কয়েক দিন ধরেই পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে সোচ্চার সরকার। ইতোমধ্যে বিভ্ন্নি দেশ থেকে পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। কিন্তু এত পেঁয়াজ আসার পরেও বাজারে কোন প্রভাব পড়েনি বলেই মনে হয়। এখনো ২০০ টাকার আশেপাশেই পেঁয়াজের কেজি। ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে কবে পেয়াজ পাবেন এমন সব প্রশ্ন ভোক্তাদের।
সরকারি বিপণন সংস্থার ‘ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ’ এর হিসেব মতে গেল বছরের একই সময়ে পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। তাদের হিসেবে, এক বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০০ শতাংশেরও বেশি।
মঙ্গলবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২৩০ টাকা। বার্মিজ ও ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।
মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের আড়তে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২২০ টাকা করে পাঁচ কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়। বার্মিজ পেঁয়াজ কেজি ১৮০ টাকা করে পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। পাকিস্তানি পেয়াজ ১৮৪ টাকা করে পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ৯২০ টাকায়। ইন্ডিয়ান কেজি ১৯০ টাকা করে পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকা আর চাইনিজ কেজি প্রতি ১৫০ টাকা করে পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়।
অধিক দামের আশায় কৃষকরা পাতাসহ নতুন পেয়াজ বাজারজাত করতে শুরু করেছেন। সেই পেঁয়াজ পাইকারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ টাকা। আর খুচরা বাজারে একই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। পাতাসহ সেই নতুন পেঁয়াজ সংরক্ষণ উপযোগী নয় বলে পেঁয়াজের বাজারে তা দাম কমানোর ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী কুমিল্লা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী বেলাল হোসেন বলেন, বাজারে যে পরিমাণ পেঁয়াজের চাহিদা সে পরিমাণ আমদানি নেই। বেলাল বলেন, আমরা পেঁয়াজ পাচ্ছিনা। পেঁয়াজ আসছে আসছে আসবে বললেও বাজারে চাহিদা মতো পেঁয়াজ নেই। তাতে আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে তাতে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি।
কারওয়ান বাজারের অপর পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন বলেন, বাজারে দেশি নতুন পেঁয়াজ আসতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলে পেঁয়াজের বাজারে দাম কমার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। তবে অন্যান্য বছর দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হতো চলতি বছর সে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে না।
ফরিদ বলেন, বৃষ্টির কারণে পেয়াজ ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। পেঁয়াজের ফলনও এবার ভালো হয়নি।
রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা শাহাবুদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তিনি আসছেন কারওয়ান বাজার থেকে কিছুটা কম দামে বাজার করতে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও ৫ কেজির কমে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না পাইকাররা। ইচ্ছা থাকলেও শেষে ২৩০ টাকায় এক কেজি দেশি পেঁয়াজ নিয়েছেন তিনি।
তার অভিযোগ, পেয়াজের মতো লবণ নিয়েও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করার চেষ্টা করেছিল। সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে সেটি হয়নি। পেয়াজের ক্ষেত্রেও সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে পেয়াজের দাম ৫০ টাকার কমে পাওয়া যেত।
গত রোববার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ‘বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন’ আয়োজিত এক বৈঠকে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন সদস্য আবু রায়হান আল বিরুনী বলেন, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন মনে করে পেঁয়াজের আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে, কোনো ঘাটতি নেই।
একই বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বাজারে কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি নেই আপনারা পেঁয়াজের কথা বলেন বাজারে আছে তো সব।
অন্যদিকে গত কয়েকদিনে উড়োজাহাজে ৪০০ টনের মতো পেঁয়াজ আসার কথা জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি একই বৈঠকে বলেন, সত্যি কথা বলতে কি আমাদের যা লাগবে সব আছে। এটা বললে ঠিক কথা বলা হবে না তাহলে এই হিসেব কেন দিলাম যে আমাদের আনতে হচ্ছে। একই বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী নতুন করে আরেকটি আশ্বাস দিয়েছিলেন আগামী ১০ দিনের মধ্যে আমদানি করা বড় চালান এসে যাবে ও দেশি পেয়াজ উঠবে।
রোববারের বৈঠকে সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে জাহাজ চলে আসবে।
আবার, মেঘনা গ্রুপের একটি চালান ১ ডিসেম্বর আসবে বলে বৈঠকে জানা গেছে।
পেঁয়াজ আমদানিকারক রামেন্দ্র মজুমদার বলেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। যে পরিমাণ চাহিদা বাজারে সে পরিমাণ সরবরাহ নেই। অন্যান্য বছর একই সময়ে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলেও চলতি বছর এখনো নতুন পেঁয়াজ বাজারে আনতে পারেনি কৃষকরা। পাতাসহ কিছু আগাম পেঁয়াজ বাজারে আসলেও তা সংরক্ষণ অনুপোযোগী হওয়াতে তা দামে প্রভাব ফেলছে না। নতুন পেঁয়াজ ডিসেম্বরের শুরুতে বা মাঝামাঝি সময়ে বাজারে আসা শুরু করলে পেঁয়াজের দাম অনেকটা কমে যাবে।