ যেসব ডিজিটাল অপরাধী গুজব ছড়িয়ে সমাজে ঘৃণা ছড়ানো থেকে শুরু করে রাষ্ট্রবিরোধী কাজের সঙ্গে লিপ্ত রয়েছে-সেখানে সরকারকে নমনীয় মনে হচ্ছে। ফলে ওই অশুভ শক্তির প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা চোখে পড়ার মতো। অতি সক্রিয় স্বার্থান্বেষী চক্রের সংগঠিত অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কার্যকর বয়ান তৈরি করা বা প্রচার করার যথেষ্ট সামর্থ্য নেই, হয়তো একাংশের সে ইচ্ছাও নেই। সরকারি দলের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্রের অনেক স্পর্শকাতর জায়গায়ও রাষ্ট্র ও সরকারের জন্য ক্ষতিকর লোকজন ঢুকে পড়ছে। এ অসতর্কতার ফলে একদিকে যেমন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে এর জন্য চড়া মাশুলও গুনতে হয়েছে-অতীতের অভিজ্ঞতা অন্তত এমনই বার্তা দেয়। দলীয় শৃঙ্খলাও বেশ নাজুক মনে হচ্ছে, যা কাক্সিক্ষত নয়। প্রকাশ্যে দলের অনেক সদস্য বিরূপ মন্তব্য করছে। গণতন্ত্রের স্বার্থে নয়, আদর্শের জন্যও নয়, স্রেফ ব্যক্তিগত উচ্চাশা বা স্বার্থে। দলের অনেক প্রভাবশালী সদস্য জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা না করে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের পরিধি বিস্তারে বিভোর। আর এসব অনুচিত কর্মকাণ্ডের ফলে দলের ওপর মানুষের ভরসা কমছে, ক্ষোভ বাড়ছে।
ক্ষমতাসীন দলের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ, অতীত গৌরবময়। তবে একটানা প্রায় একযুগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার পর মনে হয় সংগঠন হিসাবে দলটি এর ঔজ্জ্বল্যও খানিকটা হারিয়েছে। অতীতে নানা প্রতিকূলতা জয় করার অভিজ্ঞতা আছে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ক্ষমতাসীন এ দলের। সুশাসন হলো এমন একটা শাসনব্যবস্থা যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ ও কাজের স্বচ্ছতা থাকে। জনগণ আইনের শাসন মেনে চলে। দেশের প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ হয়। যে কোনো সংকট মোকাবিলায় রাজনৈতিক সামর্থ্যরে প্রমাণ দেয়। অপরাধ, অপরাধ দমন, ছাত্র অসন্তোষ, ধর্মীয় অনুভূতির ইস্যুকে ব্যবহার করে কিংবা উসকানিমূলক প্রচারণা চালানোর মতো বেশকিছু ঘটনা একের পর এক সংঘটিত হয়েছে; যা তাৎক্ষণিক কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনা বলে মনে হয় না। বরং পরিকল্পিত একটি ছকে এসব ঘটনা ঘটানো হয়ে থাকতে পারে। ঘটনার আড়ালে সুদূরপ্রসারী কোনো লক্ষ্য আছে কিনা বলা যায় না। অথচ দলকে কার্যত নির্লিপ্ত, নিষ্ক্রিয় বলেই মনে হয়েছে; আওয়ামী লীগের মতো মাঠ থেকে উঠে আসা দলের জন্য তা ভীষণই বেমানান। দলীয় রাজনীতির দায়িত্বশীল পদে যারা আছেন, তাদের অনেকেই নিষ্ক্রিয় বা পক্ষান্তরে অনেক ক্ষেত্রেই নিজেরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন বলে জনমনে ধারণা তৈরি হচ্ছে। আমলানির্ভরতা এ বিরাজনীতিকরণকে ত্বরান্বিত করেছে বলে মনে হয়। রাজনৈতিক বা গণতান্ত্রিক অনুশীলন সরকারি দলে ভীষণ কমে এসেছে। সংগঠনের অন্তর্গত শক্তিকে তাই ক্ষয়িষ্ণু মনে হচ্ছে। একজন কর্মীর আদর্শের যে প্রেরণা নিয়ে দেশের সংকট মুহূর্তে কথা বলা প্রয়োজন, তা দেখা যাচ্ছে না। বরং সব সংকটেই নেতাকর্মীরা নিজের দায়িত্ব পালন না করে দলনেত্রীর ওপর দায় চাপাচ্ছে কপট আনুগত্যের খোলসে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলের এমন অসংগঠিত ও অবিন্যস্ত অবস্থা আগে খুব কমই দেখা গেছে।
সুষ্ঠু নির্বাচন করাতে পারলেই গণতন্ত্র সার্থক হয় না। তবে গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিরপেক্ষ নির্বাচনের জোরালো ভূমিকা থাকে। নির্বাচনব্যবস্থাকে নিরপেক্ষ রাখা মানে শুধু ভোটকেন্দ্রকে নির্বিঘ্ন করা নয়, শ্রেণি-পেশা, ধর্ম-লিঙ্গ নির্বিশেষে সবাই যাতে নির্বাচনে নির্ভয়ে অংশ নিতে পারে তার অনুকূল পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। এখানে অর্থ, পেশি ও ক্ষমতা যেন প্রভাব না ফেলে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও গুজব ছড়িয়ে যেন সংখ্যালঘু বা দুর্বলতর জনগোষ্ঠীকে ভীতি ও অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেওয়া না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। এ দেশের রাজনীতির অত্যন্ত নেতিবাচক প্রবণতা হলো ভারতবিদ্বেষ, যা একপর্যায়ে হিন্দুবিদ্বেষে পরিণত হয়। অতীতে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন, সম্পদ দখল, মন্দির ভাঙা, এমনকি হত্যা-ধর্ষণের মতো ঘটনার কোনো বিচার না হওয়ায় দায়মুক্তির সংস্কৃতি মান্যতা পেয়েছে, ভয়ের সংস্কৃতি দৃঢ়মূল হয়েছে। একটি পরিসংখ্যান বলছে-বিগত দুই দশকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার দশ থেকে পনের শতাংশ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ইতোমধ্যে নানা কারণে দেশত্যাগ করেছে। অর্পিত সম্পত্তি আইন বা নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার আশঙ্কা এ দেশত্যাগের অন্যতম কারণ বলে মনে হয়। এ পরিস্থিতি দেশের ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলতে পারে-এটা সব দলের বোঝা উচিত। বামপন্থী দলগুলো সরকারবিরোধী নানা ইস্যুতে সোচ্চার হলেও সংখ্যালঘুদের স্বার্থে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত হতাশাজনক, যা বিশ্ব পরিমণ্ডলে সচরাচর দেখা যায় না।
নির্বাচনে প্রার্থিতা বা অংশগ্রহণের বিষয়টিও আজ অনেক কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়ছে। সব বড় রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেই কিছু অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’ নামে আরেকটি শব্দবন্ধ বর্তমান সময়ে পরিচিতি পাচ্ছে; যা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত একটি জাতিরাষ্ট্রের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। দেখা গেছে, অনেক দলে, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলে বিদ্রোহী প্রার্থী নমিনেশন না পেয়ে স্বতন্ত্র হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, কোথাও জয়ীও হচ্ছেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন নজির নেই বললেই চলে। দলের শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন না তুলেও বলা যায়, ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণমূলক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রতীক বরাদ্দের বিষয়টি আবার ভেবে দেখা উচিত। সেক্ষেত্রে মনোনয়ন বাণিজ্য বা দলীয় শৃঙ্খলা-এসব প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উৎসবে পরিণত হওয়া তৃণমূল পর্যায়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর পরিবেশও ভালো থাকবে-তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। হয়তো পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মডেলটি আমাদের নীতিনির্ধারকদের নজরে আছে। খেয়াল করতে হবে, সেখানে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী প্রার্থীরাই চেয়ারম্যান, মেয়র নির্বাচন করেন। নমিনেশন বাণিজ্যের সুযোগ এক্ষেত্রে অনেক কম। তবুও সেখানে দেখা গেছে আরেক অসুখ। জোর করে বিরোধীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরে রেখে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার নতুন মডেল। নির্বাচনকে ত্রুটিমুক্ত করা এখন হয়তো আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নির্বাচনব্যবস্থাকে বিশ্বাসযোগ্য করতেই হবে। এটি গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান অঙ্গ। তবে এর সঙ্গে রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও কীভাবে শক্তিশালী করা যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে। মানুষ যদি মনে করে সে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ছে, তবে সমাজ বিপজ্জনকভাবে সমাজবিরোধীদের দখলে চলে যেতে পারে। রাজনীতির মাঠে আরেকটি অশনিসংকেত হলো-বিরোধী দলের অস্তিত্ব সংকট। নেতৃত্ব, আদর্শ বা লক্ষ্যের অস্থিরতা প্রধান বিরোধী দলগুলোকে ক্রমাগত দুর্বল করছে। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশের জন্য অবশ্যই শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন। সেটা সরকারি দলকেও বুঝতে হবে। বিরোধীদেরও ভাবতে হবে তাদের উদ্দেশ্য শুধু যে কোনো পন্থায় ক্ষমতায় যাওয়া নয়। দরকার জনস্বার্থে একটা স্থায়ী রাজনৈতিক ফয়সালা। আর এ মীমাংসার জন্য খোলা মনে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। নেতিবাচক, সুযোগসন্ধানী বা সুবিধাবাদী রাজনীতি শেষ বিচারে ব্যক্তি, দল বা দেশ-কারও জন্যই কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
দেশকে স্থিতিশীল রাখা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসোপযোগী করা দল-মত নির্বিশেষে সবার দায়িত্ব। দেশ সামনে এগিয়েছে এবং অগ্রগতির সে ধারা এখনো অব্যাহত। কৃতিত্ব যে দলেরই হোক না কেন, তাকে সমর্থন করা, স্বীকৃতি দেওয়া শুধু রাজনৈতিক সৌজন্য নয়, দেশ ও জাতির স্বার্থে তা খুবই জরুরি। অন্যদিকে টেকসই উন্নতি নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতাগুলোকে চিহ্নিত করাও সব রাজনৈতিক দলের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। ঐকমত্যের ভিত্তিতে সে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা না করে ফাঁকফোকরের জন্য অপেক্ষা করা দায়িত্বশীল রাজনীতির দৃষ্টান্ত নয়। কেননা শুধু বিশেষ কোনো দলকে ক্ষমতায় বসানো জনগণের দায় হতে পারে না। এ দেশের জনগণ বিরোধী আমলের শাসন দেখেছে। সুতরাং পরিবর্তনের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ও সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে।
রাজনৈতিক নেতাকর্মী প্রভুসুলভ মনোভাব লালন করবে না; বঙ্গবন্ধু তা করেননি। ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব যেন আওয়ামী লীগের মতো দলের নেতাকর্মীকে এমন আদর্শিক দেউলিয়াত্বে পৌঁছে না দেয়-তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্যই চাই প্রশিক্ষণ, গবেষণা, শিক্ষা। নতুন কর্মীকে শেখাতে হবে রাজনীতি কী, জনগণের সঙ্গে তার সম্পর্কই বা কী। দীর্ঘদিন সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের পরিচয়ে বেড়ে ওঠা কর্তৃত্ববাদী ও ঔপনিবেশিক মনস্তত্ত্ব নেতৃত্বকে আক্রান্ত করলে কর্মীরাও ভুল বার্তা পায়। ত্যাগের আদর্শকে মহিমান্বিত না করে জৌলুস-ঐশ্বর্যকে অতিমূল্যায়ন করলে সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। দুর্নীতির বিস্তার রোধেও এ বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। দলের মধ্যে নিবেদিত, রাজনৈতিক বোধসম্পন্ন কর্মীদের মেধা ও নিষ্ঠাকে কাজে লাগাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিভুক্ত দক্ষ ও সৎ নেতৃত্বকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজনীতিতে সক্রিয় করতে হবে। আশার কথা, সাম্প্রতিককালে রাজনীতির অঙ্গনে অনেক তরুণ ও মেধাবী মুখ নজর কাড়ছে। তাদের যথেষ্ট সজাগ ও প্রতিশ্রুতিশীল বলে মনে হয়। তারা জাতীয় পার্টি বা বিএনপি যে দলেরই হোক, তাদের মেধা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে ১৪ দলে অনেক যোগ্য নেতা আছেন, যাদের এখনো দেশের জন্য অনেক কাজ করার সামর্থ্য, সুযোগ ও অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেশের স্বার্থে সমকালীন রাজনীতির প্রয়োজনে তাদের কাজে লাগাতে পারলে সরকার ও জনগণের লাভই হবে।
অমিত রায় চৌধুরী : সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ